ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চামড়া দাম না থাকায় দিনাজপুরে ব্যবসায়ীরা দুষারোপ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ৩ আগস্ট ২০২০

চামড়া দাম না থাকায় দিনাজপুরে ব্যবসায়ীরা দুষারোপ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। দুই থেকে আড়াইশ টাকা দামে চামড়া কিনছে আড়তদাররা। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গড়ে ৫শ’ টাকা দরে পশুর চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন। অনেকেই আবার স্থানীয় মাদ্রসাগুলোতে বিনা মূল্যে দিলেও, তারাও নিতে চাইছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ করে দেওয়ায়, এবার চামড়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। দেশের অন্যতম চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগর চামড়াপট্টিতে সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কারণ আড়তদাররা দুই থেকে আড়াইশ টাকার বেশি দাম বলছেন না। মৌসুমি ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া এসেছেন কাহারোল উপজেলার দশ মাইল মোড় থেকে। তিনি জানান, প্রায় তিনশ’-এর মত চামড়া কিনেছেন। গড়ে ৫০০ টাকা দাম পড়েছে। আড়তদাররা বলছেন, দুই থেকে আড়াইশ’ টাকার বেশি দামে তারা চামড়া কিনতে পারবেন না। শহরের বাহাদুর বাজার এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী শরিফুল হক জানান, তিনশ’ চামড়া কিনেছেন গড়ে ৪০০ টাকা দরে। কিন্তু আড়তদাররা বলছেন ২০০ টাকার বেশি দামে কেনা যাবে না। ফলে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন তিনি। বীরগঞ্জ উপজেলার গড়েয়াহাট থেকে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী মকসেদ আলী বলেছেন, তিনি ৭০০ বেশি চামড়া কিনেছেন ৫০০ টাকারও বেশি দরে। আড়তদাররা সর্বোচ্চ আড়াইশ’ টাকার বেশি দাম বলছেন না। এ দামে বিক্রি করলে পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে হবে তাকে। রামনগর চামড়াপট্টির আড়তদার আবুল খায়ের জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গরুর চামড়া দর বেঁধে দিয়েছে প্রতিফিট ২২-২৪ টাকা। একটা গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ২০ ফুট হওয়ায় দাম পড়ে মাত্র চার থেকে সাড়ে চারশ’ টাকা। একটা চামড়া লবণ দেওয়া, লেবার খরচসহ দেড় থেকে দুইশ’ টাকা পড়ে। সে কারণে তাদের পক্ষে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকার বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব নয়। এদিকে চামড়ার ন্যায্য মূল্য এবং খদ্দের না পাওয়ায় অনেকেই চামড়া ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন। দিনাজপুর শহরের লালবাগ মাদ্রাসার ছোট হুজুর মাওলানা রিয়াজুল আলী জানান, নাম মাত্র মূল্যে অনেকে প্রতি বছর মাদ্রাসায় চামড়া দান করেন। এবার বেশির ভাগ মানুষ দাম না পেয়ে বিনে পয়সায় চামড়া দান করেছেন। তারপরও তারা ৩-৪শ’ টাকা দরে কিছু চামড়া কিনেছেন। কিন্তু এবার চামড়ার দাম সর্বনি¤œ পর্যায়ে হওয়ায়, কেনা চামড়া নিয়ে তারাও বিপদে পড়েছেন। এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলার চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি জুলফিকার আলী স্বপন-এর অভিযোগ, ৩৩ বছরের চামড়া ব্যবসার জীবনে দাম এত কম কোনও দিন দেখেননি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দরেই চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিদেশে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। তবে চামড়া পরিষ্কার করে লবণ দিয়ে রাখার পর সিদ্ধ করে নিলে, সেই চামড়ার চাহিদা বিদেশে অনেক বেশি।
×