ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পীদের সঙ্গে গাইলেন প্রধানমন্ত্রীও উৎসবে রঙিন বিজয় মাসের প্রথম দিন

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২ ডিসেম্বর ২০২১

শিল্পীদের সঙ্গে গাইলেন প্রধানমন্ত্রীও উৎসবে রঙিন বিজয় মাসের প্রথম দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু হয়ে গেছে উদ্যাপন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে মেতেছে বাঙালী। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিন বুধবার এ আনন্দ উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর হাতিরঝিলে এফবিসিসিআই আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে স্বাধীনতার আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি গানেও কণ্ঠ মেলান। একই মঞ্চ থেকে সঙ্গীত নৃত্য ও কবিতা তথ্যচিত্রে বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। শিল্পীরা তাদের পরিবেশনার মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ১৬ দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালীর বিজয়ের ইতিহাস, বীরত্বের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। আজ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাথা উঁচু করে বলতে পারছেন যে, তারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। শহীদদের সন্তানরা বলতে পারছে, আমার পিতা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন। আমাদের সেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী কাজ হয়েছে। আজ সুবর্ণজয়ন্তীর সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। জাতির পিতা বেঁচে নেই। কিন্তু নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে তার বাংলাদেশকে দেখছেন। এখন আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। সমৃদ্ধশালী করা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বলে আজকে ব্যবসায়ী, না হলে কোন সুযোগই বাঙালীর জীবনে ছিল না। আমরা তখন শোষণ, বঞ্চনার শিকার হয়েছি। কাজেই সবাই এই বাংলাদেশ উন্নত করার জন্য, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার জন্য কাজ করে যাবেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের বলব প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকার জনগণের আর্থিক উন্নয়নে কর্মসূচী গ্রহণ করবেন। কারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ততই প্রসার ঘটবে, তেমনি আপনাদের কলকারখানার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য বাজারও সৃষ্টি হবে। এতে মানুষের ভাগ্য যেমন পরিবর্তন হবে আপনাদেরও আয় বৃদ্ধি পাবে। উৎসবের মূল ভেন্যু হাতিরঝিল এমফিথিয়েটার। এখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। আলোচনায় অংশ নিয়ে আতিকুল ইসলাম উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে তার পরিকল্পনা এবং ইতোমধ্যে গ্রহণ করা নানা কর্মসূচীর কথা তুলে ধরেন। সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার পঙ্ক্তি দিয়ে আলোচনা শুরু করা মেয়র শেষ করেন ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরেনি’ গানটি দিয়ে। মেয়র গাইছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গান শুনছিলেন মনোযোগ দিয়ে। এরই এক পর্যায়ে গানে কণ্ঠ মেলান তিনি। এ সময় উপস্থিত সকলে করতালিতে ফেটে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গাইতে থাকেন দর্শকরাও। পরে মূল সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথম দিনের আয়োজনের খুব উল্লেখযোগ্য পরিবেশনাটি ছিল খ্যাতিমান শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার। বন্যা শতাধিক শিক্ষার্থী সঙ্গে নিয়ে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানটি গেয়ে শোনান। দলীয় ধ্রুপদী পরিবেশনায় আনন্দের বহির্প্রকাশ যেমন ছিল তেমনি ছিল অন্যরকম এক ভাবগাম্ভীর্য। উৎসবে এদিন আরও গান করেন স্বাধীনবাংলা বেতারের কয়েকজন শিল্পী। শাহীন সামাদ ও রফিকুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কিছু গানের অংশ বিশেষ গেয়ে শোনান। অবশ্য শুধু তারা নন, সঙ্গে ছিলেন এ প্রজন্মের শিল্পীরাও। স্বনামধন্য নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সুজিত মুস্তাফা, এস আই টুটুল, মিলন মাহমুদ, পারভেজ, সাব্বির, শফিক তুহিনসহ একদল শিল্পী একইসময় মঞ্চে ছিলেন। গেয়েছেনও একসঙ্গে। ধনধান্য পুষ্প ভরা, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ, জয় বাংলা বাংলার জয় ইত্যাদি গানের অংশ বিশেষ গেয়ে শোনান তারা। পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস এবং পূর্ণিমাও। দলীয় নাচে অংশ নেন অভিনেত্রী মীম। একাধিক কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে লাল সবুজের বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়। তবে মঞ্চে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীসহ খ্যাতিমানরা উপস্থিত থাকলেও, জুনিয়র গায়ক তাপসের ঘন ঘন কথা বলা, মঞ্চে এলোমেলো চলা উপস্থিত অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। আতশবাজির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছেন প্রথম দিনের উৎসব। আজ একইরকম আয়োজনে মুখরিত থাকবে হাতিরঝিল। এমফিথিয়েটারে সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হবে উৎসব। দ্বিতীয় দিনে আজ বৃহস্পতিবার থাকছে শিশু-কিশোর ও বিশেষ শিশুদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুক্রবার নারীদের অংশগ্রহণে থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠান। ৪ ডিসেম্বর নজরুল উৎসব, ৫ ডিসেম্বর রবীন্দ্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ৬ ডিসেম্বর থাকছে নৃত্য উৎসব। ৭ ডিসেম্বর অঞ্চলভিত্তিক অনুষ্ঠানে গাইবেন ঢাকা ও ময়মনসিংহের শিল্পীরা। ৮ ডিসেম্বর থাকবে চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের পরিবেশনা। ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগ। ১০ ডিসেম্বর খুলনা ও সিলেট বিভাগ। ১১ ডিসেম্বর থাকবে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান। ১২ ডিসেম্বর লোকসঙ্গীত। ১৩ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র তারকাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৪ ডিসেম্বর মঞ্চনাটক। ১৫ ডিসেম্বর কনসার্ট। ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজির আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
×