ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দাম না পেয়ে নদীতে চামড়া ফেললো ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৩ আগস্ট ২০২০

দাম না পেয়ে নদীতে চামড়া ফেললো ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে এবার কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির চেয়েও কম দরে। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম ২০-২৯ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করেছিলো সরকার। সেই দামও পাওয়া যায়নি চামড়া বিক্রির সময়। ছাগলের চামড়া রাজশাহীতে ৫ থেকে ৩০ এবং গরুর চামড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের দিন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অবশ্য একটু বেশি দামে চামড়া কিনেছিলেন। তবে তারা ধরা খেয়েছেন। আড়তে বিক্রি করতে না পেরে সেই চামড়া পদ্মা নদীতেও ফেলে দিতে দেখা গেছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তারাই ঠিকমতো বাজার বুঝতে পারেননি। একদিনের জন্য চামড়া কিনতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও বোঝেননি। ফলে তাদের লোকসান বেশি। একজন মৌসুমি ব্যবসায়ীও লাভ করতে পারবেন না। ঈদের দিন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামেও চামড়া কিনছেন না। চামড়া দেখে তারা নিজেরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছিলেন। ক্রেতা-বিক্রেতার কোন দরকষাকষি দেখা যায়নি। একরকম নিজেদের নির্ধারণ করে দেয়া দামেই চামড়া কিনছিলেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া নিতে তাদের খুব একটা আগ্রহও দেখা যায়নি। মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়া ৫০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে দেখা গেছে। আর বড় আকারের গরুর চামড়ার দাম দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দেয়া হয়েছে। ছাগলের চামড়ার দাম দেয়া হয়েছে ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কুমরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফরসহ সাতজন ব্যক্তি একসঙ্গে একটি গরু কোরবানি দেন। আবু জাফর বলেন, আমাদের গরুটার দাম ছিল ৯০ হাজার টাকা। মাংস হয়েছে চারমণ। চামড়ার দাম পেয়েছি ২০০ টাকা। এ দামেও চামড়া কিনছিলেন না ব্যবসায়ী। একরকম জোর করেই তাকে চামড়াটা দেয়া হয়েছে। আমাদের এলাকায় পাঁচ টাকাতেও খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে। এদিকে দরদামে না হলে প্রকৃত ব্যবসায়ী চলে যাওয়ার পর কোথাও কোথাও সামান্য কিছু দাম দেশি দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে দেখা গেছে। কিন্তু সেসব চামড়া আর কেনা দামেও তারা বিক্রি করতে পারেননি। এতে তারা লোকসানে পড়েন। ঈদের পরদিন রবিবার সকালে রাজশাহী নগরীর আই-বাঁধ এলাকায় কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ীকে প্রায় দেড় হাজার গরু-ছাগলের চামড়া পদ্মা নদীতে ফেলে দিতে দেখা গেছে। এসব ব্যবসায়ীরা জানান, তারা রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে চামড়া কিনেছেন। তারপর বিক্রির জন্য চামড়া রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায় আড়তে নিয়ে যান। কিন্তু তারা যে দামে কিনেছেন তার তিনভাগের এক ভাগও দাম বলা হয়নি। এসব চামড়া তাদের অন্য কোথাও বিক্রি করতে বলা হয়। কিন্তু তারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, কোথাও চামড়ার চাহিদা নেই। তারা যে দামে চামড়া কিনেছেন তার অর্ধেক দামও পাবার সম্ভাবনা নেই। তাই ক্ষোভে তারা এসব চামড়া নদীতে ফেলে দিচ্ছেন। রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, আমাদের বকেয়া টাকা পড়ে আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। করোনার কারণে হাতেও টাকা নেই। সরকার কমিয়ে দাম নির্ধারণ করে দিলেও প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে সেই দামেও চামড়া কেনার টাকা নেই। ফলে কম দামে তারা চামড়া কিনেছেন। তিনি জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিজেরা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কিংবা ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠান না। তারা কেনার পর সেই চামড়া আবার প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছেই বিক্রি করেন। কিন্তু এবার তাদের কাছ থেকে চামড়া কেনার আগ্রহ নেই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের। এ কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
×