ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির বাংলাদেশ টিটি ফেডারেশন

প্রকাশিত: ১২:১০, ১ আগস্ট ২০১৯

অস্থির বাংলাদেশ টিটি ফেডারেশন

রুমেল খান ॥ দারুণ অস্থিরতা বিরাজ করছে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস (টিটি) ফেডারেশনে। এই অস্থিরতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি খোন্দকার হাসান মুনিরকে। অভিযোগকারী কোন ব্যক্তি নয়, সংগঠন। যার নাম ‘বাংলাদেশ টেবিল টেনিস প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন’। বুধবার ঢাকার পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সংগঠনটি। সেখানে সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মুনিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, খেলোয়াড়দের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক বিষিয়ে দেয়া, খেলোয়াড়দের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সেটা শোধ করতে টালবাহানা করাসহ আরও অনেক ধরনের অভিযোগ করেন। সবশেষে তারা মুনিরের অপসারণ দাবি করেন। তবে মুনির তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। সংবাদ সম্মেলনে টিটি প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জাতীয় দলের খেলোয়াড় মানস চৌধুরী বলেন, ‘টিটি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মুনির একসময় ভাল লোক ছিলেন। এখন তিনি আর তেমনটি নেই। কথায় কথায় খেলোয়াড়দের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। খেলোয়াড়দের বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। তাদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল সৃষ্টি করেন, মিথ্যা কথা বলেন। উনি একজন মানসিক রোগী, ওনার চিকিৎসা প্রয়োজন। উনি আসলে টিটির বিষফোঁড়া’। মানস আরও যোগ করেন, ‘ওনার পদত্যাগের জন্য আমরা ফেডারেশনের সভাপতির কাছে যাব। দরকার হলে এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাব।’ ৩২ বছরে যে সংগঠন ক্রীড়া সাংবাদিকদের কখনই নিজেদের কোন সমস্যার কথা জানায়নি, তারা হঠাৎ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ নিয়ে হাজির হলো, এতদিন কেন হয়নি? এর ব্যাখ্যা মানস দেন এভাবে, ‘এতদিন আমাদের মধ্যে একতা ছিল না। এখন এক হয়েছি।’ অথচ এক সময় ফেডারেশনের বর্তমান সহ-সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনিরের সঙ্গে মানস ও মাহবুব বিল্লাহর খুব ভাল সম্পর্কই ছিল। হঠাৎ করে তাদের মধ্যে তিক্ততার কারণ কী? অনুসন্ধানে জানা গেছে এর অনেক অজানা তথ্য। বাংলাদেশের টেবিল টেনিসে সেরা তারকা মানস চৌধুরী। তার সঙ্গে আছেন মাহবুব। তারা এসএ গেমসে অনেকবারই বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। খেলোয়াড়ের পাশাপাশি মানস একজন ডাক্তারও। চট্টগ্রামে ডাক্তারি করেন। অতীতে যখনই কোন টুর্নামেন্টের ক্যাম্প ডাকা হতো তখন সপ্তাহে দু’দিন ক্যাম্প করতেন তিনি। নিয়মবহির্ভূত এমন কাজ করেও মানস পার পেয়ে যেতেন এই মুনিরের কারণেই। সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় মানসকে এমন সুবিধা দিতেন তিনি। এটা অস্বীকার করেননি মুনিরও। সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘মাহবুব মাসের পর মাস বিনা কারণে ফেডারেশনের রুম ব্যবহার করছে। আমি কিছু বলিনি।’ তাহলে মানস-মাহবুব কেন এখন মুনিরের শত্রু? ‘এবার এসএ গেমসের ক্যাম্প শুরুর আগে মানসের এমন আবেদন নাকচ করে দিই। আর মাহবুবকে বিনা ক্যাম্পে রুমে থাকতে নিষেধ করে দিই। তাই এখন আমি তাদের চক্ষুশূল। তাইতো ওদের কাছে আমি আগে ভাল ছিলাম, আর এখন খারাপ লোক।’ মুনিরের জবাব। আগামী ডিসেম্বরে নেপালে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্রীড় আসর এসএ গেমসের ত্রয়োদশ আসর। এ আসরে ২৫ ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ২১টির অনুশীলন আরম্ভ হয়ে গেছে। ক্রিকেট, ফুটবলের সঙ্গে এখনও ক্যাম্প শুরু করতে পারেনি ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা টিটিরই। এর কারণ মুনিরের সঙ্গে টিটি খেলোয়াড়দের গ-গোল। ফলে এক অস্থির অবস্থা বিরাজমান টিটি ফেডারেশনে। নিয়মিত ক্যাম্প না করার কথা অস্বীকার করেননি মানসও। তবে তার যুক্তি, ‘আমি খেলতে পারছি কি না সেটাই বড় বিষয়। বাকিদের সঙ্গে যদি লড়াই করে জিততে পারি, দেশকে কিছু এনে দিতে পারি, সেটাই মূল্যায়ন করা উচিত।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেডারেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, মানসদের সঙ্গে মুনিরের ঝামেলার আরেকটি কারণ- এসএ গেমসের ক্যাম্পের জন্য ডাক পাওয়া তিন জুনিয়র খেলোয়াড়। সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিনয়শিপের শিরোপা জেতেন ইমরান হোসেন হƒদয়। এসএ গেমসের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আটজনের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে তিনি। মানস, মাহবুব, জাভেদ, পরাগসহ সিনিয়র পাঁচজনের সঙ্গে আছেন জুনিয়র তিনজনও। এই আটজন থেকে সেরা পাঁচজনকে এসএ গেমসের জন্য নির্বাচন করা হবে। আর এখানেই নাকি অস্বস্তি-ভয় মানসদের, এমনটাই দাবি মুনিরের, ‘জুনিয়রদের কাছে যদি তারা হেরে যায়, তাহলে এসএ গেমসে খেলতে পারবেন না সিনিয়র তিনজন। এটা তাদের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য- সিনিয়র-জুনিয়র নয়, আমাদের কাছে যে ভাল করবে তাকেই আমরা ক্যাম্পে নেব।’
×