ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

হলুদ ইষ্টিকুটুম

বাড়িতে কুটুম আসবে, আগেভাগেই খবর দেয় যে পাখি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাড়িতে কুটুম আসবে, আগেভাগেই খবর দেয় যে পাখি

ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার মুহূর্তে ইষ্টিকুটুম। ঢাকার রায়েরবাজার থেকে তোলা

পাখি তো কতই ডাকেতবে একটি পাখির ডাক শুধু ডাক নয়, কিচির মিচির শব্দ বা গান নয় শুধুবাড়িতে কুটুম আসবে- এই বার্তা নিয়ে হাজির হয়কাছাকাছি কোথাও অবস্থান নিয়ে ডাকতে শুরু করেএকসময় জোরালো কণ্ঠের চিউ চিউবা উই’ ‘ইউডাক শুনে কান খাড়া হয়ে যেত গৃহস্তেরআর বাড়ির বউ-ঝিদের কথা তো বলাই বাহুল্য

মুহূর্তেই ব্যস্ততা বেড়ে যেত তাদেরকার আসার কথা? কে আসতে পারে? হিসাব মেলানোর চেষ্টা করতেন তারাসত্যি যদি চলে আসে? প্রস্তুতিও নিতে থাকতেন মনে মনেঘর গোছাতেনউঠোন আঙিনা ঝাড়ু দিতেনকী দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে, সে অনুযায়ী বিধি ব্যবস্থা করতেনহ্যাঁ, এক পাখির ডাকেই এত কা- হয়ে যেতপাখিটির নাম ইষ্টিকুটুমকুটুম নিয়ে আসে বলেই ইষ্টিকুটুম নামআবার কুটুম পাখি বলেও ডাকা হয়

অবশ্য আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছেডিজিটাল যুগহাতে হাতে মোবাইল ফোনদূর-দূরান্তের, এমনকি বিদেশে অবস্থান করা আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ভয়েস কল বা ভিডিও কলে কথা হয়এ কারণে কুটুম পাখির ডাকের জন্য কেউ আর তেমন অপেক্ষা করে থাকেন নাতবে পাখিটি সব সময়ের মতোই আশপাশে আছেনিজের মতো করে ডেকেও যাচ্ছেদেশের নানা প্রান্তে দেখা যায় ইষ্টিকুটুম

পাখি নিয়ে যারা নিয়মিত কাজ করেন তাদের মতে, বাংলাদেশে আছে পাঁচ প্রজাতির কুটুম পাখিএই যেমন কালাঘাড় বেনেবউ, ইউরেশীয় সোনাবউ, সরু ঠোঁট বেনেবউ, তামারং বেনেবউ ও কালামাথা বেনেবউএগুলোর মধ্যে একটি পাখির রং মেরুন হলেও বাকি চারটি পাখি হলুদ রঙের

মানে, গায়ে একাধিক রং থাকলেও প্রাধান্য পায় হলুদতবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কালামাথা বেনেবউএটিই ইষ্টিকুটুম বা কুটুম পাখি নামে আলাদা পরিচিতি পেয়েছেএকে হলদে পাখিও বলা হয়

সম্প্রতি ঢাকার রায়েরবাজারে মুহূর্তের জন্য পাখিটি দেখার সুযোগ হয়েছিলএকটি গাছের ডালে এসে বসেছিল ইষ্টিকুটুমমাথার অংশটুকু পুরোপুরি কালোএকই রঙের ঘার ও গলাদুই ডানা লেজে আছে কালোর স্পর্শতবে ডানা মেলে ওড়ে যাওয়ার সময় নিচ থেকে উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের শরীরটাই চোখে পড়েইষ্টিকুটুমের চোখের মণি কালোতবে মণি ঘিরে লাল একটি বৃত্ত থাকে

পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইষ্টিকুটুম বাঁশবন বা ঝোঁপ-ঝাড় আছে এমন স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকেখাদ্য সংগ্রহ করতে ফসলি জমির ওপর দিয়ে ওড়ে বেড়ায়আমবাগানে বিচরণ করেফলমূল ঠুঁকরে খায়মধু আহরণ করেপুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে প্রায় একইরকমস্ত্রী পাখির শরীরের উপরিভাগে জলপাই রঙের ছিটা থাকে

স্ত্রী পুরুষ মিলে লতা বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দিয়ে বাসা বানায়বাসা দেখতে কাপের মতো হয়আর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রজননকালতবে আগস্টের মধ্যেই প্রজনন সম্পন্ন করেস্ত্রী পাখি দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে বলে জানা যায়ইষ্টিকুটুমের মোটামুটি দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটারওজন ৮০ গ্রাম প্রায়ঠোঁট লাল বা উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়ে থাকে

সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর একটি পাখিআশপাশেই আছে কিন্তুএকটু খেয়াল করুনবর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে নিন

×