ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের সঙ্গেই বড় লড়াই তামিমের

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২৬ জুলাই ২০১৯

 নিজের সঙ্গেই বড় লড়াই তামিমের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারে। প্রথমবারের মতো পুরো একটি সিরিজে অধিনায়ক হয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তার নেতৃত্বে খেলবে বাংলাদেশ দল। আজ থেকেই সেই অধিনায়কত্বের পরীক্ষা শুরু। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের মতো দুই অপরিহার্য ক্রিকেটারকে ছাড়া স্বাগতিক লঙ্কানদের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে তাকে। আজ ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে একাদশের বাকি ১০ জনের নৈপুণ্য দেখানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন। দাবি করেছেন দলগতভাবে সবাই ভাল খেললেই অধিনায়ক হিসেবে দক্ষ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে। দলগত এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাঁহাতি এ ওপেনারের মূল লড়াইটা নিজের সঙ্গে। এবার বিশ্বকাপে দলের প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কায় এবার নিজেকে ফিরে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ তামিমের। দু’টি মাইলফলক তার সামনে। ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে আর মাত্র ১২৯ রান প্রয়োজন তার। আর প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলিয়ে ১৩ হাজার রানে পৌঁছুতে দরকার ১৮৯ রান। এছাড়া তিন ফরমেটে বিদেশের মাটিতে ৫ হাজার রানের মাইলস্টোন ছুঁতে মাত্র ৭৭ রান করতে হবে তাকে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দারুণ ব্যালান্সড একটি দল নিয়ে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। ব্যাটে বলে সাকিব, ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহীম এবং বল হাতে মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ছাড়া বাকিরা ছিলেন চরমভাবে ব্যর্থ। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সফল অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে ৩টি জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এবার শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফি, সাকিব ও সাইফ- এ তিন তারকাই নেই। টপঅর্ডারে তামিম-সৌম্য সরকারও তেমন ভাল ফর্মে না থাকায় শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বেশ চ্যালেঞ্জের হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত তামিম দারুণ ফর্মে ছিলেন। সে কারণে তার ওপর নির্ভরশীল ছিল দল। কিন্তু মর্যাদার এই মঞ্চে বরাবরের মতো এবারও চরমভাবে ব্যর্থতা দেখিয়েছেন তামিম। তিন ফরমেটের ক্রিকেটে সর্বাধিক সেঞ্চুরি ও রানের মালিক হওয়াতে এ বাঁহাতি ওপেনারের ওপর প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু ৮ ম্যাচে তিনি মাত্র একটি অর্ধশতক হাঁকাতে সক্ষম হন। ১৬, ২৪, ১৯, ৪৮, ৬২, ৩৬, ২২ ও ৮ রান করেছেন বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোয়। কোন ম্যাচেই উদ্বোধনী জুটি বড় হয়নি। এমনকি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেও নিয়মিত বড় সংগ্রহ আসেনি। সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে এবার ফেরার লড়াই তামিমের। এবার সিরিজ শুরুর আগে তিনি বলেন, ‘আমি অধিনায়ক হিসেবে চ্যালেঞ্জটা উপভোগ করতে চাই। নিজে ভাল পারফর্মেন্স করে দলের বাকিদের জন্য উদাহরণ হতে চাই।’ অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যটা বিবেচনা হয় দলের জয়ের মাধ্যমে। তামিম উপলব্ধি করছেন, একক নৈপুণ্যে সেটি সম্ভব হবে না। কারণ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মুশফিকের ইনজুরিতে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে প্রথমবার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলকে। নিজে দুই ইনিংসে ৫ ও ৮ রান করতে পেরেছিলেন এবং দলের অন্যরাও ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফলে দল হেরে গিয়েছিল বাজেভাবে। এ জন্য সিরিজ শুরুর আগেরদিন এবার তিনি বললেন, ‘আমরা যদি কাল (আজ) জিততে পারি বা দল ভাল খেলে তখন অধিনায়ক হিসেবে বিশেষ কিছু মনে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাকি ১০ জন যদি পারফর্ম করতে পারে তাহলে একজন অধিনায়ক কেমন সেটাকেই প্রমাণ করবে।’ নেতৃত্বের ড্রেস রিহার্সেলে সফল হয়েছেন তিনি। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল ৫ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে। ব্যাট হাতেও রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন এদিন তামিম। ৪৭ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। তবে আবারও নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে না পারার আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছে তার। সেই আক্ষেপটা শ্রীলঙ্কার মাটিতে এই ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে কাটিয়ে উঠতে পারলে বেশ কিছু নতুন রেকর্ডের মালিক হবেন তামিম। এই মুহূর্তে তিন ফরমেটের ক্রিকেট (ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০) মিলিয়ে ৩৩৪ ম্যাচে ৩৮৬ ইনিংস ব্যাট চালিয়ে তামিম ২১ সেঞ্চুরি ও ৮০টি হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ১২ হাজার ৮১১ রান। দেশের পক্ষে তা এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। ব্যাটিং গড়টাও দারুণ- ৩৪.৪৩। সার্বিক তালিকায় আছেন ৫১ নম্বরে। তবে আর ১৮৯ রান এ সিরিজে করতে পারলে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিন ফরমেট মিলিয়ে ১৩ হাজার রানে পৌঁছুবেন তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের ৪৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে। এরচেয়েও সহজ দুটি মাইলফলক আছে তার সামনে। আর মাত্র ৭৭ রান করতে পারলেই দেশের বাইরে ব্যাট হাতে তিন ফরমেটে ৫ হাজার রান স্পর্শ করবেন। সেটি তামিমের আগে অবশ্য আরও ৫২ জন ক্রিকেটার করে দেখিয়েছেন। দেশের বাইরে তিন ফরমেটে ১১৭ ম্যাচের ১৩৯ ইনিংস ব্যাট চালিয়ে ৩৬.৪৬ গড়ে ১০টি শতক ও ৩১টি অর্ধশতকে তামিম করেছেন ৪৯২৩ রান। অর্থাৎ দেশের মাটিতে ব্যাটিং পারফর্মেন্সের চেয়ে দেশের বাইরেই বেশি ভাল এ বাঁহাতি ওপেনার। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৪১ জন ক্রিকেটার ৭০০০ রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। তামিম ৪২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেটি ছুঁতে পারবেন আর ১২৯ রান করতে পারলেই। এই মাইলফলকটাও তার আয়ত্তের মধ্যেই আছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল পারফর্মেন্স তামিমেরই। তিনি লঙ্কানদের বিপক্ষে ২১ ম্যাচে ৩৩.৯৪ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৬৪৫ রান। এক্ষেত্রে মুশফিক ২৭ ম্যাচে ৬০৮ ও সাকিব ২২ ম্যাচে ৬০৭ রান করে তার পেছনে। আর শ্রীলঙ্কার মাটিতে ব্যাটিং পারফর্মেন্স বিবেচনা করলে তামিমের ধারে কাছেও নেই তার কোন সতীর্থ। শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ৮ ওয়ানডে খেলে ২ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৫১.৭১ গড়ে তামিম ৩৬২ রান করেছেন এখন পর্যন্ত। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ১৪ ম্যাচে ২৪২, খালেদ মাসুদ ৮ ম্যাচে ১৭৭ রান করে। তালিকায় চারে আছেন সাকিব ৭ ম্যাচে ১৬৩ রান করে। অর্থাৎ লঙ্কানদের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই বেশি দুর্ধর্ষ তামিম। এখন তিনি ফর্মের বাইরে, আবার দলেরও অধিনায়ক। কিন্তু তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল। এবারই তার ফুঁসে ওঠার দারুণ সুযোগ পয়মন্ত দেশে। সে জন্যই মাইলফলকগুলো ছোঁয়ারও দারুণ সুযোগ এই ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে।
×