
নগরায়ণের ফলে কমছে কৃষি জমি ও বনাঞ্চল
ক্রমাগত নগরায়ণের ফলে দেশের বনাঞ্চল ও কৃষিজমি ক্রমাগত কমছে। ২০১৫ সালের তুলনায় বর্তমানে দেশে কৃষি জমি ও বনাঞ্চলের পরিমাণ কমেছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। বিপরীতে অবকাঠামো নির্মাণে ভূমির ব্যবহার বেড়েছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিবিএসের পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান শক্তিশালীকরণ (ইসিডিএস) প্রকল্পের এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সালে কৃষিজমি ও বনভূমির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭৪ হাজার ৩৮৬ বর্গ কিলোমিটার এবং ১৮ হাজার ৪৯৯ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু ২০২৩ সালে এই ভূমি হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে প্রায় ১ হাজার ৪৭১ বর্গ কিলোমিটার এবং ১ হাজার বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ দেশের মোট কৃষি ও বনভূমি ২০১৫ সালে যেখানে ছিল ৫০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে কৃষি ও বনভূমি আছে ৪৯ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
তবে এই সময়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি সামাজিক বনায়ন বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে অবকাঠামো নির্মানে জমি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩ হাজার ১৪০ বর্গ কি.মি বা ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ সালে ৩৬৭ বর্গ কি.মি বেড়ে অবকাঠামো নির্মাণে ভূমি ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৭২ বর্গ কি.মি বা ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ২ দশমিক ৮২ শতাংশ ভূমি অবকাঠামো নির্মাণে বেড়েছে যার পরিমাণ ৯৩৩ বর্গ কিলোমিটার।
তবে কৃষিজমি ও বনভূমি কমলে সামাজিক বনায়নের পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে সামাজিক বনায়ন। ২০২৩ সালে মোট সামাজিক বনায়নের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭০৮ বর্গ কি.মি বা ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ছিল ১ হাজার ৩৪১ বর্গ কি.মি বা ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৩৬৭ বর্গ কিলোমিটার বনায়ন বেড়েছে। অপরদিকে প্রাকৃতিকভাবে পুনরুজ্জীবিত বন কমেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং কাঠের জমি কমেছে ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
দেশে গ্রামীণ অঞ্চলে ভূমি কমলেও নগরায়ণের ফলে শহরে বেড়েছে ভূমির পরিমাণ। ২০২৫ থেকে ২০২৩ সালে শহরে ভবন, রাস্তায় ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। কাঠের শস্য বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ম্যানগ্রোভ বেড়েছে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তৃণভূমি ও উপকূলীয় জলাশয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার (৫৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ) তৃণভূমি বেড়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জলাশয় এবং আন্তঃজোয়ার উপকূল বড়েছে প্রায় ৬৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এ দিকে বিবিএসের জরিপে হাত ধোয়ার জন্য একজন ব্যক্তি প্রতিবছর গড়ে ৩১ হাজার ৩২ লিটার পানি খরচ করে। জরিপে দেখা যায় গ্রাম অঞ্চলে এক জন ব্যক্তি হাত ধোয়ায় খরচ করে ৩১ হাজার ১৮৪ লিটার এবং শহরে ৩০ হাজার ৬৮৩ লিটার। হাত ধোয়ার পেছনে গড়ে খরচ হয় ৯৮১ টাকা। যা গ্রাম এলাকায় ৮৩১ টাকা এবং শহরে ১ হাজার ৩১১ টাকা। এ ছাড়া প্রতিবছর একটি পরিবারে ২৪ হাজার ১৯ লিটার তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। ১৫ কেজি কঠিন ও ১৮০ কেজি বায়বীয় বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ বর্জ্য সংগ্রহে পরিবারের ব্যয় হয় গড়ে ১ হাজার ৩৭৫ টাকা। গ্রামীণ অঞ্চলে ৯৭২ এবং শহরে ১ হাজার ৪৪৭ টাকা খরচ হয়।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খান জানান, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ‘খানাভিত্তিক পরিবেশ জরিপ ২০২৪’ পরিচালিত হয়েছে। যা পরিসংখ্যান ব্যুরো আগে করেনি। এতদিন পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ জরিপ করত। বিবিএস সেটা শুরু করেছে। আগামী ৩০ জুন এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
তিনি বলেন, জরিপ থেকে প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর হাত ধৌতকরণে গড়ে খরচ হয় ৯৮১ টাকা, যা গ্রাম এলাকায় ৮৩১ টাকা এবং শহর টাকায় ১ হাজার ৩১১ টাকা। প্রতিবছর হাত ধৌতকরণে পানি খরচ হয় গড়ে ৩১ হাজার ৩২ লিটার, যা গ্রাম এলাকায় ৩১ হাজার ১৮৪ লিটার এবং শহরে ৩০ হাজার ৬৮৩ লিটার।
প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাব (ভূমি) থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০১৫ সালে বনাঞ্চলের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৪৯৯বর্গ কিলোমিটার যা ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৮ বর্গ কিলোমিটার; বনাঞ্চল হ্রাসের হার ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে কৃত্রিম বনায়নের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে কৃত্রিম বনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪১ দশমিক ৪৮ বর্গ কিলোমিটার, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০৮ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার; কৃত্রিম বনের পরিমাণ বৃদ্ধির হার ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।