
ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার মুহূর্তে ইষ্টিকুটুম। ঢাকার রায়েরবাজার থেকে তোলা
পাখি তো কতই ডাকে। তবে একটি পাখির ডাক শুধু ডাক নয়, কিচির মিচির শব্দ বা গান নয় শুধু। বাড়িতে কুটুম আসবে- এই বার্তা নিয়ে হাজির হয়। কাছাকাছি কোথাও অবস্থান নিয়ে ডাকতে শুরু করে। একসময় জোরালো কণ্ঠের ‘চিউ চিউ’ বা ‘উই’ ‘ইউ’ ডাক শুনে কান খাড়া হয়ে যেত গৃহস্তের। আর বাড়ির বউ-ঝিদের কথা তো বলাই বাহুল্য।
মুহূর্তেই ব্যস্ততা বেড়ে যেত তাদের। কার আসার কথা? কে আসতে পারে? হিসাব মেলানোর চেষ্টা করতেন তারা। সত্যি যদি চলে আসে? প্রস্তুতিও নিতে থাকতেন মনে মনে। ঘর গোছাতেন। উঠোন আঙিনা ঝাড়ু দিতেন। কী দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে, সে অনুযায়ী বিধি ব্যবস্থা করতেন। হ্যাঁ, এক পাখির ডাকেই এত কা- হয়ে যেত। পাখিটির নাম ইষ্টিকুটুম। কুটুম নিয়ে আসে বলেই ইষ্টিকুটুম নাম। আবার কুটুম পাখি বলেও ডাকা হয়।
অবশ্য আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। ডিজিটাল যুগ। হাতে হাতে মোবাইল ফোন। দূর-দূরান্তের, এমনকি বিদেশে অবস্থান করা আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ভয়েস কল বা ভিডিও কলে কথা হয়। এ কারণে কুটুম পাখির ডাকের জন্য কেউ আর তেমন অপেক্ষা করে থাকেন না। তবে পাখিটি সব সময়ের মতোই আশপাশে আছে। নিজের মতো করে ডেকেও যাচ্ছে। দেশের নানা প্রান্তে দেখা যায় ইষ্টিকুটুম।
পাখি নিয়ে যারা নিয়মিত কাজ করেন তাদের মতে, বাংলাদেশে আছে পাঁচ প্রজাতির কুটুম পাখি। এই যেমন কালাঘাড় বেনেবউ, ইউরেশীয় সোনাবউ, সরু ঠোঁট বেনেবউ, তামারং বেনেবউ ও কালামাথা বেনেবউ। এগুলোর মধ্যে একটি পাখির রং মেরুন হলেও বাকি চারটি পাখি হলুদ রঙের।
মানে, গায়ে একাধিক রং থাকলেও প্রাধান্য পায় হলুদ। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কালামাথা বেনেবউ। এটিই ইষ্টিকুটুম বা কুটুম পাখি নামে আলাদা পরিচিতি পেয়েছে। একে হলদে পাখিও বলা হয়।
সম্প্রতি ঢাকার রায়েরবাজারে মুহূর্তের জন্য পাখিটি দেখার সুযোগ হয়েছিল। একটি গাছের ডালে এসে বসেছিল ইষ্টিকুটুম। মাথার অংশটুকু পুরোপুরি কালো। একই রঙের ঘার ও গলা। দুই ডানা লেজে আছে কালোর স্পর্শ। তবে ডানা মেলে ওড়ে যাওয়ার সময় নিচ থেকে উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের শরীরটাই চোখে পড়ে। ইষ্টিকুটুমের চোখের মণি কালো। তবে মণি ঘিরে লাল একটি বৃত্ত থাকে।
পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইষ্টিকুটুম বাঁশবন বা ঝোঁপ-ঝাড় আছে এমন স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে। খাদ্য সংগ্রহ করতে ফসলি জমির ওপর দিয়ে ওড়ে বেড়ায়। আমবাগানে বিচরণ করে। ফলমূল ঠুঁকরে খায়। মধু আহরণ করে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে প্রায় একইরকম। স্ত্রী পাখির শরীরের উপরিভাগে জলপাই রঙের ছিটা থাকে।
স্ত্রী পুরুষ মিলে লতা বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দিয়ে বাসা বানায়। বাসা দেখতে কাপের মতো হয়। আর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রজননকাল। তবে আগস্টের মধ্যেই প্রজনন সম্পন্ন করে। স্ত্রী পাখি দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে বলে জানা যায়। ইষ্টিকুটুমের মোটামুটি দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৮০ গ্রাম প্রায়। ঠোঁট লাল বা উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়ে থাকে।
সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর একটি পাখি। আশপাশেই আছে কিন্তু। একটু খেয়াল করুন। বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে নিন।