
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। অন্যান্য বড় দেশগুলোর অভিবাসন নীতিতে অস্থিরতার মাঝে শিক্ষার্থীরা এখন যুক্তরাজ্যকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে করছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
Keystone Education Group–এর ২০২৫ সালের শিক্ষার্থী নিয়োগসংক্রান্ত প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যকে শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অপ্রচলিত গন্তব্যের প্রতি আগ্রহ বাড়লেও যুক্তরাজ্য এখনো প্রথম পছন্দ। Keystone-এর সিইও ফ্রেডরিক হোগেমার্ক জানান, উচ্চশিক্ষা খাতে আর্থিক চাপ এবং রূপান্তরের এই সময়েও যুক্তরাজ্য এগিয়ে।
এদিকে ApplyBoard প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু হয়েছে ৪৮,০০০-এর বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। আবেদন মঞ্জুরের হার ৮৮ শতাংশ থাকায় বোঝা যাচ্ছে, এই বৃদ্ধির কারণ শুধু আবেদন নয়—আগ্রহও বেড়েছে।
ভারত থেকে ১৮,০০০-এরও বেশি আবেদন জমা পড়ে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। এরপরই আছে পাকিস্তান ও নেপাল। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি—১৩৫ শতাংশ, নেপালের হার ১২২ শতাংশ।
তবে চীনের আবেদন কমেছে ৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পূর্ব এশিয়ার অভ্যন্তরীণ গন্তব্যগুলোর প্রতি আগ্রহ বাড়ায় এই হ্রাস দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে কিছু সময় আগেও শিক্ষার্থীদের পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা এবং তাদের পরিবারের ভিসা নীতিতে কড়াকড়ির কারণে অস্থিরতা ছিল। তবুও পরপর দুই প্রান্তিকে আবেদন বাড়ায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ApplyBoard সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাজ্যের ২০২৫ সালের ইমিগ্রেশন হোয়াইট পেপার অনুযায়ী গ্র্যাজুয়েট রুট কমিয়ে ২৪ থেকে ১৮ মাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে প্রাথমিক জরিপ বলছে, এখনও শিক্ষার্থীদের আগ্রহে বড়সড় ধাক্কা লাগেনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নীতিগত অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের দিকে টানছে।
Keystone-এর প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কথাও উঠে এসেছে। এই প্রথমবার দেশটি শীর্ষ দশ গন্তব্যে প্রবেশ করেছে, যা এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে।
মাস্টার্স পর্যায়ে ইউরোপীয় গন্তব্যে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ৭ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি এখন তৃতীয় স্থানে। ৪২ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে করা জরিপ বলছে, ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে চায়। এর মানে—স্কলারশিপ, পরিবার বা সরকারি সহায়তা—এই প্রচলিত উৎসগুলো আর যথেষ্ট নয়।
Keystone প্রধান হোগেমার্কের মতে, “শিক্ষার্থীরা এখন বাস্তববাদী ও ফলাফলমুখী। তারা খরচ, চাকরির সুযোগ ও ব্যবহারিক দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, মর্যাদা বা র্যাংকিং নয়।” তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এখন শুধু খ্যাতি দিয়ে শিক্ষার্থী টানার সময় শেষ।
আঁখি