
আকাশের গাঢ় নীলে খেলা করছে সাদা মেঘ
আকাশটা ইদানীং বেশ অবাক করছে। শুধু অবাক করছে বলি কেন? বিভ্রান্তও করছে। বর্ষার আকাশ। শ্রাবণ মেঘের দিন। অথচ বৃষ্টি নেই। ঘোলা আকাশের পরিবর্তে দৃশ্যমান গাঢ় নীল। সেই নীলে দিব্যি ওড়ে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘ। দেখে মনে হচ্ছে শরতের কাল! আসলে বর্ষা। বর্ষার আকাশে শরতের দখলদারিত্ব দেখে অবাক হচ্ছেন কেউ। কেউ পড়ে যাচ্ছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। বাংলা মাসের দিন তারিখ দেখে বিভ্রান্তি দূর করতে হচ্ছে।
হ্যাঁ, আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। নিজের কালের একেবারে শুরুতে প্রকৃতিতে বিপুল প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল বর্ষা। অতি প্রভাবের ফল হিসেবে সুনামগঞ্জ সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এর কিছুদিন পর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্বল হতে থাকে বর্ষা। বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কমে যায়। জলের অভাব দেখা দেয়ায় রুক্ষ শুষ্ক হতে থাকে প্রকৃতি। শ্রাবণে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। অথচ শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, কৃষি জমি ফেটে চৌচির!
একইভাবে গরম বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। দিনের পর দিন ভ্যাপসা গরম। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শরীর মুহূর্তেই ঘামে ভিজে যাচ্ছে। সব দেখে মনে হয় এ বুঝি বর্ষা নয়, শরত। শরতের প্রথম মাস ভাদ্র তালপাকা গরমের জন্য বিখ্যাত। বুঝিবা সেই ভাদ্র চলে এসেছে।
তবে দৃশ্যমান যে পরিবর্তন, সেটা আকাশেই বেশি দেখা যাচ্ছে। বর্ষার আকাশে এখন রাজত্ব করছে শরত! প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টিকে তাড়িয়ে নীল আকাশে ভাসিয়ে দিচ্ছে তার সাদা মেঘের ভেলা। কখনও সখানও বৃষ্টি হচ্ছে বটে। ক্ষণিকের বৃষ্টি বর্ষাকে মোটেও জাগাতে পারছে না। তাই বলে সে হার মেনে নিয়েছে, না, এমনটি বলা যাবে না। বরং দুই ঋতু বিবাদ বিসম্বাদে জড়িয়েছে বলে মনে হয়!
বুধবারে উদাহরণটি টানা যেতে পারে। এদিন সকালে ঢাকার আকাশ ছিল আলোয় ভরা। স্বচ্ছ আকাশে নীল রং ছড়িয়ে পড়েছিল। রাজধানীর উঁচু সব ভবনের ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছিল সাদা মেঘ। কী যে অপরূপ সে দৃশ্য! ফ্লাই ওভার নামের জঞ্জালের জন্য রাস্তা থেকে আকাশ সেভাবে দেখা যায় না। তার পরও ফাঁকা অংশ দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে কেউ কেউ দেখার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু যে কথা বলছিলাম, দুপুর হতে না হতেই সক্রিয় হয়ে যায় মৌসুমি বায়ু। আকাশের নীল ফিকে হতে থাকে। লক্ষ্য করে দেখা যায়, সাদা মেঘের রং ক্রমে ঘোলা হচ্ছে। কী এক কালো ছায়া তাড়া করছিল সাদাকে। নিউজপ্রিন্ট কাগজে ফাউন্টেন পেন দিয়ে লিখলে কালি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে কালো রংটা তেমনি ছড়িয়ে পড়ছিল। কিছুক্ষণ মুখ গুমরা করে থাকা আকাশ থেকে একসময় শুরু হয় বৃষ্টি। তার পর বিকেল নাগাদ আবারও রোদ। স্বচ্ছ আকাশ। অদ্ভুত বিবাদ-বিসম্বাদ কিংবা খেলা আরও কিছুদিন চলবে। খুব ভাল করে লক্ষ্য করুন, খেলাটা বেশ উপভোগ্য কিন্তু!