ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে বুরুন্ডির হার ৩-১ গোলে

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শিরোপা অক্ষুণ্ণ ফিলিস্তিনের

প্রকাশিত: ১২:৪২, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শিরোপা অক্ষুণ্ণ ফিলিস্তিনের

রুমেল খান ॥ রেফারি মিজানুর রহমান খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই দুই দলের একাধিক ফুটবলার মাটিতে বসে পড়লেন হাঁটু গেড়ে। কেউ জয়ের চিত্তসুখে, কেউ হারের হতাশায়। একটু পরেই জয়ী দলের কোচ মাকরাম দাবুবকে চ্যাংদোলা করে শূন্যে ছুড়ে শিরোপা জয়ের আনন্দ উদ্যাপন করল ফিলিস্তিনের ফুটবলাররা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা জিতল তারা। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা অনায়াসেই হারায় বুরুন্ডিকে ৩-১ গোলে। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়েছিল। এ নিয়ে টানা দু’বার চ্যাম্পিয়ন হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ফিলিস্তিন। আগের আসরে (২০১৮) ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ (০-০) গোলে তাজিকিস্তানকে হারিয়ে অভিষেকেই শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল তারা। তাদের আগে অবশ্য মালয়েশিয়ার ভিন্ন দুটি দল এই আসরের শিরোপা জিতেছিল। প্রথম আসরে (১৯৯৬-৯৭) মালয়েশিয়া লাল দল এবং তৃতীয় আসরে মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২২ জাতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তবে ২০১৮ ও ২০২০ আসরে দু’বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফিলিস্তিনের জাতীয় দল। ম্যাচশেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার ফাইনাল ম্যাচটি ছিল এক অর্থে এশিয়া আর আফ্রিকার লড়াই। একদিকে ‘লায়ন্স অব ক্যানান’ ফিলিস্তিন। অন্যদিকে ‘দ্য সোয়ালোস’ খ্যাত বুরুন্ডি। আগের আসরে শিরোপা জেতা ফিলিস্তিন আত্মবিশ্বাসী ছিল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে। অন্যদিকে অফ্রিকার দল বুরুন্ডিও স্বপ্ন দেখেছিল প্রথমবারের মতো এই আসরে অংশ নিয়ে শিরোপা জিতে ফিলিস্তিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইতিহাস রচনা করতে। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ নেয় গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ফিলিস্তিন খেলেছিল ফাইনালে যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দল ছিল তারা। ম্যাচের শুরু থেকেই পরিকল্পিত-গোছানো ফুটবল খেলতে থাকে তারা। ৩ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় তারা। দলীয় অধিনায়ক সামিহ্ মারাবার জোগান দেয়া বলে বাঁপ্রান্ত থেকে মিডফিল্ডার মোহামেদ দারউইশের পাসে চমৎকারভাবে ফিনিশ করেন ফরোয়ার্ড খালেদ সালেম (১-০)। ১০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ১০৬ র‌্যাঙ্কিংধারী মিডফিল্ডার মাহমুদ আবু ওয়ারদার কর্নার থেকে মুসা সালিমের শট ফিরিয়ে দেন বুরুন্ডি গোলরক্ষক এ্যামি ফালেস। ফিরতি বলে ডিফেন্ডার ইওয়াই ইয়াজানের পাসে জটলা থেকে গোল করেন সামিহ্ মারাবা (২-০)। ২৬ মিনিট আবারও গোল ফিলিস্তিনের। বক্স থেকে ফরোয়ার্ড খালেদ সালেমের শট বাঁ পোস্টে লেগে ফেরত আসে। সেই বলে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফরোয়ার্ড লেইথ খারউব (৩-০)। ৩৯ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে বুরুন্ডির ডিফেন্ডার জাবনজিয়া ব্লানচারডের বাড়িয়ে দেয়া বলে বক্স থেকে শট নেন জসপিন। কিন্তু ফিলিস্তিনের শক্ত রক্ষণ ভাঙ্গতে ব্যর্থ হয়। আগের ম্যাচগুলোতে এই দুই ফুটবলারের দারুণ কম্বিনেশনেই বেশ ক’টি গোল আদায় করে নিয়েছিল আফ্রিকার দলটি। কিন্তু শুক্রবার সতর্ক ফিলিস্তিন ম্যাচের শুরু থেকেই তাদের কঠিনভাবে ‘মার্ক’ করে খেলে। ফলে বুরুন্ডির আক্রমণের উৎসই বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমার্ধ পিছিয়ে থেকেই বিশ্রামে যায় তারা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে কৌশল বদলে খেলতে নামে বুরুন্ডি। সফলতাও আসে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ম্যাচের তখন ৬০ মিনিট। এনশিমিরিমানার কর্নারে বল নিয়ে সতীর্থর উদ্দেশে পাস দেন ব্লানচার্ড। বল পেয়ে ছোট বক্স থেকে ডান পায়ের শটে ফিলিস্তিনের জালে বল পাঠান ডিফেন্ডার ডিকুয়ামানা আসমান (১-৩)। ফাইনাল ম্যাচের আগে পর্যন্ত একমাত্র গোল হজম না করা দল ছিল ফিলিস্তিন। তাদের সেই গোলপোস্ট অক্ষত রাখার গৌরবটি ধরে রাখতে দেয়নি বুরুন্ডি। এটাই হয়তো তাদের কিঞ্চিৎ সান্ত¡না। শেষ পর্যন্ত অনায়াসেই জয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে ফিলিস্তিন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ফিলিস্তিনের চেয়ে ৪৫ ধাপ পিছিয়ে থাকা বুরুন্ডি র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও এই আসরে ফিলিস্তিনের চেয়ে ঢের ভাল খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। টুর্নামেন্টে তারাই সবচেয়ে বেশি গোল করেছে ১১টি। ফিলিস্তিন করেছে ৮ গোল। অবশ্য এই আসর শুরুর আগেই ফুটবলবোদ্ধারা অনুমান করেছিলেন ফাইনাল খেলবে ফিলিস্তিন-বুরুন্ডিই। তাদের অনুমানই সত্যি হয়েছে। ফিলিস্তিন এবারের আসরে গ্রুপপর্বে (‘এ’) স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ওঠে। সেমিফাইনালে অপর আফ্রিকান দেশ সিশেলসকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখায়। পক্ষান্তরে ‘বি’ গ্রুপে মরিশাসকে ৪-১ গোলে এবং সিশেলসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে বুরুন্ডি। সেখানে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখায়।
×