ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডির সন্দেহ

যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিটেন্স আকারে ফিরছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২৭ মে ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিটেন্স আকারে ফিরছে

আড়াই শতাংশ প্রণোদনা নিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিটেন্স আকারে ফিরে আসছে

আড়াই শতাংশ প্রণোদনা নিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিটেন্স আকারে ফিরে আসছে বলে সন্দেহ পোষণ করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ২৮৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স এলেও চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৩০০ কোটি  ডলার। অর্থাৎ দেশটি থেকে রেমিটেন্স আসা বাড়ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি মনে করে রেমিটেন্স হিসেবে আসা এ অর্থ দেশ থেকে আগে পাচার হয়েছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির শর্ত আরোপ করে ভালো নির্বাচন চাওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি। 
শনিবার সিপিডির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীমূলক পর্যালোচনা’ জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ধারণা দেওয়া হয়। বর্তমান সাত শতাংশ কর দিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগও দিয়েছে সরকার। এতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। শ্রম বাজার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল গেলেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া অর্থ রেমিটেন্স আকারে আসছে।

তারা রেমিটেন্সে দেওয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও নিচ্ছে। বিষয়টি একেবারেই অস্বাভাবিক, কখনোই হয় না উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, কারণ আমরা জানি আমাদের বেশিরভাগ রেমিটেন্স কোথা থেকে আসে। মধ্যপ্রাচ্যে বেশি মানুষ যাওয়ার পরও সেখান থেকে প্রত্যাশা মতো রেমিটেন্স আসছে না। আগে সৌদি থেকে বেশি রেমিটেন্স এলেও যুক্তরাষ্ট্র সেই জায়গাটা দখল করেছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায় তাদের বেশিরভাগই হোয়াইট কালার জব করে। অনেকেই ঘর-বাড়ি জমি-জমা বিক্রি করে দেশ থেকে টাকা নিয়ে চলে যান, অনেক শিক্ষার্থীও আছেন। তারা তো টাকা পাঠাতে পারেন না। তাহলে এই টাকা কোথা থেকে আসছে? তিনি জানান, সরকারের দেওয়া প্রণোদনা নিতে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স আনছে। রেমিটেন্স কোথা থেকে আসছে তা এখনই দেখা দরকার। এদিকে নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি  দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাতে আলাদা আইন কিন্তু রয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে প্রশাসনিক কঠিন উদ্যোগ নিতে হবে।

এদিকে বৈধ পথে রেমিটেন্স উৎসাহিত করতে কয়েক বছর ধরেই প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এখন কেউ ১০০ টাকা রেমিটেন্স পাঠালে তা দেশে যিনি গ্রহণ করেন, তিনি পান ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। এই সুযোগ অর্থ পাচারকারীরা নিচ্ছে বলে অনেকের সন্দেহ। ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমানো হলে তারা স্বস্তি পাবে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দরিদ্রদের প্রত্যক্ষ সহায়তার আওতা বাড়ানো দরকার। সঠিক ব্যক্তিরা সহায়তা পাচ্ছে কি না, সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এ ছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২১ লাখ ব্যক্তি দেশের বাইরে গেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এর মধ্যে ১১ লাখের বেশি সৌদি আরবে  গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্স কমছে, বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়ছে। এ বিষয়ে খুব ভালোভাবে গবেষণা ও অনুসন্ধান হওয়া দরকার। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করব, এর কারণ  বের করতে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র একটি ঘটনায় ২০ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা  গেছে।

কয়েকটি দেশের সঙ্গে মাত্র তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সমঝোতা চুক্তি করেছে বিএফআইইউ, যা মন্দের ভালো। এদিকে, অর্থ পাচার বিষয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটির পক্ষে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের প্রধান হিসেবে কাজ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এ বিষয়ে  মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংস্থাগুলো সরকারের অধীনে থাকলে তো তারা স্বাধীন হয়ে কাজ করতে পারে না। তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। এখানে সংস্কার দরকার। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সালে দেশে স্বর্ণ এসেছিল ৫ টন। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫৪ টন, যা আমাদের বার্ষিক চাহিদা ২০ টনের বেশি। এ স্বর্ণ দেশ থেকে পাচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, রেমিটেন্স এখন স্বর্ণ আকারেও আসছে। এ পরিমাণ রেমিটেন্স ব্যাংকে আসলে রিজার্ভ বাড়ত। 
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার নতুন ভিসানীতিকে সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, আমেরিকাই একমাত্র বাজার যেখানে শুল্ক দিয়েও প্রতিযোগিতায় সক্ষম। ২০২৬ কিংবা ২০২৯ এর পরে ইউরোপ, কানাডা বা ভারতের বাজারে শূন্য শুল্কের সুবিধাটা থাকছে না। কিন্তু মার্কিন বাজারে শুল্ক দিয়ে ঢুকেও প্রতিযোগিতায় সক্ষম। এই বাজারটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য এই বিষয়টি সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা এটাকে সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও ভালো নির্বাচনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ভিসার বিষয়টি এনেছে।

একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য খুবই অপমানজনক। আমাদের নিজেদের জন্যও সুষ্ঠু নির্বাচন করা উচিত। শর্ত দিয়ে ভালো নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়া, জাতি হিসেবে ও নাগরিক হিসেবে এটা খুবই দুঃখজনক। দেশের সকল রাজনৈতিক দলকেই বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। কারণ, রাজনীতিকরা গোষ্ঠীগতভাবে আমাদের জাতীয় আকাক্সক্ষাকে ধারণ করেন।

×