ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ আফসারুল আলম মামুন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কবে প্রাণবন্ত হবে ক্যাম্পাস?

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২৬ জুলাই ২০২০

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কবে প্রাণবন্ত হবে ক্যাম্পাস?

দেশের সকল ক্যাম্পাসের দোকানগুলোর সঙ্গে সেই শিক্ষার্থীদের এক নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান। ক্যাম্পাসের প্রথম দিন থেকেই দোকানগুলোর সঙ্গে আত্মার এক বন্ধন তৈরি হয়। আর সেই দোকানের মালিক এবং কর্মচারীই যেন ক্যাম্পাসের লাইফের সবচেয়ে বড় আত্মীয় হয়ে উঠে। তারই পরিক্রমায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও ক্যাম্পাসের আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ের মতো ক্যাম্পাস এলাকায় গড়ে ওঠা দোকানগুলোও প্রাণের মণি কোটায় অবস্থান করে। জাহাঙ্গীরনগরে যেমন বটতলা, ঢাকার টিএসসি তেমনি আমাদের হল রোড। এই হল রোড খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এক আবেগের নাম। শিক্ষার্থীদের হাসি কান্না, আড্ডা, বিনোদন সবই যেন এই হল রোডকে ঘিরে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রোডে প্রায় ৮০ টি দোকান। দিন কি রাত, ক্যাম্পাস খোলা থাকা অবস্থায় এই রোডের দোকানগুলো যেন এক একটি জীবন নাটকের মঞ্চ। সন্ধ্যা হতে না হতেই এখনকার দোকানগুলোর সামনে জমে জমে উঠে হাসি কান্না সংমিশ্রণে আড্ডার আসর। কেউবা গিটার হাতে তুলে আনে জীবনের গল্প। গিটারের টুংটাং শব্দের মাঝে হাসি কান্নার সুর মিশে যায়। সেই সুরের মূর্ছনার সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলায় আড্ডায় উপস্থিত সকল সদস্য। সেই সময়ের সেই গানগুলো যেন গায়কের গানকেও হার মানায়। কোন দোকানের সামনে গেলে দেখা যাবে গম্ভীর এক পরিবেশ বিরাজমান। কেননা এখানে চলছে গ্রুপ মিটিং। আগামী সপ্তাহের সকল পরীক্ষা বা এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে জরুরী আলোচনা। সবাই যার যার মতো মতামত প্রকাশ করছে। নাগরদোলা নামক দোকানদার সামনে স্থাপত্য পড়ুয়া ভাইদের আড্ডা। কেননা স্থাপত্যের সকল যন্ত্রপাতির এটি হলো সবচেয়ে নির্ভর যোগ্য দোকান। কোন দোকানে হয়তোবা কোন এক সিনিয়র খাওয়া-দাওয়া করছে এমন সময় ঘটে জুনিয়রের হামলা। বড় ভাইকে ফতুর না করলে ছোট ভাইয়ের মন যেন কিছুতেই ভরে নাহ। বড় ভাইটি কেউ মনের বিরুদ্ধে খাবারের বিলটি পরিশোধ করতে হয়। লিটন জুস কর্ণার, সুফিয়ান ভাইয়ের দোকান, খান জাহান আলি রেস্তোরাঁ, সিদ্দিক ফাস্ট ফুড, রাজা হোটেল, বুনোহাঁস যেন এক একটি ছাত্রের কাছে প্রাণের নাম। খাজা হলের পকেট গেইটে অবস্থান সুফিয়ান স্টোরের। যার মালিক সুফিয়ান ভাই। এই ভাইয়ের দোকান সারারাত খোলা থাকে। ক্যাম্পাসে প্রচলিত একটা কথা আছে সুফিয়ান ভাইয়ের দোকানে যা নাই আসলেই তা তোমার জীবনে প্রয়োজন নাই। স্বাভাবিকভাবেই সেই দোকানে এমন কোন জিনিস নেই যা পাওয়া যায় না। ক্যাম্পাসের কোন বড় ভাই হঠাৎ কোন কাজে ভার্সিটিতে আসলে সুফিয়ান ভাইয়ের সঙ্গে দেখা না করার ইতিহাস খুবই কম। ক্যাম্পাসের ভিতরে হাদি চত্বরের ঠিক সামনের রাস্তা ধরে কয়েক মিটার গেলেই পাওয়া যাবে তপন দার দোকান। ভার্সিটির প্রতিটি পদক্ষেপের সাক্ষী এই তপনদা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরনো দোকান এটি। বিশ্বিবদ্যায়ের জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি দাঁড়িয়ে আছে তপনদার দোকান। তার দোকানে পাওয়া যায় হরেক রকম চা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃডিসিপ্লিন খেলা থেকে বিভিন্ন সংগঠনের প্রোগ্রাম শেষে সবাই একসঙ্গে চলে আসে তপদার দোকানে। তার আদা চা বা লেবু দিয়েই শুরু আড্ডার আলোচনা। এছাড়া স্বাভাবিকভাবেই বিকালে তার দোকানের চা ছাড়া অনেক ছাত্রের বিকালই কাটে নাহ। এছাড়া ক্যাফেটারিয়ার নুডলস টা আর গরম খিচুড়ির স্বাদ কখনও ভুলবার নয়। এমনই হাজারো নানা গল্পে মুখরিত থাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশ। স্বাভাবিক সময়ে ক্যাম্পাস কখনও ঘুমায় নাহ। ভোর সকাল থেকে মধ্যরাত হাজারো গল্পের উপাখ্যান তৈরি করা এই ক্যাম্পাসে। কিন্তু বিশ্ব মহামারীর ফলে সেই ক্যাম্পাস আজ শূন্য। হুমায়ূন আহমেদের মতো বলতে হলে কোথায় কেউ নেই। করোনা আতঙ্কে সবাই যেন আজ অবরুদ্ধ। হল রোডের দোকানগুলো আজ বন্ধ। খুলনার স্থানীয় বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারলাম হল রোডের বেশিরভাগ দোকানদার আজ নিঃস্ব। কোন ধরনের বিক্রি না থাকায় আজ তারা চোখে অন্ধকার দেখছে। চক্ষু লজ্জার ভয়ে সরকারী বা বেসরকারী কোন ত্রাণ সহায়তাও নিতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে আর দোকান মালিকরা আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তা নিয়ে সকলেই সন্দিহান। আবারও প্রাণবন্ত হবে ক্যাম্পাস।
×