ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২৫

তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:৩০, ২৮ মে ২০২৫

তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ জরুরি

ছবি: জনকণ্ঠ

তরুণ প্রজন্মই তামাক কোম্পানির প্রধান লক্ষ্য। এক প্রজন্মের তামাকসেবী যখন মৃত্যু বরণ করে কিংবা ঘাতক ব্যাধির প্রকোপে তামাক সেবন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই তামাক কোম্পানির জন্য তখন নতুন প্রজন্মের তামাকসেবী তৈরি করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। মোহনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে যে শিশু বা কিশোর-কিশোরী আজ ঠোঁটে তামাকপণ্য তুলে নিচ্ছে, কাল সে-ই পরিণত হচ্ছে তামাক কোম্পানির আমৃত্যু ভোক্তায়।

বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। বিপুল মৃত্যু এবং ব্যাধির উৎসমূল হওয়া সত্ত্বেও নানা ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করে তামাক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ, কার্যকর কর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ রোধে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়নের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ।

৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২৫-কে সামনে রেখে আজ (২৮ মে) প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’।

ভার্চুয়াল সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তারুণ্যই তামাক কোম্পানির আগ্রাসী বিজ্ঞাপনের প্রধান লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ২০১৬ সালের গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় বিদ্যালয়ের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধ এলাকার মধ্যে অবস্থিত মোট ৫০৭টি মুদি দোকানের ৪৮৭টিতেই চকলেট, ক্যান্ডি, কোমল পানীয় ইত্যাদির পাশেই তামাকপণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে, যা শিশুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ভার্চুয়াল সভায় আরো জানানো হয়, নিকোটিনযুক্ত প্রাণঘাতি পণ্যে আকৃষ্ট করতে নানা কারসাজির আশ্রয় নেয় কোম্পানিগুলো। স্কুলপড়ুয়া শিশুদের আকৃষ্ট করতে বাবলগাম, চেরি, চকলেট ইত্যাদি সুগন্ধীর ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্য বাজারজাত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এসব পণ্যে ১৬ হাজারের বেশি সুগন্ধি ব্যবহার করছে তামাক কোম্পানিগুলো। ইউএসবি স্টিক, ক্যান্ডি, কলমসহ বিভিন্ন পণ্যের আদলে আকর্ষণীয় ডিজাইনে বাজারজাত করা হচ্ছে এসব পণ্য।

সভায় তরুণ প্রজন্ম সুরক্ষায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী চূড়ান্তকরণের দাবি জানানো হয়। একইসাথে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ৩টিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা থেকে সিগারেট বাদ দেয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামাক ও নিকোটিন পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

আত্মা’র সহ-আহ্বায়ক নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র হেড অব প্রোগ্রামস হাসান শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. অনুপম হোসেন, বিসিআইসি এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর সাবেক সমন্বয়কারী মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, নারী মৈত্রী’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, প্রত্যাশা’র সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, আত্মা’র আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন ও সহ-আহ্বায়ক মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

শিহাব

×