ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

নৃবৈজ্ঞানিক মাঠকর্ম

মানছুর আলম অন্তর

প্রকাশিত: ০১:২০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নৃবৈজ্ঞানিক মাঠকর্ম

নৃবিজ্ঞান মানুষকে নিয়ে অধ্যয়ন করে

নৃবিজ্ঞান মানুষকে নিয়ে অধ্যয়ন করে, মানুষের সংস্কৃতিকে নিয়ে অধ্যয়ন করে।  সেইক্ষেত্রে আমাদের ক্লাসরুমের বাইরে  শেখার অনেক  আছে। মাঠকর্ম হচ্ছে নৃবিজ্ঞানের ল্যাব। মানুষের সংস্কৃতি এবং  বৈচিত্রতা সম্পর্কে জানতে হলে মানুষের কাছাকাছি যেতে হয়। তাই শিক্ষার্থীরা যেন একটু ভিন্নরকম পরিবেশে নিজেদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পারে এবং ভবিষ্যতে গবেষণা কর্মে এগিয়ে  যেতে পারে তাই এই মাঠকর্ম। নৃবিজ্ঞানে মাঠকর্মের গুরুত্ব ও শ্রীমঙ্গলে মাঠকর্মের জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে বলছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক  মোঃ আইনুল হক।
সম্প্রতি বিভাগের ১৪তম ব্যাচ তাদের একাডেমিক কোর্সের অংশ হিসেবে মাঠকর্ম সম্পন্ন করেছে। ব্যাচের ৫৪ জন শিক্ষার্থীকে মোট নয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। যার প্রতিটি গ্রুপের সুপারভাইজার ছিলেন বিভাগের নয়জন শিক্ষক। গ্রুপগুলোর কাজের ক্ষেত্রও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। যেমন একটি গ্রুপের কাজ করার বিষয় ছিল বর্তমানে খাসিয়া নৃগোষ্ঠীদের ধর্মীয়, সামাজিক, ঐতিহ্যগত ও জন্ম-মৃত্যু সংক্রান্ত উৎসবগুলো কি এবং সেগুলো কিভাবে পালন করে তা জানা। পাশাপাশি কালের বিবর্তনে সেগুলো কতটা পরিবর্তিত হয়েছে তা দেখা এবং এই বিষয়ে তাদের ভাবনা। এছাড়াও কিছু গ্রুপ এখনো মেডিসিন, খাসিয়াদের স্বাস্থ্য সন্ধানী আচরণ ও খাসিয়া ভাষার পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে।
খাসিয়ারা মূলত মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে বিশ্বাসী। অর্থাৎ পরিবারের ব্যবসা বাণিজ্য দেখাশোনা কিংবা বিয়ের পর নবদম্পতিকে কনের পরিবারেই থাকতে হয়। তারা একসময় প্রকৃতি কেন্দ্রিক নানান পূজাপার্বণে সময় পার করলেও বর্তমানে লাউয়াছড়ায় একটি পরিবার ছাড়া বাকি সবাই খিস্টধর্মে বিশ্বাসী। তাই তাদের ধর্মীয় উৎসবেও এসেছে পরিবর্তন। এখন তারা বড়দিন ও স্টারসানডেকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। 
এর বাইরেও তাদের ঐতিহ্যগত উৎসব শাডসুক মেনসিম (মনের সুখে নাচা), সেং কুটস্নেম (বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়ী অনুষ্ঠান), বেডিংক্লামসহ (অশুভ শক্তি তাড়াতে ঘরের চালে বাঁশের ব্যবহার)  বিভিন্ন রকম উৎসব পালন করে থাকেন।
খাসিয়া সমাজের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বিয়েরক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর পছন্দের স্বাধীনতা। অর্থাৎ অবিবাহিত যুগল নিজেদের পছন্দ পরিবারকে জানালে তবেই তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়। তবে পরিবার যদি অসম্মতি দেয় সেক্ষেত্রে পালিয়ে বিয়ে করার রীতিও সে সমাজে প প্রচলিত। 
এছাড়াও খাসিয়াদের প্রধান উৎসবগুলোতে লাউয়াছড়ায় একটিমাত্র পশু জবাই করে সবাই একত্রে ভোজনে অংশ নেয়। এক্ষেত্রে যার যতটুকু সামর্থ্য তা নিয়েই উৎসবে অংশ নেয়। তবে খাবারের ক্ষেত্রে সকলেই সমান ভাগ পান। মূলত একটি মাঠে গোল হয়ে বৃদ্ধ কিংবা শিশু সবাই একত্রে ভোজনে অংশ নেন।
খাসিয়া সমাজে কেউ মারা গেলে তিনদিন তিনরাত তাঁরা জেগে থাকেন। ওই সময়টায় তারা শোক ভোলার জন্য ধর্মীয় গান-বাজনার আয়োজন করেন। কেউ কেউ লুডু-ছক্কা খেলেও সময় পার করেন।
পুঞ্জির  হেডম্যান নিজেদের সংস্কৃতির নানান দিক বর্ণনার মাঝখানে আক্ষেপের সুরে তুলে ধরেন তাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগত দিকগুলো। তিনি বলেন, আমরা মাতৃপ্রধান হলেও বর্তমানে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলেরা বিয়ের পর কনের বাড়িতে উঠতে লজ্জাবোধ করেন। এক সময় শাডসুক মেনসিমে কিংবা সেং কুটস্নেমে আমাদের ঐতিহ্যগত নৃত্য পরিবেশন করা হলেও বর্তমানে ছেলেমেয়েরা আধুনিক নৃত্যে ঝুঁকে পড়েছে।

monarchmart
monarchmart

শীর্ষ সংবাদ: