ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্তে রঙিন ক্যাম্পাস

সিফাত রব্বানী

প্রকাশিত: ০১:২৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বসন্তে রঙিন ক্যাম্পাস

ইট-পাথরের এই ব্যস্ত শহরে শিমুল, পলাশের দেখা মিলবে না

ইট-পাথরের এই ব্যস্ত শহরে শিমুল, পলাশের দেখা মিলবে না। শুনতে পাবেন না কোকিলের মিষ্টিগান অথচ অনবরত কানে বেজে উঠবে রিকশার বেল কিংবা যানবাহনের হর্ন। বসন্তের বাতাসে যে এক রাশ নিঃশ্বাস নেওয়ারও তেমন সুযোগ নেই। তারপরও প্রকৃতিতে বসন্তের আবির্ভাব মানবকুলের মধ্যে নতুন আশার আলো সঞ্চার করে। নবযৌবন লাভ করে যেন প্রকৃতিও। শীতের ঘনঘটা কাটিয়ে ঋতুরাজ বসন্তের সুবাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে শিশু, তরুণসহ সকল বয়সের মানুষের মাঝে। কবিগুরুর ভাষায়, ‘আজি বসন্ত জাগ্রতদ্বারে।
গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার করায় এই পরিবর্তন। উদ্দীপনা ও উৎযাপন এখন লোকজ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে স্বীকৃত পাওয়া বাকি। অন্যান্য জায়গার মতো রাজধানীর পুরান ঢাকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বসন্ত নিয়ে এসেছে নতুন সুর ও নতুন রস। ক্যাম্পাস ছোট হওয়াতে একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়েছে, বসন্তের আনন্দ ভাগাভাগি করছে। চিরচেনা এই ক্যাম্পাসে তরুণরা স্বভাবতই বেশ উদ্যমী।

বিভিন্ন বিভাগে বসন্তবরণ উৎসব নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অন্তত সপ্তাহ দুই আগে থেকেই। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আলামনি অ্যাসোসিয়েশন সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে প্রতিবছরের ন্যায় খুব জাঁকজমকভাবেই পালিত হলো এই বসন্তবরণ। ক্যাম্পাসের মুক্ত মঞ্চ, বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে, শহীদ মিনারের কোল ঘেঁষে চলেছে উৎসবের জয়গান। কতরূপ! কত রং বসন্তের, তা দেখা গেল ক্যাম্পাসেই।

বাসন্তী হলুদ সবুজে, বাহারি রঙের শাড়ির সৌন্দর্য ও ফুলের ছড়াছড়ি সমগ্র ক্যাম্পাসেই। এই তো পরিচিত কত নবীন একে অপরের সঙ্গে পরিচিতি হওয়ার অন্যতম সুযোগটি পেয়ে গেল। কত নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠল আবার অনেকের সম্পর্কে বিষাদ চলে আসল এই একই দিনে। অন্যের ভালোবাসায় নিজের হারানো ভালোবাসাকেও খুঁজছেন কত তরুণ, কত শূন্যতা তাদের মধ্যে। আর যাই হোক প্রিয়জনের সঙ্গে বসন্তের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা বিনিময়, একসঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যেই এই যে আনন্দ তা আর কোথায় পাওয়া যায়?

উপহার বিনিময়ের মধ্যে মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাতেই তো নিবিড় ও গাঢ় ভালোবাসার সঞ্চার ঘটে। নবীনরা বেশ উল্লোসিত, একটি বড় আঙিনা কিংবা দ্বিতীয় পরিবারের সঙ্গে প্রথমবার বসন্ত পালন করা ফাগুনের বাতাস গায়ে লাগানো, নিতান্তই রোমাঞ্চকর। কিন্তু যারা শিগগিরই ক্যাম্পাস থেকে পাস করে বের হয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য এই বসন্ত বেশ স্মৃতিময় উঠে উঠবে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে দেখা গেল প্রাক্তন জবিয়ানদের যারা অনেকেই সপরিবারে এসেছেন, হলুদ, কমলা, লালে সেজেছেন নিজের মতো করে।

কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা বেশ মুখোরিত বসন্তের আমেজে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোতরের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন ‘বসন্ত প্রাণের উচ্ছ্বাস, আমার প্রিয় ঋতু এই বসন্ত। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে আমার খুব ভালো সময় কাটে এই বসন্তেই কেননা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করাটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ আর তাই বসন্তের পরন্ত বিকেল ও পুরো বসন্তকালই আমার ভীষণ পছন্দের।’

ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রাহুল ইসলাম বললেন ‘বসন্ত নবজীবনে নতুনত্বের বিকাশ ঘটায়, প্রকৃতিতে যেমন নতুন ফুট ফোটে, গাছের নতুন পাতা হয়, ফুলে ফলে ভরে যায় চারদিক ঠিক তেমনি আমাদের জীবনের অনেক গ্লানি দূর করে বসন্তের সতেজতা।’ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল ক্যাম্পাস জুড়ে। আবৃত্তি, গান, আর নানা রকম সাজসজ্জায় আর স্বয়ংসম্পূর্ণতায় অন্য রকম হয়ে উঠেছিল প্রিয় জবি প্রাঙ্গন। বসন্তের এই আনন্দ বিরাজ করুক বছরের বাকি সময় জুড়ে।

×