ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যারিয়ার ॥ স্বপ্ন যখন কৃষি প্রকৌশলী

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

ক্যারিয়ার ॥ স্বপ্ন যখন কৃষি প্রকৌশলী

এবার প্রথমবারের মতো আগামী ৩০ নবেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতিতে কৃষিপ্রধান ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। কৃষিপ্রধান ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় হলোÑ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা অনেকেই মনে করি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু কৃষি বিষয় পড়ানো হয়। মূলত কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় এখানে পড়ানো হয়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কৃষি অনুষদ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, ভেটেরিনারি অনুষদ, পশুপালন অনুষদ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ, কৃষি অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ডিগ্রী প্রদান করা হয়। বর্তমান প্রযুক্তির এই যুগে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও কৃষি ক্ষেত্রে এখনও যুগোপযোগী ছোঁয়া লাগেনি। কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া আনতে প্রয়োজন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূূমিকা পালন করে আসছে কৃষি প্রকৌশলীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি প্রকৌশলী ডিগ্রী প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ সালে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই অনুষদ থেকে বিএসসি এগ্রি. ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিএসসি ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ২টি ডিগ্রী দেয়া হয়। আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের একজন ছাত্র হিসেবে এখানকার কৃষি প্রকৌশল বিষয়ে কি পড়ানো হয় ও তাদের চাকরির ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরছি। যা পড়ানো হয় ৮টি সেমিস্টারের অধীনে ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি এগ্রি. ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়া রয়েছে এমএস ও পিএইচডি করার সুযোগ। ৮টি সেমিস্টারে যা যা পড়ানো হয়- সেমিস্টার ১ : ম্যাথমেটিক্স-১, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ, ইঞ্জিনিয়ারিং শপ, সয়েল সায়েন্স। সেমিস্টার ২ : ম্যাথমেটিক্স ২, কম্পিউটার সায়েন্স, ওয়ার্কসপ টেকনোলজি, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং, এগ্রোনমি, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সার্ভেইং। সেমিস্টার ৩ : ম্যাথমেটিক্স ৩, এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক্স, ফুড সায়েন্স, ফ্লুইড মেকানিক্স, থার্মোডায়নামিক্স, ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস, কম্পিউটার এ্যাপ্লিকেশন। সেমিস্টার ৪ : ইঞ্জিনিয়ারি মেকানিক্স, হাইড্রোলিক্স, হিট ইঞ্জিন, স্ট্রেন্থ অফ ম্যাটারিয়ালস, ম্যাটারিয়াল এ্যান্ড কস্ট এসস্টিম্যাশন, রুরাল সোসিওলোজি, হর্টিকালচার, স্ট্যাটিসটিক্স। সেমিস্টার ৫ : এগ্রিকালচারাল পাওয়ার, ইলেকট্রিক্যাল মেশিনারি, ইরিগেশন এ্যান্ড ড্রেনেজ ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্রাইন্ড ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং, সয়েল মেকানিক্স, কনক্রিট স্ট্রাকচার ডিজাইন। সেমিস্টার ৬ : এগ্রিকালচারাল মেশিনারি, রুরাল ইলেট্রিফিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভাইরনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন এডুকেশন, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স/ফার্ম পাওয়ার মেশিনারি/ফার্ম স্ক্রাকচার/ ইরিগেশন এ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট। সেমিস্টার ৭ : এগ্রিকালচারাল ম্যাকানাইসেশন, পাম্পস এ্যান্ড ওয়েলস, সয়েল এ্যান্ড ওয়াটার কনজারভেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স/ফার্ম পাওয়ার মেশিনারি/ফার্ম স্ক্রাকচার/ইরিগেশন এ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট। সেমিস্টার ৮ : ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, অন ফার্ম ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স/ফার্ম পাওয়ার মেশিনারি/ফার্ম স্ক্রাকচার/ইরিগেশন এ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ল্যাব ও ওয়ার্কসপ : শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে তত্ত্বীয় জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে আধুনিক ল্যাবরেটরি ও ওয়ার্কসপ। কংক্রিট এবং ম্যাটেরিয়াল টেস্টিং ল্যাবরেটরি, হাইড্রলিক ল্যাবরেটরি, ইলেকট্রিক ল্যাব, হিট ইঞ্জিন ল্যাব, পোস্ট হারভেস্ট লস্ রিডাকশন ইনোভেশন ল্যাব। এছাড়া রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ। ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ এ রয়েছে ব্ল্যাকস্মিথ শপ, ওয়েলডিং শপ, কার্পেনট্রি শপ। এসকল ল্যাবরেটরি ও ওয়ার্কসপে কাজ করে শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করে তাদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। চাকরির ক্ষেত্র কৃষি প্রযুক্তিকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েটরা দেশের বিভিন্ন কৃষি সেক্টরগুলোতে তাদের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার এক্সটেনশন (ডিএই), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি, আরডিএ। এছাড়া জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং, মাহবুব ইঞ্জিনিয়ারিং, এসিআই, সিনজেনটা, কাজী ফার্মসসহ সকল কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ থাকছে। অন্যদিকে সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকে চাকরি এবং ভাল রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থাকছে। একটু ভাল সিজিপিএ থাকলে খুব সহজেই ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপসহ পড়াশোনা ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগও থাকছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন খরচ যেমন কমে যায়, তেমনি ফসলের নিবিরতাও বেড়ে যায়। যন্ত্র ব্যবহারে বীজ বোপনে বীজ প্রায় ২০ ভাগ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সার সাশ্রয় হয় প্রায় ১৫-২০ ভাগ। অন্যদিকে ফসলের উৎপাদনও প্রায় ১২-৩০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। দেশের কৃষিকে ত্বরান্বিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সল্প সময়ে অল্প জমিতে বেশি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে কৃষি প্রকৌশলীরা। বিদেশ থেকে কৃষি প্রযুক্তি না এনে দেশের কৃষি প্রকৌশলীদের সুযোগ দিয়ে দেশীয় উন্নত কৃষি প্রযুক্তি তৈরিতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। এতে করে কৃষকেরা স্বল্প দামে প্রযুক্তি পেয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হবে এবং কৃষি পাবে প্রযুক্তির ছোঁয়া।
×