ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

কেয়ামত কি তবে অতি নিকটে?

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

কেয়ামত কি তবে অতি নিকটে?

ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ তা'আলা কোরআনে বারবার কেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে মানবজাতি সতর্ক হয়। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, পৃথিবী একদিন শেষ হয়ে যাবে এবং সবাইকে তাঁর কাছে ফিরে আসতে হবে।

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেয়ামতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেয়ামত নির্দিষ্ট এক সময়ে ঘটবে, তবে তার সময় কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, "কেয়ামতের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই জানা। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোন ফল আবরণমুক্ত হয় না। এবং কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। যেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, আমার শরীকরা কোথায়? সেদিন তারা বলবে, আমরা আপনাকে বলে দিয়েছি যে, আমাদের কেউ এটা স্বীকার করে না।" (সুরা হা-মিম-সাজদা ৪৭)

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে কেয়ামতের ছোট এবং বড় আলামত সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও বড় আলামত এখনো প্রকাশিত হয়নি, তবে ছোট আলামতের কিছু নিদর্শন ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।

১. ফুরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচন
ফুরাত নদী বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এটি তুরস্ক, সিরিয়া এবং ইরাকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, এবং নদীটির পানির স্তর কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, "ফুরাত নদী শুকিয়ে গেলে, তার তলদেশ থেকে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত হবে। তখন মানুষ ওই স্বর্ণ লুট করতে যুদ্ধ করবে, এবং এর ফলে অসংখ্য মানুষ নিহত হবে" (বুখারি ৭১১৯, মুসলিম ২৮৯৪)।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফুরাত নদীর পানির স্তরের এই হ্রাস নদীশাসনের অবহেলার কারণে হতে পারে, তবে নদীর স্বর্ণের পাহাড় এখনও সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত হয়নি। ইসলামী স্কলার ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) এই ঘটনার সময়কালকে ইমাম মাহদির আগমনের পূর্ববর্তী সময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

২. মূর্খতা, ব্যভিচার, মদ্যপান এবং নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে কেয়ামতের ছোট আলামত সম্পর্কে বলেছেন, "অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে, দীনি ইলম হ্রাস পাবে, ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে, মদ্যপান ব্যাপক হবে, পুরুষের সংখ্যা কমবে এবং নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। এমনকি পঞ্চাশজন নারীর মধ্যে একজন পুরুষের অধীনে থাকবে" (বুখারি ৫৫৭৭)।

বর্তমান সমাজে অজ্ঞতা, ব্যভিচার এবং মদ্যপানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

৩. আরব ভূখণ্ডে সবুজ গাছপালা ও নদী-নালায় পূর্ণতা
আরব উপদ্বীপ, বিশেষ করে মক্কা ও মদিনা অঞ্চলে সাধারণত গাছপালা ও সবুজ তৃণলতা দেখা যায় না। তবে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আরব ভূখণ্ড গাছপালা ও নদী-নালায় পূর্ণ হয়ে যাবে" (মুসলিম, ইবনে হিব্বান ৬৭০০)।

২০২৩ সালে সৌদি আরবের কিছু অঞ্চলে অবিশ্বাস্যভাবে সবুজ তৃণলতা দেখা গেছে, যা এই ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্যি হতে পারে।

৪. অন্যান্য কেয়ামতের আলামত
এছাড়াও কেয়ামতের আরও কিছু ছোট আলামত ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে, যেমন:

  • অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং অযোগ্য নেতৃত্ব: দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে দায়িত্ব প্রদান।
  • সুদের বিস্তার: সুদের ব্যাপকতা সারা বিশ্বে বেড়েছে।
  • গোলযোগ সৃষ্টি হওয়া (ফিতনা): ইসলামী দল ও বাহিনীর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া।
  • নবুয়তের মিথ্যা দাবিদার: মিথ্যা নবী বা নবুয়্যতের দাবিদারদের আবির্ভাব, যেমন মুসাইলামাতুল কাযযাব, আসওয়াদ আনসির, এবং গোলাম আহমদ কাদিয়ানির মিথ্যা নবুয়্যত দাবি।
  • মানুষের আকৃতি রূপান্তর: হরমোনাল সার্জারি করে পুরুষ থেকে মহিলা এবং মহিলা থেকে পুরুষ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি।
  • উলঙ্গ নারীদের প্রকাশ: পোশাক পরিহিত হয়েও নারীরা অশালীনভাবে প্রদর্শিত হবে, যা হাদিসে উল্লেখিত।

এম.কে.

×