ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ টানা দুই ম্যাচ হেরে ২-০ ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হার হয়ে গেছে। এখন তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে খেলতে নামার পালা। বুধবার ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচে হারলেই হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। জিতলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করতে পারবে মাশরাফিবাহিনী। বাংলাদেশের সামনে এবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন। পারবে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ এড়াতে? প্রথম দুই ওয়ানডেতে বাজে অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশের। স্কোরবোর্ডে রান করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। নিউজিল্যান্ড পেসার ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসনদের বলগুলো খেলতেই যেন পারেনি। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা ব্যর্থ হয়েছেন। তাতে করে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই নিউজিল্যান্ড যে জিতবে তা বোঝা হয়ে যায়। প্রথম ওয়ানডেতে ২৩২ ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২২৬ রান করাতেই নিউজিল্যান্ডের জয় হয়েছে। নিউজিল্যান্ড দলে মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর, টম লাথাম, জেমস নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন। এ ব্যাটসম্যানদের সামনে বাংলাদেশের গড়া স্কোরগুলো খুবই অল্প। আর তাইতো দুই ওয়ানডেতেই ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানেই হার হয়েছে। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের পর আর কোন ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করারই সুযোগ পাননি। গাপটিল আবার টানা দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন। শুরু থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমানদের বলগুলোকে শাসন করতে থাকেন গাপটিল। তাতেই কাজ হয়ে যায়। এবার কী গাপটিলকে আটকানোর সঙ্গে ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া যাবে? নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কখনাও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার অনেক আশা নিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে গেছে বাংলাদেশ। অন্তত একটি জয় পেয়ে হারের গোলকধাঁধা থেকে বের হতে চেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম দুই ওয়ানডেতে তার দেখা মিলেনি। উল্টো পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। উড়ে গেছে। সাকিব আল হাসান শেষ মুহূর্তে ইনজুরিতে পড়ে সফর থেকে ছিটকে পড়াতেও প্রভাব পড়েছে। সাকিব থাকা মানে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে জোর পাওয়া। কিন্তু তিনি না থাকায় আলাদা করে একজন ব্যাটসম্যান ও বোলারকে খেলাতে হচ্ছে। সাকিব থাকলে ব্যাটিংয়ে যেমন ভিত মজবুত থাকে, তেমনি বোলিং বিভাগটাও হয় শক্তিশালী। তিনিই নেই। আর তাতে করে বাংলাদেশ প্রথম দুই ওয়ানডেতে নাজেহাল হয়েছে। এবার তৃতীয় ওয়ানডেতে কী হবে? সেই প্রশ্নই সবার। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘খুব বাজে একটা দিন (শনিবার) গেল। আমরা শুরুতে উইকেট হারিয়েছি। তেমন বড় কোন জুটি গড়তে পারিনি। ৩০ রানের জুটি গড়েছি সেগুলো ৬০ বা ৭০ রানের হলে ম্যাচটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। এই ম্যাচ (দ্বিতীয় ওয়ানডে) থেকে নেয়ার মতো আমাদের ইতিবাচক খুব বেশি কিছু নেই। দল হিসেবে আমাদের খেলতে হবে। আমরা এখানে ২২০-২৩০ রান করছি, লড়াই করতে হলে অন্তত ২৭০-২৮০ রান করতে হবে।’ মাশরাফি ভাল করেই বুঝেছেন, ২৭০-২৮০ রান না করলে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা কঠিন। তা করলেও যে জেতা যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তবে লড়াইতো করা যাবে। দলের ব্যাটসম্যানরা এখন তা ভালভাবে বুঝলেই হলো। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা গাপটিল আবার হুঙ্কার দিয়ে বসেছেন। বাংলাদেশকে পেয়ে যেন গর্জে উঠেছে গাপটিলের ব্যাট। আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। আর তাই বলেছেন, ‘আমরা সব সময় ৩-০ ব্যবধানে জিততে চাই। বাংলাদেশ খুবই ভাল দল তবু এখানে এসে ভাল করা সব সময়ই কঠিন। আমার সব সময় মনে হয়েছে এ সিরিজে আমরাই এগিয়ে থাকব। আর বোলাররাই ম্যাচের ছন্দ ঠিক করে দিচ্ছে শুরুতে। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে কোন সুযোগই পাচ্ছে না।’ সত্যিই তাই। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে কোন সুযোগই পাচ্ছে না। ডানেডিনে কী তাহলে আরও বিপদ ধেয়ে আসছে? এবার তৃতীয় ওয়ানডে হবে ডানেডিনে। এই স্টেডিয়ামে যেমন রান হয়, তেমনি কম রানেও অলআউট হয়ে যাওয়ার দুঃস্মৃতি আছে। সর্বশেষ এই স্টেডিয়ামে গত বছর মার্চে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটিতে ৩৩৫ রান করেও হেরেছিল ইংল্যান্ড। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, ডুনেডিনেও স্কোর অনেক বড় হয়। আবার গত বছর জানুয়ারিতেই পাকিস্তানকে ৭৪ রানেও অলআউট করে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশকে তাই সাবধানেই খেলতে হবে। ব্যাটসম্যানদের ওপরেই যে সব নির্ভর করছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। এ স্টেডিয়ামে আবার নিউজিল্যান্ডের সাফল্য শতভাগ। সাত ম্যাচ খেলে সবকটিতে জিতেছে। এই জয়ের যাত্রাটা আবার বাংলাদেশকে হারিয়েই শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ হয়। সেটিতে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়। নিউজিল্যান্ড ২২ ওভার বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জিতে যায়। এরপর থেকে এ স্টেডিয়ামে শুধুই জয় হয় নিউজিল্যান্ডের। এ স্টেডিয়ামে নয় বছর পর খেলতে নামছে বাংলাদেশ। নয় বছর আগের ম্যাচটি ছিল সিরিজ হারের ম্যাচ। এবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচ। তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামার আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। একটিতেও জিততে পারেনি। সবগুলো ম্যাচেই পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বরাবরই নাজেহাল হয়েছে। এবার অনেক আশা ছিল, দল কিছু করে দেখাবে। কিন্তু তা করাই যাচ্ছে না। প্রথম ওয়ানডে হারের পর মেহেদী হাসান মিরাজ সিরিজই জিতে নেয়ার আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন হোয়াইটওয়াশ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে বাংলাদেশকে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখন পর্যন্ত এর আগে তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সবকটিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রথমবার, ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০১৬ সালে তৃতীয়বার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। প্রতিবারই তিন ম্যাচের সিরিজ হয়। কোন সিরিজেই একটি ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ হয়েছে প্রতিবার। এবার চতুর্থবারের মতো তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে গিয়েও একই দুঃস্মৃতির মুখে পড়েছে। এবার কী হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে বাংলাদেশ?
×