মোঃ মামুন রশীদ ॥ দীর্ঘ ৭ মাসেরও বেশি সময় পর ক্রিকেটে ফিরে দারুণ সমস্যায় ভুগছিলেন ব্যাটসম্যানরা। চরম ব্যর্থদের তালিকায় জাতীয় দলের শীর্ষ তারকা ব্যাটসম্যানদের নামই আগে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম বারবার হচ্ছিলেন ব্যর্থ। জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়াদের নিয়ে ২ দিনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ৩ ও ১১ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। এরপর ৩ দল নিয়ে হওয়া বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের প্রথম ম্যাচেই ১ রানে সাজঘরে ফেরেন। আশ্চর্যের বিষয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাতি পাওয়া মুশফিকের উইকেট সবচেয়ে অরক্ষিত। কারণ এই ৩ ম্যাচেই তিনি বোল্ড হয়েছেন। সেই মুশফিক অবশ্য আবার তার চিরচেনা রূপে ফিরেছেন। ব্যর্থতা কাটিয়ে প্রথমেই হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি- করেন ১০৩, এরপর ৫২ রানের ইনিংস খেলেন। বুধবার নাজমুল একাদশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের বিপদে হাল ধরে আবার খেলেছেন ৫১ রানের ইনিংস। টানা তিন ম্যাচেই পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন। বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে এরপরও ৩৯.৩ ওভারে ১৬৫ রানে গুটিয়ে যায় নাজমুল একাদশ। কারণ তামিম একাদশের পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বোলিং তা-ব দেখিয়ে ২৬ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। দীর্ঘ সময় সব ধরনের ক্রিকেট কর্মকা- বন্ধ থাকার পর বল মাঠে গড়ানোর পর থেকেই বোলারদের সামনে অভিজ্ঞ ও স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদেরও দেখা গেছে দুর্গতি। টানা খেলার মধ্যে না থাকায় ব্যাটিংয়ে ছন্দ, স্বচ্ছন্দ্য কিংবা মৌলিক টেকনিকগুলোও যেন ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারছিলেন না ব্যাটসম্যানরা। এমনকি যার ডিফেন্স বর্তমানে দেশসেরা, যাকে বলা হয়ে থাকে ব্যাটিং স্তম্ভ এবং বিপর্যয়, দুঃসময়ে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ সেই মুশফিকও নাকাল হয়েছেন। তার এমন বাজে অবস্থা ভাবনা ফেলে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাইকে। তিনি একাই নয়, দেশের সেরা ব্যাটসম্যানরাও টানা ব্যর্থ হচ্ছিলেন। ম্যাচ খেলা শুরু হতেই মুশফিক টানা তিন ইনিংসে ৩, ১১ ও ১ রানে বোল্ড হয়েছেন। নিজের উইকেটকে সুরক্ষিত রাখতে পারেননি। তবে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন মুশফিক, চলমান বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের প্রথম সেঞ্চুরিটাই হাঁকিয়েছেন তিনি। ১০৯ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন ৯ চার, ১ ছক্কায়। চরম ব্যর্থতা থেকে ফিরে আসেন এখন পর্যন্ত আসরের একমাত্র শতক দিয়ে। পরের ম্যাচেই আবার দলের বিপর্যয়ে দারুণ ধৈর্য দেখিয়ে ৯৩ বলে মাত্র ১ চারে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন।
বুধবার মিরপুরে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে ছিল নাজমুল একাদশ। এদিনও মাত্র ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে তারা। মুশফিক তখন হাল ধরেন এবং টানা তৃতীয় ম্যাচে আরেকটি বড় ইনিংস খেলেন। এদিনও তরুণ আফিফের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৯০ রানের জুটি গড়ে দলকে ঘোর বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছেন। গত ম্যাচেও এ দু’জন ১৪৭ রানের জুটি গড়ে দলকে বাঁচিয়েছিলেন। মুশফিক এবার ৭৫ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৫১ রানে সাজঘরে ফিরেছেন সাইফউদ্দিনের বলে। এরপরও বৃষ্টির কারণে ৪১ ওভারের ম্যাচে নাজমুল একাদশ ৩৯.৩ ওভারেই গুটিয়ে যায় ১৬৫ রানে। এর পেছনে মূলত জাতীয় দলের স্বল্প পরিসরে অপরিহার্য পেসার সাইফউদ্দিনের বিধ্বংসী বোলিংটাই দায়ী। বৃষ্টি শেষে ঝড় তোলেন তিনি, ৮.৩ ওভারে ১ মেডেনসহ মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। চলতি আসরে এটিই কোন বোলারের ম্যাচসেরা নৈপুণ্য। ৪ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে এখন তিনি আসরের শীর্ষ উইকেটশিকারী। পেছনে ফেলেছেন সমান ম্যাচে ১০ উইকেট শিকারী আরেক পেসার রুবেলকে।