ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ ॥ নিভৃত গ্রামে ব্যতিক্রমী পাঠশালা

মো. উজ্জ্বল মিয়া

প্রকাশিত: ০১:২০, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ ॥ নিভৃত গ্রামে ব্যতিক্রমী পাঠশালা

সারাদেশে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

তখন সারা বিশ্ব করোনা মহামারি কোভিড-১৯ এ জড়জড়িত। সারাদেশে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থী অভিভাবক সবাই শঙ্কিত। আদৌ কি ছেলে-মেয়েরা স্কুলে ফিরে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস বন্ধ। যার যার গ্রামে অবস্থান করছে তারা। কারও কোনো পড়াশোনা নেই। গ্রাম এলাকায় তখনো কোভিডের ভয়াবহতা এতটা ছড়িয়ে পড়েনি। কোভিড ছড়িয়ে না পড়লেও অজানা সংক্রমণের ভয়ে তটস্থ শহর গ্রামের সবাই। দেশের এই সংকট মুহূর্তে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় উদং বড়বাড়িতে শুরু হয় অন্যরকম এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাচ্চাদের শিক্ষা হতে ঝরে পড়া রোধ এবং মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়। শিশু-কিশোরদের মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইস আসক্তি কমিয়ে শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে। অসাধারণ এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয় শামছ রেণু চিল্ড্রেনস ওয়ার্ল্ড।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের শেখানো হয় আবৃত্তি, অংকন, নাচ, গান, অভিনয় ইত্যাদি। খেলাধুলা আয়োজনও করা হয়। শিশুদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করার লক্ষ্যে প্রতিটি ইভেন্টের জন্য আলাদাভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে শিক্ষা সামগ্রী যেমন- বই, খাতা, পেন্সিলবক্স ইত্যাদি প্রদান করা হয়ে থাকে। কখনো তারা চকোলেট বা চিপস ইত্যাদিও পেয়ে থাকে। অভিভাবকগণকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগও দেওয়া হয়। তারাও পুরস্কার পান।
শিশুদের দেশপ্রেম ও দেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রতিবছর জাতীয় দিবসগুলো পালন করা হয়ে থাকে। ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শিশুরা নিজেরাই অস্থায়ী শহীদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ তৈরি করে। তারপর প্রথম প্রহরে তারা গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করে তাদের তৈরি শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শিশুরা অতি উৎসাহ নিয়ে এসব কাজ করে থাকে। বড়রা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তাদের এই কার্যক্রমকে পরিচালনা করেন।
শিশুদের এই অনানুষ্ঠানিক স্কুল পরিচালনা করা হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে। কোনো ধরনের অবকাঠামো সেখানে নেই। মাদুর বা পাটিতে বাড়ির উঠানে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। স্কুলের সকল শিক্ষা উপকরণ যেমন- খাতা, রংপেন্সিল, রঙিনকলম, জ্যামিতি বক্স, স্কেল ইত্যাদি বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ প্রতিপালনের জন্য বিতরণ করা হয় স্যানিটাইজার। পরিবেশ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিশুরা নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করে। স্কুলের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাফিয়া জামান পিয়া ও মাইফুল আক্তার ঝুমু এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শায়েলা জাহান।

স্কুলের স্বেচ্ছাসেবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাইফুল আক্তার ঝুমু জানান- আধুনিক এই সময়ে বেশির ভাগ শিশু-কিশোর মোবাইল গেমস ও অন্যান্য ডিভাইসের প্রতি আসক্ত। ফলে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন পাচ্ছে যা তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে। শামছ রেণু চিল্ড্রেনস ওয়ার্ল্ড এর পৃষ্ঠপোষক সাজ্জাদুর রহমান। তিনি মনে করেন শিশুরা আগামী প্রজন্মের কর্ণধার। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা এবং বিনোদনের মাধ্যমে এই শিশুরাই আগামী দিনের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে।

×