ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের মজুত পর্যাপ্ত ॥ টাস্কফোর্সের সভায় তথ্য

রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ১৯ মার্চ ২০২৩

রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না

.

রমজান সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিত্যপণ্যের মজুত রয়েছে। কারণে পণ্যের কোনো সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। রমজানে এবার ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। বরং রোজার শুরুতেই চিনি, ছোলাসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম কমতে পারে। এছাড়া অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি করা হবে। যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়াবে দেশের প্রচলিত আইনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। রবিবার সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির ষষ্ঠ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠক শেষে দ্রব্যমূল্য বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানান, জনগণকে বলব ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভোগ্যপণ্যের মজুত রয়েছে। ন্যায্যমূল্যেই পণ্যসামগ্রী কিনতে পারবেন।

টাস্কফোর্সের আলোচনায় রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের আমদানি, মজুত এবং বাজারদর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সেই আলোচনা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে নিত্যপণ্য মজুত রয়েছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ছোলার পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি হয়েছে। কারণে রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম আর বাড়বে না। তবে এক সঙ্গে বেশি করে পণ্য ক্রয় করে বাজারে চাপ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিটি পণ্য চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মজুত রয়েছে। রোজার প্রথম দিকে অধিক হারে কেনাকাটা করে মজুত করেন ভোক্তারা। এতে অনেক সময় সাময়িক দাম বেড়ে যায়। পুরনো অভ্যাসবশত এমন কেনাকাটা না করলে দাম বাড়বে না। এমনকি ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছু কিছু পণ্যের দাম রোজায় কমতেও পারে। বিশেষ করে রোজার প্রথম সপ্তাহে চিনির দাম কমতে পারে। চিনিতে ভ্যাট-ট্যাক্সে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, রমজানের প্রথম সপ্তাহে নতুন দাম চলে আসবে।

এবারের বৈঠকে রমজানের সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চিনি ছাড়াও ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, ডিম ব্রয়লার মুরগি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সুফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ টিকে গ্রুপের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ীরা ডলার সংকট এবং ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার অনীহার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানান। তাদের মতে, এলসি সংকটের কারণে এবার ভোগ্যপণ্যের আমদানি কিছুটা কম হয়েছে। তবে রোজায় পণ্যের কোন সংকট হবে না। ব্যবসায়ীরা সীমিত মুনাফায় এবার ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করবে। এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে- শুল্কমুক্ত সুবিধায় চিনি আমদানি করতে হলে আগে এলসি জটিলতা দূর করতে হবে। ব্যাংকগুলো যাতে এলসি খুলে সে ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া দরকার। এছাড়া রমজানে সরকারের পাশাপাশি এফবিসিসিআই থেকেও বাজারের দিকে নজর রাখা হবে। কোন ব্যবসায়ী কারসাজি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের পক্ষ নেবে না এফবিসিসিআই। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতোমধ্যে ব্রয়লার মুরগির খামার মালিক, ভোজ্যতেল, চিনি মসলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। এসব বৈঠকে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে অধিদপ্তর। তাই রমজানে যাতে কারসাজি না হয় সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। টিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার রমজানে দুদফায় সারাদেশের ফ্যামিলি কার্ডধারী কোটি পরিবারের হাতে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। বাজারের ওপর চাপও কমে আসবে।

চাহিদার তুলনায় মজুত পর্যাপ্ত চাহিদার তুলনায় পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের লিখিত পরামর্শে বলা হয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় গতবারের তুলনায় এবার রোজায় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে। দেশে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন, পাম সরিষা) বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন, স্থানীয় উৎপাদন লাখ হাজার টন। বছরে ২০ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল পাম তেল আমদানি করা হয়। এই খাতে কয়েক ধাপে শুল্ক প্রত্যাহারের পর বর্তমানে শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। প্রতি মাসে এক লাখ ৪০ হাজার টন  থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকলেও রোজায় তা দ্বিগুণ বেড়ে তিন লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়।

×