ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিনেমা শিল্প কি ধ্বংস হয়ে যাবে?

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২৭ অক্টোবর ২০২০

সিনেমা শিল্প কি ধ্বংস হয়ে যাবে?

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘আমি ভাই সিনেমা পাগল মানুষ। নতুন সিনেমা এলে দেখতে মিস করি না। নতুন না থাকলে পুরনো ছবি দেখতেও ছুটে যাই হলে। এই মহামারী করোনা আমার সে সুযোগটুকু কেড়ে নিয়েছে। দীর্ঘ সাত মাস হল বন্ধ থাকায় সিনেমা দেখতে পারি না। টিভির খবরে দেখলাম ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুলবে। ভেবেছিলাম অনেক দিন পর হল খুলছে, নতুন কোন ছবি দেখতে পারব। কিন্তু হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। হলই খুলে নাই, সেখানে সিনেমা দেখার আশা করব কি করে?’- এ কথা বললেন, রাজধানীর মধুমিতা হলে সিনেমা দেখতে আসা যাত্রাবাড়ীর মহিউদ্দিন। ছয় মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ১৬ অক্টোবর থেকে দেশের সব সিনেমা হল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। মানসম্পন্ন ছবির অভাবে খুলছে না মধুমিতা, বলাকার মতো নামকরা সিনেমা হলগুলো। অনেকেই সিনেমা দেখতে এসে বিফল মনোরথে ফিরে যাচ্ছে। মিথ্যে নয় যে, দেশের সিনেমা এখন আইসিইউতে। দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে এই শিল্প। নিম্নমানের ছবি আর প্রদর্শনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বড় পর্দা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দর্শক। এরইমধ্যে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনা। দেশের সিনেমা শিল্পের ভগ্নদশা দুদিনের নয়। দীর্ঘদিন এই শিল্পের উপর চালানো হচ্ছে স্টিম রোলার। কেন এমন দৈন্যদশা? বিশ্বে চলচ্চিত্র প্রতিনিয়ত এগোচ্ছে অথচ আমাদের কেন ভগ্নদশা? প্রশ্ন ঘুরে ফিরে সবার মুখে। একে একে বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল। ১৪শ’ হলের এখন বাকি আছে এক শ পঁচানব্বই। বাকি হল মালিকদের মুখেও বিদায়ের সুর। কোন কোন জেলা শহরে সিনেমা হল পুরোই বিলুপ্ত। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে প্রযোজকরাও সিনেমায় টাকা লগ্নি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। চলচ্চিত্রের এই করুণ পরিণতির জন্য প্রযোজক-পরিচালকরা দায়ী করছেন হল মালিকদের। অন্যদিকে হল মালিকরা অভিযোগ তুলছে মানহীন ছবি থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কেউ বলছে এর দায় সরকারের। আবার চলচ্চিত্র শিল্পীরা ছবি প্রদর্শনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক বলছে, ভাল ছবি হলে হল আরও ভাল হবে, পরিচালক বলছে ছবি ভাল হচ্ছে, হল ভাল নয়। একে অপরের এ রকম কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে দীর্ঘ দশ বছরেরও অধিককাল ধরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের সিনেমা কি এভাবেই শেষ হয়ে যাবে, নাকি সিনেমাকে ধ্বংসের জন্য তৃতীয় কোন অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে? এমনও মন্তব্য করছেন অনেকেই। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে বিদেশী ছবির বিকল্প নেই। তাদের ভাষ্য, চলচ্চিত্রের এই করুণ দশা থেকে মুক্তি পেতে এবং সিনেমা হলগুলোকে সচল রাখতে এই মুহূর্তে দরকার বিদেশী ছবি প্রদর্শন। এর ফলে দেশের নির্মাতারা প্রতিযোগিতার মুখে ভাল ছবি বানানোয় উদ্বুদ্ধ হবে। অনেকের ধারণা বিদেশী সিনেমার অবাধ অনুমতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশীয় সিনেমা। বিদেশী সিনেমা পাওয়া গেলে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে দেশী সিনেমা থেকে। এই বিতর্ক চলছে গত এক দশক ধরে। এর মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে দেশের সিনেমা শিল্প। সিনেমা শিল্প বাঁচানোর লক্ষ্যে সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বিদেশী সিনেমা আমদানির পক্ষে বিপক্ষে বিতর্কের পর শর্ত সাপেক্ষে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, এখনও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ জনকণ্ঠকে বলেন, সিনেমা হল বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে এই কথাটা বহু বছর আগে থেকে আমরা বলে আসছি। এটা চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীরা মানছে না। তারা বলছে চলচ্চিত্র বাঁচলে সিনেমা হল বাঁচবে। আমাদের কথা হচ্ছে দেশের চলচ্চিত্রের বাজার ব্যবস্থা যদি বহাল থাকে, তাহলে চলচ্চিত্র থাকবে। আর যদি বাজার ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে আর কেউ সিনেমা বানাতে আসবে না। তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমরা গতবার পয়লা বৈশাখের আগে হল বন্ধের হুমকি দিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম বিদেশী ছবি আনতে না দিলে আমরা হল বন্ধ করে দেব। তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সীমিত সংখ্যক ছবি আনতে দেয়া হবে, তবে সব সংগঠনের মতামত সাপেক্ষে। প্রযোজক ও পরিচালক সমিতি প্রকাশ্যে মন্ত্রীকে বলেছে, সীমিতসংখ্যক ছবি আনার ক্ষেত্রে আমাদের কোন বাধা নাই। বাকি ছিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। তারা মতামত দিলে এটা কার্যকর হবে। সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, মোট কথা বাইরের ছবি না আনলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না। কারণ লোকাল প্রোডাক্টত নাই। যখন লোকাল প্রোডাক্ট ছিল তখন কিন্তু আমরা সিনেমা হল মালিকরা বাইরের ছবি আনার কথা বলি নাই। এখন প্রযুক্তির অনেক উন্নতর দিকে চলে আসছি। এখন মোবাইলে পৃথিবীর সব ছবি দেখা যায়। সেই ছবি সিনেমা হলে দেখতে দেবেন না, এটা অন্যায়। এটা যে শুধু ব্যবসায়িক সঙ্কট সৃষ্টি করে তাই নয়, এটা সাধারণ দর্শকের ক্ষেত্রেও একটা ডিসপিরিটি। যে ছবি আমি ঘরে বসে টেলিভিশনে দেখতে পারব, সেটা আমি সিনেমা হলে দেখতে পারব না, এটা একজন নাগরিক হিসেবে আমার মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে। এটা নাগরিক-নাগরিকের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এটা কোনমতেই জাতীয় সংবিধান সমর্থন করে না। আমরা বলেছি বছরে আট-দশটা ছবি বাইরে থেকে আনতে দেন। সেটা সেন্সর করেই মুক্তি দিতে দেন। স্টার সিনেপ্লেক্স কি করে বাইরের ছবি চালায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুদীপ্ত বলেন, স্টার সিনেপ্লেক্স বিদেশী ছবি দেখানোর ব্যাপারে অনেক ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গ করছে। বাংলাদেশে কোন হলে সর্বোচ্চ বিশ ভাগ সময় বিদেশী ছবি চালাতে পারবে এবং আশি ভাগ সময় বাংলাদেশী ছবি চালাতে পারবে। কিন্তু তারা এর উল্টোটা করে। গত বছর তারা চারটা ইংরেজী ছবি হলিউড থেকে আনছে। এবং হলিউডের সঙ্গে একই দিনে মুক্তি দিয়েছে। ভারতে অনেক ভাষাভাষী জাতি ও অঞ্চল। অনেক ভাষাতেই চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়। বোম্বে যেমন হিন্দী ছবি হয়, তেমনি মারাঠী ছবিও হয়। মারাঠী ছবিও কিন্তু দুর্দান্ত ব্যবসা করে। পাশাপাশি বাংলার মধ্যে হিন্দী ও বাংলা ছবিও চলে। দক্ষিণ ভারতে তামিল ছবি এখন হিন্দী ছবিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ছবির বাজারটা ওই পর্যায়ে নিয়ে আসছে। আমাদের দেশেও বাইরের ছবি চালানো উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, আমাদের শত্রু দেশ পাকিস্তান। সেখানে ধর্মীয় মৌলবাদীদের আক্রমণে সিনেমা হল একেবারেই শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। সেখানে সিনেপ্লেক্স ছিল মাত্র একটি। এই অবস্থায় ভারতের সঙ্গে যখন একটু ভাল সম্পর্ক দেখা দেয়, তখন তারা ভারতীয় ছবি শর্ত সাপেক্ষে আমদানি শুরু করে সীমিত আকারে। এর ফলে সিনেমা হলে যেভাবে দর্শকের ঢল নামল, তাতে ওখানের ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হয়ে সিনেপ্লেক্স বানানো শুরু করল। শতাধিক সিনেপ্লক্স হয়েছে সেখানে। ‘বজরঙ্গি ভাইজান’র মতো ছবি পাকিস্তান থেকে সতেরো কোটি ইন্ডিয়ান রুপী আয় করেছে। এটা দেখে পাকিস্তানের লোকাল যারা প্রোডিউসার বা স্টুডিও মালিক তারা স্টুডিওর আধুনিকায়ন করেছে। যারা পয়সাওয়ালা লোক তারা প্রোডিউসার হিসেবে ওখানে নতুন ছবি বানানো শুরু করেছে। ইদানিং কয়েকটি ছবি ভারতীয় ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা ব্যবসা করছে। এখন তারা বলছে, এখন আমাদের আর ভারতীয় ছবির দরকার নেই। আমরাও সেই রকম বলছি যে ভারতীয় ছবি আনতে দাও তিন বছরের জন্য। দর্শককে হলে আসতে দাও। দর্শকসহ হলের সংখ্যা বাড়তে দাও। তাহলে বাজারটা সৃষ্টি হবে এবং শক্তিশালী হবে। তখন লোকাল পয়সাওয়ালা যারা তারাও ছবিতে ইনভেস্ট করা শুরু করবে, নতুন ছবির পেছনে তারা পুঁজি বিনিয়োগ করবে। এতে ছবি নির্মাণের সংখ্যা বাড়বে, বিদেশী ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভাল ছবি বানানোর একটা চর্চা শুরু হবে। এখন যেহেতু বাইরের ছবি আসে না, কোন প্রতিযোগিতা নেই, কাজেই ছবি ভাল করার উৎকর্ষতা নেই। বাইরে ছবি আমদানি প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু জনকণ্ঠকে বলেন, বাইরের ছবির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা মনেকরি যে আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মরে যাচ্ছে, এই ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য যদি সরকার আমাদের সিনেমা আমদানির অনুমতি দেয় তাহলে আমরা আছি। যদি বলা হয় ভারতে রিলিজ হওয়ার তিন মাস পরে আমাদের দেশে আমদানি করতে হবে, তাহলে আমি বলব আমাদের দেশীয় টাকাটা অপচয় হবে। আমরা চাই সমসাময়িক রিলিজ। কলকাতাতে রিলিজ হবে একই সঙ্গে বাংলাদেশেও রিলিজ হবে। হিন্দী ছবির ক্ষেত্রেও তাই। আমাদের বছরে ছয়টা ছবি আমদানির সুযোগ দিক সরকার। একটা লিমিট করে দেন সেই লিমিটের মধ্যে ছবি আসুক। কিন্তু ছবিটা আমরা চালাা ওইখানে যেদিন রিলিজ হবে বাংলাদেশেও রিলিজ হবে সেদিন। তা না হলে কিন্তু ছবি চলবে না। অনলাইন, বিভিন্ন চ্যানেলে ছবি চলে আসে। সবারই দেখা হয়ে যায় পরে এই ছবিগুলো হলে গিয়ে কেউ দেখে না। আর আমাদের প্রোডিউসাররা যে টাকাটা দিয়ে ছবি নিয়ে আসবে সেই টাকাটাই অপচয় হবে। খসরু বলেন, ফুটবলের ক্ষেত্রে আবাহনী-মোহামেডান খেলা বা বিপিএল যখন হয়, তখন বিদেশী খেলোয়াড় আসে, তখন কিন্তু আমাদের দেশী খেলোয়াড়রা ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে অনেক ভাল খেলে। সিনেমার ক্ষেত্রে বাধাটা কোথায়? কোন এক সময়ে উত্তম-সূচিত্রা জুটির সিনেমাকেও হার মানিয়েছে রাজ্জাক-সাবানা কিংবা রাজ্জাক-কবরী জুটির সিনেমা। উত্তম-সূচিত্রার ছবি বাদ দিয়ে দর্শক রাজ্জাক-সাবান ছবি দেখত। পুরো মোড়ই ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাহলে আমাদের সমস্যাটা কোথায়? আমিত কোন সমস্যা দেখি না। বর্তমানে সিনেমা সঙ্কট সম্পর্কে খসরু বলেন, হল খুলবে কি করে ছবি তো লাগবে। আমরা গত জুন মাসে হল মালিক সমিতির (তখন নির্বাচন হয়নি) এ্যাডমিনিস্ট্রেটর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ইউসুফ সাহেব কে একটা চিঠি দিলাম যে কিভাবে হল খোলা যায় এবং ছবি পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আপনার ও সরকার সঙ্গে বসতে চাই। সিনেমা হল মালিক, প্রযোজক এবং সরকার মিলে বসতে চাই। উনি আমাদের সেই চিঠির কোন উত্তর এখনও দেননি। আমরা জুন মাসের শেষে আরেকটি রিমান্ডর দিলাম সেখানেও আমরা কোন উত্তর পাইনি। তারপর যথারীতি তথ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন হল খুলল। এখন সিনেমা নেই। আমাদের বক্তব্য ছিল যে, সরকার বলছে পঞ্চাশ শতাংশ দর্শক নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে সিনেমা চালাতে হবে। এখন আমাদের কথা হচ্ছে এই দর্শক দিয়ে সিনেমা হল রান করতে পারবে কিনা। খরচ উঠবে কি না। যদি খরচ ওঠে তার পরে হচ্ছে ছবি রেন্টালের বিষয়। আমাদের ছবির দাম যদি এক কোটি টাকা হয় আমি তো বিশ বা পঁচিশ লাখ টাকায় এ ছবিটা দেব না। সরকার মনে করছে আমি সিনেমা হল খুলে দিলাম আর প্রোডিউসাররা তাদের কোটি কোটি টাকার ছবিগুলো এমনিই দিয়ে দেবে, নট দ্যাট। আমাদের বসার জন্য এই বক্তব্য ছিল যে সিনেমা হলকে রান করানোর জন্য, দর্শক ফিরিয়ে আনার জন্য, করোনার এই ভীতি কাটিয়ে হলমুখী করার জন্য সরকার যেন একটা প্রণোদনা দেয়। চলচ্চিত্র একটা শিল্প। তাহলে করোনাকালীন সময় এখন কোন ছবি নাই। হল খুলেছে। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটা আমাদের অনেক বিগ বাজেটের ছবি আছে। কাজেই সরকার আমাদের একটা ভর্তুকি দিক, আর তা না হলে আমাদের একটা প্রণোদনা দিক। এইটা দিলে আমরা এই তিন পক্ষ মিলে ত্রিপক্ষীয় একটা বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম বড় বড় ছবি দিয়ে অনেক ঘটা করে সিনেমা হলটা চালু করতে পারতাম। সেটা হয়নি। আমাদের কথা শুনেনি কেউ। সরকার, এ্যাডমিনিস্ট্রেটরও শোনে নাই। এখন এই যে ফাঁকা যাচ্ছে। কেউ ছবি দিচ্ছে না। সিনেমা হলগুলো অর্ধেক খুলছে অর্ধেক খুলে নাই। যেগুলো খুলেছে সেগুলো পুরনো ছবি দিয়ে চালাতে গিয়েও বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মোটকথা খুব খারাপের দিকে। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, সিনেমা আছে কিন্তু হল মালিকরা প্রযোজক সমিতির সঙ্গে বসবে। তারা প্রযোজকদের সঙ্গে বসে ঠিক করবে কি ছবি চালাবে। তারা তো প্রযোজক সমিতির সঙ্গে কোন যোগাযোগ করছে না। দুটি ঈদের ছবি জমা হয়ে আছে। সিনেমা কি রাস্তা থেকে আসবে? যারা সিনেমা হলের মালিক তারা প্রযোজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারা বলবে যে আমরা হল খুলছি আপনারা সিনেমা দেন। বিদেশী ছবি সম্পর্কে তিনি বলেন, বাইরের ছবি আনুক তা অসুবিধা কি? তারাত বাইরের ছবি চালাতে পারবে না, এসব ছবি চালাবে তো সিনেপ্লেক্সগুলো। ওদের তো মেশিনই নাই চালানোর। এটা তো প্রযোজকদের ব্যাপার। প্রযোজক-পরিবেশকদের ব্যাপার। আমরাত হুট করে মাঝখান থেকে ঢুকতে পারি না। পরিচালকদের এখানে কোন বিষয় না। চলচ্চিত্র শুধু আর্ট নয় ইন্ডাস্ট্রিও। আধুনিক বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে ক্রিকেট, ফুটবল ও গার্মেন্টস খাতের মতোই প্রণোদনা প্রয়োজন। বিদেশী ছবি একইসঙ্গে মুক্তির ব্যবস্থা করলে সচল হবে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প। তা না হলে আকাশ সংস্কৃতি ও বিদেশী সিনেমার দাপটে হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। সিনেমার সোনালি দিন আবার ফিরে আসুক। নতুন নতুন সিনেমায় বছরজুড়ে সাফল্য বয়ে আনুক। দেশের সব সিনেমা হল আবার দর্শকের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠুক। দৈন্যদশা থেকে মুক্তি লাভ করুক বাংলাদেশের সিনেমা।
×