অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে আসন্ন কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদে ব্যবসায়ীদের আর্থিক সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে চামড়া নিয়ে কোন ধরনের কারসাজি সহ্য করা হবে না। কাঁচা চামড়ার দাম কমানোর লক্ষ্যে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার। এ বছর লবণযুক্ত ও লবণহীন কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার।
সোমবার চামড়া শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় এসব বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আসন্ন কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ, মজুদ, চামড়ার ন্যায্যদাম এবং লবণের পরিস্থিতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন-প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব কে এম আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ শাহেদ আলী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রমেশ বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, চামড়া শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাভের কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেবে সরকার। এতে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন।
সভায় জানানো হয়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মসজিদের ইমাম, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী, চামড়া ছাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সভায় তথ্য মন্ত্রণালয় ও লেদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঈদ-উল-আজহার কয়েকদিন আগে থেকে টেলিভিশনে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ট্যানারি শিল্পের জন্য বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ করতে হবে। তিনি বলেন, হাজারীবাগে ট্যানারি মালিকদের জমি হতে রাজউকের রেড জোন প্রত্যাহার করা হলে মালিকদের ঋণ পেতে সুবিধা হবে। ট্যানারি মালিকদের জন্য ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে কোরবানির চামড়ার পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সভায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী, চামড়া সংরক্ষণে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব করেন। কওমি মাদ্রাসাগুলো বহুদিন ধরে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত এবং এ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিলে তারা আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। শিল্প প্রতিমন্ত্রী হাজারীবাগে অবস্থিত ট্যানারি মালিকদের জমিতে রেড জোন ঘোষণা দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য রাজউকের প্রতি আহ্বান জানান। শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ট্যানারি মালিকরা যাতে ঋণ পেতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপির কাজ দ্রুত সমাপ্ত করতে বিসিককে নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার সঠিক মূল্য নির্ধারণ এবং ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
