ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৮ অক্টোবর ২০২১

ইংল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হার বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন/কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে’- শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের অন্তঃসারশূন্য কালো চেহারাটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে বাংলাদেশ দলের। আবুধাবিতে বুধবার ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটের শোচনীয় পরাজয়ে নিজেদেরই বিপর্যস্ত কালো চেহারা দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়েও অভিজ্ঞতম মুশফিকুর রহিম তীব্র ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আয়নাতে মুখ দেখতে বলেছিলেন সমালোচকদের। টি২০ ফরমেটে তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি দলগতভাবে এবং ক্রিকেটারদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অগ্নিপরীক্ষাই ছিল। সেই ইংলিশ পরীক্ষায় চরম লজ্জাজনকভাবে ফেল করেছেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান-বোলাররা। বাংলাদেশের করা ২০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১২৪ রান পেরোতে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের লেগেছে মাত্র ১৪.১ ওভার। মাত্র ২ উইকেটে ১২৬ রান তুলেছে তারা। গত আসরের রানার্সআপের বিপক্ষে মাহমুদুল্লাহরা আয়নাতে নিজেদের লেজেগোবরে চেহারাটাও দেখতে পেয়েছেন স্পষ্ট। ম্যাচ শেষে তাই আক্ষেপ নিয়ে বিপর্যস্ত দলের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, ভাল উইকেটে আমরা ভাল শুরু করতে পারিনি, মাঝ সময়ে ভাল জুটিও গড়তে পারিনি। ক্রিকেটাররা যখন মাঠের খেলার বাইরে বিভিন্ন আলোচনায় যোগ দিতে শুরু করেন তখনই শঙ্কা জমে সর্বস্বান্ত হতে আর দেরি নেই বাংলাদেশ দলের। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকের মতো অভিজ্ঞতম তিন ক্রিকেটারই সমালোচকদের, ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের বক্তব্যের কঠোর জবাব দিয়েছেন। অথচ বিশ্বকাপ মঞ্চে তাদের দিকেই তাকিয়ে পুরো দল, পুরো দেশ। কিন্তু মাঠের বাইরের ইস্যুতে যে তারা মাথা ঘামাচ্ছেন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় তাদের বক্তব্যে। এ নিয়ে ৭ বিশ্বকাপের সবই খেলছেন তারা। আর তাদের অনুকরণ করে, তাদের পরামর্শ ও কথায় প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ খেলছেন ৮ ক্রিকেটার। কিন্তু দলের সবচেয়ে সিনিয়র ৩ ক্রিকেটার যারা বিশ্বকাপে অন্য যেকোন দলের সব ক্রিকেটারের চেয়ে অভিজ্ঞ, তাদের এমন কথা চালাচালিতে ড্রেসিং রুম কতখানি অনুপ্রাণিত হবে? ক্রিকেটাররা যে বিশ্বকাপ মঞ্চে গিয়ে মাঠের খেলায় নিজেদের পুরোপুরি মনোনিবেশ করেননি তা স্পষ্টই ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে একের পর এক ব্যর্থতা এবং ক্রিকেটারদের বাজে পারফর্মেন্স। তবু তারা কথা বলেছেন। সবাই তবু তাকিয়ে ছিলেন বুধবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের দিকে। আবুধাবিতে আগে কখনও টি২০ খেলেনি বাংলাদেশ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ফরমেটেও খেলেনি কখনো। প্রথমবার আবুধাবিতে, প্রথমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো কিছু ঘটিয়ে মাহমুদুল্লাহরা সব সমালোচনার জবাব দিয়ে দেবেন এই প্রত্যাশা ছিল সবার। তাছাড়া টস জিতে আত্মবিশ্বাসী মাহমুদুল্লাহ বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ উইকেট। আমরা ভাল একটা সংগ্রহ গড়তে চাই।’ প্রথম ২ ওভারে তার কথার প্রতিফলন দেখিয়েছেন টানা ব্যর্থতার বৃত্তে আবর্তিত লিটন দাস। তিনি জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন মঈন আলীকে প্রথম ওভারেই। তৃতীয় ওভারে লিটন (৮ বলে ৯) ও নাইম শেখ (৭ বলে ৫) জোড়া শিকার হয়েছেন মঈনের। এরপর থেকেই রানের গতি কমেছে। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিবও (৭ বলে ৪) যখন সাজঘরে, তখন দলীয় রান মাত্র ২৬। এই শম্বুক গতির শুরুর সঙ্গে ৩ টপঅর্ডারের বিদায়ে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ ৩২ বলে ৩৭ রানের জুটি গড়েছেন। আগের ম্যাচে দীর্ঘ ব্যর্থতা কাটিয়ে অর্ধশতক হাঁকিয়েই কথার খই ফোটানো মুশফিক ৩০ বল খেলে ৩ চারে ২৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। তারপর আর কেউ দাঁড়াতে পারেননি। মাহমুদুল্লাহ ২৪ বলে ১৯, আফিফ হোসেন ৬ বলে ৫, নুরুল হাসান সোহান ১৮ বলে ১৬, শেখ মেহেদি ১০ বলে ১১ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। এই ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দিয়ে লেগস্পিনার আদিল রশিদদে ২ ছক্কা ও ১ চার হাঁকিয়ে ১৯তম ওভারে নাসুম আহমেদ ১৭ রান তুলে নেন। তিনি ৯ বলে ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন বলেই ৯ উইকেটে ১২৪ রানের ইনিংস পেয়েছে বাংলাদেশ। আর দুর্দান্ত বোলিং করা ইংলিশরা ৫২টি ডট দিয়েছে। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন লিয়াম লিভিংস্টোন (৩ ওভারে ২/১৫) ও টাইমাল মিলস (৪ ওভারে ৩/২৭)। মঈনও ৩ ওভারে ১৮ রানে নেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের ইনিংসটির পরই আসলে খেলার ফলাফল আঁচ করা গেছে। বিশ্বের এক নম্বর টি২০ দলের দারুণ শক্তিশালী ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ সেটি প্রমাণও করেছে। ৩৫ বল বাকি রেখেই ২ উইকেটে ১২৬ রান তুলে ৮ উইকেটের সহজ জয় ছিনিয়ে নেয় গত আসরের রানার্সআপরা। ওপেনার জেসন রয় ৩৮ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৬১ রানে সাজঘরে ফেরেন, শরিফুল ইসলাম বিশ্বকাপে তার প্রথম ম্যাচেই উইকেটটি নেন। টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ব্যাটসম্যান ডেভিড মালান ২৫ বলে ৩ চারে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। আর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে জস বাটলারকে (১৮ বলে ১৮) তুলে নিয়েছিলেন নাসুম। টানা দুই পরাজয়ে আরও বিপর্যস্ত হয়েছে বাংলাদেশ দল। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা নির্বিঘেœ ব্যাট চালিয়েছেন। বাংলাদেশী বোলাররা সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেননি। যদিও ইংলিশদের ৮৫ বলের ইনিংসে ২৫টিই ডট দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা, ব্যাটিংয়ে ভাল করতে পারলে হয়তো দারুণ কিছু করার সুযোগ থাকত। কিন্তু এদিনও বাংলাদেশ দল ব্যর্থতার ভারে ন্যুব্জ, সমালোচনার চাপে বিপর্যস্ত লিটনকে একাদশে নিয়েছে। ইনজুরিতে বিশ্বকাপ শেষ হওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বদলে খেলাতে হয়েছে বাঁহাতি শরিফুলকে। কিন্তু ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা কাটাতে পারেনি দল। তাই আরেকটি হার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুইবার জয়ের অনুপ্রেরণায় জ্বলে উঠতে পারেনি ক্রিকেটে মনোসংযোগ হারানো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অদৃশ্য আয়নায় নিজেদের ব্যর্থতার কঙ্কালসার চেহারা দেখে মাহমুদুল্লাহ তাই ম্যাচশেষে বলেছেন, ‘অবশ্যই আমরা ব্যাটিং নিয়ে হতাশ। ভাল উইকেট ছিল কিন্তু আমরা ভাল শুরুর অভাবে সবকিছু কঠিন করে ফেলেছি। আমরা বড় হিটের চেয়ে দক্ষতাপূর্ণ হিটে অভ্যস্ত। আমাদের সবকিছু পুনঃবিশ্লেষণ করতে হবে এবং ভাল পরিকল্পনা আঁটতে হবে।’ সেই পরিকল্পনা আঁটার জন্য আজ একদিনই সময় আছে বাংলাদেশ দলের। কারণ আগামীকালই শারজাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নামতে হবে। লড়াই হবে টানা দুই পরাজয়ে বিপর্যস্ত দুই দলের। হয়তো সুযোগটা থাকতেও পারে মাহমুদুল্লাহদের। তবে সেজন্য ভুলে যেতে হবে মাঠের বাইরের সবকিছু।
×