ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কনকাশন বদলি নিয়ে এমন বিতর্ক!

প্রকাশিত: ০০:০২, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

কনকাশন বদলি নিয়ে এমন বিতর্ক!

ইনজুরি বা অন্য কারণে কেউ মাঠ ছাড়লে পরিবর্তে রিজার্ভ বেঞ্চের ক্রিকেটার কেবল ফিল্ডিং করতে পারেন, চিরায়ত নিয়ম এটি। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের এক ম্যাচে প্রতিপক্ষ পেসারের বল হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক গলে মাথার পেছনে আঘাত করলে অকালে মৃত্যুবরণ করেন ফিলিপ হিউজ। গোটা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছিল ওই ঘটনা। আরও নিরাপদ হেলমেট উদ্ভাবনে কাজ করে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক আলোচনা-বিশ্লেষণের পর আঘাতজনিত বদলির নতুন নিয়ম চালু করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। ফিজিও-ডাক্তার মাথার আঘাত গুরুতর মনে করলে ম্যাচ রেফারির অনুমতিক্রমে বদলি ক্রিকেটার এখন ব্যাটিং-বোলিং সবই করতে পারেন। যেটিকে বলা হয় কনকাশন সাবস্টিটিউট বা প্রচণ্ড আঘাতজনিত বদলি। এক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে ব্যাটসম্যান, বোলারের পরিবর্তে বোলার, অলরাউন্ডারের পরিবর্তে অলরাউন্ডার অর্থাৎ বদলি ক্রিকেটার একই ধরনের হতে হবে। ভারতের চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে বিষয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। ক্যানবেরায় সিরিজের প্রথম টি২০তে ঘটনাটি ভারতীয় ইনিংসের শেষ ওভারের। অসি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্কের বাউন্সার রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাটের উপরিভাগে লেগে হেলমেটে আঘাত করে। আগুনে গতির বলটি জাদেজার হেলমেটে লেগে উড়ে যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সেখানে ফিল্ডিংয়ে থাকা ময়েসিস হেনরিকস ক্যাচটা ধরতে পারেননি। ওই ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দুটি বাউন্ডারিও হাঁকান জাদেজা। ৫ চার ও ১ ছক্কায় মাত্র ২৩ বলে করেন অপরাজিত ৪৪ রান। ভারতের ইনিংসের শেষে জানা যায়, কনকাশনের শিকার এই বাঁহাতি অলরউন্ডার। অর্থাৎ মাথায় আঘাত লাগায় ধোঁয়াটে দেখছেন তিনি। জাদেজার কনকাশন সাবস্টিটিউট হিসেবে মাঠে নামেন যুবেন্দ্র চাহাল। পরে ৪ ওভারে ২৫ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন এই লেগস্পিনার। অলরাউন্ডার জাদেজার কনকাশন সাব হিসেবে একজন জেনুইন বোলার নামানোর বিষয়টি সহজ ভাবে নিতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। এমনকি ভারতীয় ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জারেকারও বিরাট কোহলিদের সমালোচনা করেন। এদিন ম্যাচ রেফারি ও সাবেক সতীর্থ ডেভিড বুনের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়ে পড়েন ল্যাঙ্গার। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ভন ও সাবেক অসি ক্রিকেটার ও কোচ মুডিও প্রশ্ন তোলেন। তাদের আপত্তি একটাই, আঘাত পাওয়ার পর জাদেজাকে কোনো চিকিৎসক বা ফিজিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে মাঠে যাননি। এরপর আবার জাদেজার পায়ে কিছু একটা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। কিন্তু তার মাথার চোট নিয়ে কোন সমস্যা দেখা যায়নি তখন। তাহলে কনকাশন সাব কেন? স্বয়ং ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে সাবেকরাই বলছেন, আইনের ফাঁক খুঁজে বের করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত। সাবেক ভারতীয় স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝা বলেছেন, সব নিয়মেরই ফাঁক আছে, ভারত তার ফায়দা লুটেছে। সঞ্জয় মাঞ্জারেকার বলেছেন, “আইনের ফাঁক খুঁজে বের করায় আমরা ‘ওস্তাদ’।” তবে সবাই এই দলে নেই। বীরেন্দর শেবাগের মতে, চাহালের বদলি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের এত অভিযোগ-অনুযোগ সর্বোপরি কান্নাকাটির কিছু নেই। গত বছর এ্যাশেজে স্টিভেন স্মিথের কনকাশন বদলি নেমে মার্নাস লাবুশেনও তো রান করেছেন! শেবাগের কথা সত্য। কিন্তু যৌক্তিক কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ আছে। কারণ মাথায় স্টার্কের বলে আঘাত পাওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত দুর্দণ্ড প্রতাপে ব্যাটিং শেষ করেছেন জাদেজা। এ নিয়ে মাঠে তখন খুব একটা গা করেননি ভারতীয় অলরাউন্ডার। কিন্তু ভারত ফিল্ডিংয়ে নামার পর হঠাৎ তাঁকে তুলে নামিয়ে দেয়া হয় চাহালকে। দলের ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হয়, মাথায় আঘাত পাওয়ায় অস্বস্তি বোধ করছেন জাদেজা। পরে অধিনায়ক বিরাট কোহহিলও একই কথা বলেছেন। তবে জাদেজার চোটের ধরন নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন গা করেননি। যথাযথ নিয়ম মেনে ম্যাচ রেফারির অনুমতি পেয়ে গেলে এ নিয়ে প্রশ্নের সুযোগও তো থাকে না! জাদেজা আঘাত পাওয়ার পর তাঁকে কিন্তু মাঠে কোন চিকিৎসক দেখতে যাননি। আর নিয়ম অনুযায়ী এই বদলি ‘লাইক ফর লাইক’ ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ময়েসিস হেনরিকস। জাদেজা বাঁহাতি অলরাউন্ডার ও স্পিনার। চাহাল বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার। শেবাগ বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে সিদ্ধান্তটা সঠিক। জাদেজা খেলার মতো ফিট ছিল না, বল করতে পারত না। শেবাগ ব্যাখ্যা করেন, ‘ভারত সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। সে মাথায় আঘাত পেয়েছিল, কেউ বলতে পারে না আঘাতের পর ‘কনকাশন’ হতে কতক্ষণ সময় লাগে। অনেক সময় ২৪ ঘণ্টা সময়ও লাগে। ভারত সুযোগের সদ্ব্যবহারটা সঠিকভাবেই করেছে।’ শেবাগ মনে করিয়ে দিয়েছেন, কনকাশন বদলি নিয়মের প্রথম সুবিধাভোগী দল অস্ট্রেলিয়া, ‘স্মিথ মাথায় আঘাত পাওয়ার পর তার বদলি হিসেবে লাবুশেন নেমে রান করেছিল। তারা প্রথম সুবিধাভোগী। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের অভিযোগের কিছু নেই।’ অবশ্য অস্ট্রেলিয়ানদের অভিযোগের জায়গাও দেখিয়ে দেন শেবাগ। জাদেজা আঘাত পেয়েও ব্যাট করলেন কীভাবে? উত্তরটা শেবাগ নিজেই দেন, ‘ড্রেসিং রুমে এসে হেলমেট খোলার পর বোঝা যায় অবস্থা কতটা গুরুতর। অনেক সময় মাথা ঘোরে। আমি অনেকবারই হেলমেটে আঘাত পেয়েছি। আমি জানি কেমন লাগে, তবে আমাদের সময় তো এমন নিয়ম ছিল না।’ তবে আরেক সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও বর্তমান ভাষ্যকার মাঞ্জারেকার অবশ্য কোহলিদের ছেড়ে কথা বলেননি, ‘এখন এটার পর কনকাশন বদলির ক্ষেত্রে অনেক ভাবনাচিন্তা করা হবে। পুরো ধারণা নিয়েই চিন্তা করতে হবে। কারণ, আইন তৈরি হয় ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু আমরা সবাই নিজেদের সুবিধার জন্য সেটার ফাঁক বের করায় ‘ওস্তাদ’। ভারত আইনটার ফায়দা নিয়েছে কি না, আমরা জানি না। তবে এখানে আইসিসির আরও ভালভাবে নজর দেয়া উচিত, যাতে একটা দল খুব বড় সুবিধা পেয়ে না যায়।’
×