ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির চাহিদা বেড়েছে বিনিয়োগকারীরা ফিরে পেয়েছেন মূলধন

ওষুধ খাতের ব্যবসা রমরমা

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ওষুধ খাতের ব্যবসা রমরমা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোভিড-১৯’র প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। যেটির আঁচ থেকে মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশও। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রায় সব খাতের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও হাতেগোনা কয়েকটি খাত ব্যতিক্রম, যার অন্যতম হলো ওষুধ খাত। অত্যাবশ্যকীয় ও জীবন রক্ষাকারী পণ্য হিসেবে অতিমারীর এই সময়ে ওষুধের চাহিদা তো কমেইনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। এতে ওষুধ খাতের ব্যবসাও বেড়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরেও এই ব্যবসার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘদিন পরে লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীরা মূলধন ফিরে পেয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ চার ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড ও একমি ল্যাবরেটরিজ গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে ১২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা বেশি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রেনাটা ছাড়া বাকিগুলো জুন ক্লোজিং হওয়ার কারণে আর্থিক প্রতিবেদন এখনও প্রস্তুত হয়নি। যার কারণে সার্বিকভাবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ ব্যবসা মার্চ মাস পর্যন্তই ধরতে হবে। তবে কোভিড-১৯’র কারণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং আগের তুলনায় ওষুধ ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসাও ভাল জমেছে। জানা গেছে, দেশের ওষুধ খাতের শীর্ষ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস নয় মাসে ৪ হাজার ২৩ কোটি টাকা বিক্রি করেছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৩ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে দেশের বাজারে ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি বিদেশে ১২৪ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি করেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী সমন্বিত মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৪২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের হিসাব ও অর্থ বিভাগের প্রধান মোঃ কবীর রেজা বলেন, নোভেল করোনাভাইরাসের মতো এই অতিমারীর সময়ে জরুরী সেবা হিসেবে আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে চালু রয়েছে। এ কারণে আমাদের ব্যবসায় তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। তবে এপ্রিল ও মে এই দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০০ কোটি টাকার মতো কম বিক্রি হয়েছে। এ মাসে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারেই ব্যবসা হচ্ছে। ফলে বছর শেষে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করছি। বাংলাদেশের দুই শেয়ারবাজার এবং লন্ডন স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবসাও ছিল ভাল। গত তিন প্রান্তিকে কোম্পানির টার্নওভার ছিল ১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। ব্যয় বাদ দিয়ে মুনাফার পরিমাণ ২৬২ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা। করোনার ওষুধ তৈরি এবং টিকা আনার খবরে গত তিন মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে একশ শতাংশের বেশি। জুলাই মাসের মাঝামাঝি শেয়ারটির দর ছিল ৬৫.২০ টাকা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে কোম্পানিটির দর ১২৮ টাকায় পৌঁছেছিল। ওষুধ খাতের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি রেনাটা লিমিটেডের ৯ মাসে ১ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা বিক্রি হয়েছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫৪ কোটি টাকা চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন ও বিদেশে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী সমন্বিত মুনাফা হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ২৫৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। একমি ল্যাবরেটরিজের ৯ মাসে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বিক্রি হয়েছে। যেখানে এর আগের বছরে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। যা এর আগের বছরে ছিল ১১৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এসিআই লিমিটেড গত নয় মাসে ৫ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা বিক্রি করেছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ১২ শতাংশ। ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও পরিচালন ও আর্থিক ব্যয় বাড়ার কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ১২০ কোটি টাকা কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৪১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে লোকসান বেড়েছে প্রায় ১৯৩ শতাংশ। করোনাকালে কোম্পানির স্যাভলনের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। শেয়ারবাজারেও এটির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত তিন মাসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১শ’ টাকার বেশি। কোভিড-১৯-এর কারণে দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে থেকে দেশে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার। লেনদেন চালুর পর প্রথম সপ্তাহে পুঁজিবাজারের মোট লেনদেনের ৫৩ শতাংশই ছিল ওষুধ কোম্পানির। এদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানির রেকিট বেনকিজারের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকালে ব্যবসা ছিল রমরমা। কোম্পানিটির উৎপাদিত পণ্য ডেটল, নাইজল, ফিনিস, মরটিন ও হারপিকের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। বেশিরভাগ পণ্যেই এক পর্যায়ে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। সর্বশেষ জুন মাসের অর্ধবার্ষিকীতে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫৭.৫১ টাকা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন বিবেচনা করে পরিচালনা পর্ষদ ১২৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত অন্যান্য কোম্পানিও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশক উৎপাদন করায় অতিমারীর সময়ে ভাল ব্যবসা করেছে। যার ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় শেয়ারবাজার ৬৬দিন বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে শেয়ারবাজার খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ও চাহিদা বাড়তে থাকে। এমনটি টানা কয়েক সপ্তাহেই লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে ওষুধ খাতটি। এই খাতে বেক্সিমকো ফার্মার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যবসা হয়েছে।
×