ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সাগরিকায় বাংলাদেশ পাকিস্তান প্রথম টেস্ট শুরু

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০২১

আজ সাগরিকায় বাংলাদেশ পাকিস্তান প্রথম টেস্ট শুরু

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ আইসিসির প্রথম বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সবার নিচে থেকে শেষ করে বাংলাদেশ দল। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু করবে মুমিনুল হকের দল। অধিনায়কের স্বপ্ন এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ২/৩ ধাপ ওপরে থেকে শেষ করা। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রথম টেস্টেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। কারণ, তিনি ও মুশফিকুর রহিম ব্যতীত কোন সিনিয়র ক্রিকেটার নেই এবং ইনজুরির ধাক্কায় বেশ কিছু নিয়মিত সদস্য খেলতে পারছেন না। যদিও মুমিনুল আশাবাদ জানিয়েছেন, জুনিয়ররা দায়িত্ব নিয়ে খেলবে এবং তারা এই দারুণ সুযোগ কাজে লাগাবে। ১০ বছর আগে সর্বশেষ বন্দর নগরী চট্টগ্রামে খেলেছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। এখন সেই দলটির কেউ নেই। তাই চট্টগ্রামের অপরিচিত পরিবেশেই আজ স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে নামতে হবে তাদের সিরিজের প্রথম টেস্টে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আসতে পারবেন ধারণ ক্ষমতার এক-চতুর্থাংশ দর্শক। ২৬ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে পাবেন তারা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দুই টি২০ ম্যাচ দেখার সুযোগ পেয়েছেন চট্টগ্রামের দর্শকরা। এর মাঝে অবশ্য ১ ওয়ানডে ও ১ টেস্ট টেস্ট হয়েছে করোনা পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু সেই দুটি ম্যাচ দর্শকশূন্য মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। দর্শকবিহীন মাঠে ওয়ানডে জিতলেও টেস্টে প্রায় হাতের মুঠোয় আসা টেস্ট ম্যাচের জয় বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। এবার সেখানে পাকদের মুখোমুখি হবে আজ বাংলাদেশ। দুই ডোজ করোনা ভ্যাকসিনের সনদ নিয়ে মাঠে প্রবেশাধিকার পাবেন হাজার পাঁচেক দর্শক। এই ম্যাচটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ দলের জন্য। কারণ হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে ভিত্তিতে সবচেয়ে কম ১২ টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ এই দ্বিতীয় বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ৭ টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়ে মাত্র ২০ পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে থেকে শেষ করে। এবার দলটির ভাগ্যে কি ঘটবে। মুমিনুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নতুন চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে, দলটা তরুণ। অধিনায়ক হিসেবে কাজটা কঠিন। ওয়ানডে-টি২০ ক্রিকেটে যেটাই হোক, টেস্টে সবসময় সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রয়োজন হয়। চ্যালেঞ্জ অবশ্যই থাকবে। তবে নতুন যারা আছে, তাদের জন্য দারুণ সুযোগ নিজেদের মেলে ধরার। আমার কাছে মনে হয় এখন যে জায়গায় আছি আমরা, টেস্ট চ্যাম্পিয়ন যখন শেষ হবে, তখন এখান থেকে দুই-তিন ধাপ ওপরে উঠতে পারলে আমি খুশি।’ সেই কাজটা মহা চ্যালেঞ্জিং হবে বাংলাদেশের জন্য কারণ সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ক্রিকেটার প্রথম টেস্টেই নেই। আবার সর্বশেষ টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করা ডানহাতি গতিময় পেসার তাসকিন আহমেদ অনুপস্থিত। শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানও নেই ইনজুরিতে। তাই শক্তি হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশও। এছাড়া ঘোষিত টেস্ট স্কোয়াডে আরেক দফা পরিবর্তন এসেছে ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যায়। আবু জায়েদ রাহীর ছোটখাটো ইনজুরির সমস্যা রয়েছে। তাই যোগ হয়েছে দুই ডানহাতি পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও শহিদুল ইসলাম। এছাড়া আগেই এই দলে জায়গা করে নিয়েছেন টপঅর্ডার মাহমুদুল হাসান জয় ও ডানহাতি পেসার রেজাউর রহমান রাজা। আজ সিরিজের প্রথম টেস্টের একাদশে ৭ ব্যাটার ও ৪ বোলার থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে যেকোন দুই পেসার ও বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম এবং ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ খেলবেন। ৭ ব্যাটারের মধ্যে ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলামের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নবাগত জয়ের। সেক্ষেত্রে তার অভিষেক ঘটবে। গত ২ দিনের অনুশীলনে জয়কে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং কোচ এ্যাশওয়েল প্রিন্স ও হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর কার্যক্রম সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। সাইফ হাসান ছিটকে যাবেন, তিনে নাজমুল হোসেন শান্ত, চারে মুমিনুল, পাঁচে মুশফিক, ছয়ে ইয়াসির আলী রাব্বি ও সাতে লিটন দাস। গত আড়াই বছর ধরেই টেস্ট স্কোয়াডে আছেন ইয়াসির, কিন্তু এখনও আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। কিন্তু এবার তার ভাগ্যের শিঁকে ছেঁড়ার সুযোগ এসেছে মাহমুদুল্লাহর অবসরে। তাই একেবারে নতুন চেহারার দল নিয়েই মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ যারা, সাকিব ভাই, তামিম ভাই, তামিম ভাই ওপরে ভাল খেললে আমাদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। সাকিব ভাই একা দুইজনের সমান। তাসকিনের অবস্থা খুব খুব ভাল ছিল, দারুণ বল করছিল। সেদিক থেকে বলব যে চারটা ক্রিকেটার নেই। আমার কাছে মনে হয়, অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য কঠিন হবে। চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে জুনিয়রদের জন্য এটা ভালো সুযোগ। হয়তো আমার, মুশফিক ভাইদের একটু বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। জুনিয়রদেরও বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।’ দায়িত্বটা নেয়া বেশ কঠিনই হবে। কারণ পাকিস্তান টেস্ট অঙ্গনেও আছে দুর্দান্ত ফর্মে। সর্বশেষ ৫ টেস্টের মাত্র একটি হেরেছে তারা। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু করে ১ সিরিজ খেলে ১২ পয়েন্ট অর্জনও করেছে তারা। বাংলাদেশের মাটিতে এবারই প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলবে তারা। তাই মহাগুরুত্ব দিয়েই সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে তারা। কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ টেস্ট জিতলে পয়েন্ট টেবিলে কিছুটা ভাল অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ থাকবে তাদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু করে ২ টেস্টের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছে পাকরা। এবার শতভাগ সাফল্য পেতে চায়। এই সিরিজ শেষে তাদের ম্যাচ থাকবে আর ৯টি। সেজন্য শক্তিশালী দল নিয়েই মুখোমুখি হবে তারা বাংলাদেশের। ২০১১ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট খেলে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল তারা। সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য অবশ্য তখনকার একজন ক্রিকেটারও নেই বর্তমান দলে। তবে প্রধান কোচ সাকলাইন মুস্তাকের অভিজ্ঞতা আছে চট্টগ্রামে খেলার। সে অনুসারেই দলকে গত ২ দিন অনুশীলন করিয়েছেন। ১০ বছর পর সাগরিকায় টেস্ট খেলতে নামলেও সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচে দারুণ ফল পাকদের। পেস বোলিংয়ে দারুণ শক্তিধর পাকরা ম্যাচের আগের দিনই ১২ জনের দল জানিয়ে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে একাদশে ৩ পেসার ও ২ স্পিনার নিয়েই খেলার সম্ভাবনা তাদের। যদিও পাক অধিনায়ক বাবর আজম উইকেট দেখে এদিন স্পিন সুবিধার হবে বলেই মন্তব্য করেছেন। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ডটাও দুর্দান্ত তাদের, ১১ টেস্ট খেলে দশটিতেই জিতেছে এবং অন্যটি ড্র হয়েছে। চট্টগ্রামের এই মাঠে সর্বশেষ দুই টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে সফরকারী আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট খেলেই হেরেছে এবং এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলটির কাছে হেরে যায়। এখন খর্বশক্তির দল নিয়ে উজ্জীবিত পাকদের মোকাবেলা করা আরও কঠিন হবে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রে ৯ দলের মধ্যে সবচেয়ে কম ১২ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এবার হোম ও এ্যাওয়ে মিলে দুই বছরে ৬ সিরিজে ১২টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি ২১টি টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ড, ভারত ১৯, অস্ট্রেলিয়া ১৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫ টেস্ট খেলবে। ১৩ টেস্ট করে খেলবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঘরের মাঠে পাকদের মোকাবেলা করার পর শ্রীলঙ্কা ও ভারতকেই শুধু পাবে নিজেদের মঞ্চে। বাকি ৩ সিরিজ খেলতে হবে নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তাই মুমিনুল ২-৩ ধাপ ওপরে ওঠার যে আশাবাদ জানিয়েছেন তা পূর্ণ করতে হলে হোম সিরিজগুলোতেই ভাল কিছু করতে হবে। পাকদের বিপক্ষে নতুন চেহারা নিয়ে সেই দারুণ কিছু করার অগ্নিপরীক্ষা শুরু হবে আজ থেকেই। টি২০ বিশ^কাপে ব্যর্থতার কারণে এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলেননি মুশফিক। টেস্ট সিরিজের জন্য তাকে বিশ্রাম দিয়েছেন নির্বাচকরা, তার সঙ্গে অধিনায়ক মুমিনুলের ওপর ব্যাটিং বিভাগ নির্ভরশীল থাকবে। আর সর্বশেষ ৩ টেস্টে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে শতক পাওয়া শান্তর কাছেও প্রত্যাশা অনেক বাংলাদেশের। টেস্টের সর্বশেষ ৪ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৮*, ৪০, ৪০ ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১১ রান করেছেন মুশফিক। তাই এই ফরমেটে অবশ্য অতটা খারাপ হয়নি মুশফিকের পরিস্থিতি। আর ওয়ানডে-টি২০ ক্রিকেটে চরম বাজে অবস্থা হলেও লিটন কুমার দাস মিডল অর্ডারে সর্বশেষ ১০ ইনিংসে ৫টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। তাই তার কাছ থেকেও বড় আশা থাকবে বাংলাদেশের।
×