ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি কাপে দারুণ জয় ঢাকা আবাহনীর

প্রকাশিত: ১২:১৯, ৪ এপ্রিল ২০১৯

এএফসি কাপে দারুণ জয় ঢাকা আবাহনীর

রুমেল খান ॥ এএফসি কাপের আগের দুই আসরে খেলে প্রতিবারই বিদায় নিতে হয়েছে প্রথম রাউন্ড থেকেই। সেই অপবাদ ঘোচাতে এবার মরিয়া ছিল তারা। সেই লক্ষ্যে শুরুটা ভালমতোই অর্থাৎ জয় দিয়েই শুরু করলো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল দল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। বুধবার আনফা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত ‘ই’ গ্রুপের প্রথম খেলায় নেপালের স্বাগতিক দল মানাং মার্শিয়াংদি ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনী। দলের হয়ে জয়সূচক ‘মহামূল্যবান’ গোলটি করেন আফগান ফরোয়ার্ড মাসিহ্ সাইঘানি। নেপালের দলটি এবারই প্রথম খেলছে এএফসি কাপে। এএফসি কাপে এ নিয়ে ত্রয়োদশ ম্যাচে তৃতীয় জয় কুড়িয়ে নিল আবাহনী। এর আগে যে দুটিতে জিতেছিল তারা সে দুটি জয়ই ছিল ভারতীয় ক্লাবের বিরুদ্ধে। প্রথম জয়টি ছিল ব্যাঙ্গালুরু ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে। ২০১৭ আসরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হোম ম্যাচে তাদের ২-০ গোলে হারিয়েছিল আবাহনী। পরের বছর আইজল ফুটবল ক্লাবকে তাদের মাটিতেই (গুয়াহাটির ইন্ধিরা গান্ধী এ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে) ৩-০ গোলে হারায় আকাশী-নীল শিবির। ২০১৭ আসরে গ্রুপে চার দলের মধ্যে তলানিতে থাকলেও ২০১৮ আসরে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবাহনী। বুধবার লড়াইটা দুই ক্লাবের হলেও এক অর্থে দুই দলই আসলে প্রতিনিধিত্ব করেছে নিজেদের দেশকে। তাছাড়া আবাহনীতে যেমন জাতীয় দলের ১৩ ফুটবলার আছে, তেমনি মানাং মার্শিয়াংদি ক্লাবেও খেলেন নেপাল জাতীয় দলের ১৭ খেলোয়াড়। ফলে লড়াইটা তাই হয়েছে সমানে-সমান। তবে গোল করে এগিয়ে যাবার পর আবাহনী রক্ষণাত্মক খেলায় শেষদিকে তাদের ওপর চেপে বসে মানাং। ফলে সামগ্রিকভাবে বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে মানাংই (৬৪%)। অফসাইডেও দু’দলই সমান (২-২)। কর্নারে অবশ্য এগিয়ে ‘মানাজি’ খ্যাত মানাং (৭-৪)। গোলপোস্টে শট নেয়ার বেলাতেও সমান দু’দল (১০-১০)। মানাং যেখানে অনটার্গেট শট নিয়েছে ৩টি, আবাহনী নিয়েছে ২টি। তবে স্বাগতিকরা ৭টি ফাউল করলেও ১০টি ফাউল করে অতিথি দল। অথচ ঘরের মাঠ- দর্শক আর আবহাওয়া সব নিজেদের পক্ষেই ছিল মানাংয়ের। কিন্তু সফরকারী আবাহনী এগুলোকেই পাত্তা না দিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করে। তাতে সফলও হয় তারা। নিজেদের রক্ষণদুর্গ অক্ষত রেখে আক্রমণে যায় তারা। এই জয়ে তিন পয়েন্ট পেয়ে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে খেলার আত্মবিশ্বাসের রসদ পেয়ে গেল আকাশী-নীল শিবির। আগামী ১৭ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নিজেদের হোম ম্যাচে ভারতের মিনের্ভা পাঞ্জাবের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। আর মানাং মার্শিয়াংদির বিপক্ষে ফিরতি লেগের ম্যাচটি খেলবে ১৯ জুন, ঢাকায়। এবার দলীয় শক্তি বৃদ্ধি করতে আবাহনী দলে নেয় নতুন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ফরোয়ার্ড ওয়েলিংটন প্রিয়রিকে। ফরোয়ার্ড হিসেবে আরও ছিলেন নাইজিরিয়ান সানডে চিজোবা, হাইতিয়ান কারভেন্স ফিলস্ বেলফোর্ট এবং নাবিব নেওয়াজ জীবন। কিন্তু এরা কেউই নন, জয়ের নায়ক হলেন আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ্ সাইঘানি। প্রিয়রি তো খেলার শেষদিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড পান, আবাহনীর হয়ে অভিষেকেই হলুদ কার্ড। এই খেলাটি দেখে অনেকেই বলতে পারেন, ম্যাচটি হয়েছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের মধ্যে। কেননা মানাংয়ের জার্সি ছিল প্রায় আর্জেন্টিনার মতো, আর আবাহনীর ব্রাজিলের মতো। ২৮ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া বলে হেড করে নেপালের চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটির জাল কাঁপিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন মাসিহ্ (১-০)। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে আরও একটি গোল করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল আবাহনীর। কারণ রুবেল মিয়ার ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে প্রায় নিজেদের জালেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে সানডে চিজোবার শট অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। দ্বিতীয়ার্ধেও আবাহনী খেলে পরিকল্পিত ফুটবল। ৬৫ মিনিটে লেফটব্যাক ওয়ালী ফয়সালের কর্নারে বক্সে লাফিয়ে উঠে হেড নেন বেলফোর্ট, কিন্তু বলের নাগাল পাননি। ৬৮ মিনিটে প্রতিপক্ষের দারুণ একটি আক্রমণ নস্যাৎ করে দেন আবাহনীর গোলরক্ষক-অধিনায়ক শহীদুল আলম সোহেল। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে টুটুল হোসেন বাদশা এবং রায়হান হাসানদের সমন্বয়ে আবাহনীর ডিফেন্স ছিল আঁটসাঁট। এবারের প্রতিযোগিতায় গ্রুপপর্বে এশিয়ার ৩৬ লীগ শিরোপাধারী দলকে ৯টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপে আছে ৪টি করে দল। এই দলগুলোকে আবার ৫টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো : পশ্চিম, মধ্যম, দক্ষিণ, পূর্ব ও আসিয়ান অঞ্চল। পশ্চিম ও আসিয়ান অঞ্চলের মধ্যে ৬টি গ্রুপসহ মধ্যম, দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চলে ১টি করে ৩টি নিয়ে মোট ৯টি গ্রুপ। দক্ষিণ অঞ্চলের ‘ই’ গ্রুপে পড়েছে আবাহনী। পরিসংখ্যানের নিরিখে বয়স-অভিজ্ঞতায় মানাংয়ের চেয়ে এগিয়ে আবাহনী, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আজ তারা জিতে শুভসূচনা করতে পারবে তো? ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ॥ শহীদুল আলম সোহেল (অধিনায়ক), রায়হান হাসান, ওয়ালী ফয়সাল, টুটুল হোসেন বাদশা, মাসিহ্ সাইঘানি, সোহেল রানা, নাবিব নেওয়াজ জীবন (মামুনুল ইসলাম), সানডে চিজোবা, রুবেল মিয়া (জুয়েল রানা), কারভেন্স ফিলস্ বেলফোর্ট, ওয়েলিংটন কিরিনো প্রিয়রি।
×