ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরির অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

দেশী ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরির অপেক্ষা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) টি২০ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলার পর বাংলাদেশেও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এমন একটি আসর ২০১২ সালে শুরু করা হয়। শুরু হওয়ার পর থেকেই আয়োজন, তারকা ক্রিকেটারদের উপস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর হিসেবে নজর কাড়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)। তখন থেকে সবমিলিয়ে ৫টি আসর এর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলছে ষষ্ঠ বিপিএল টি২০। এবার হয়েছে তিনটি সেঞ্চুরি। এর মধ্যে দারুণ এক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন ইংলিশ ওপেনার এ্যালেক্স হেলস ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। বিশ্বব্যাপী যে কোন পর্যায়ে খেলা টি২০তে এক ইনিংসে দুই সেঞ্চুরির রেকর্ড এ নিয়ে মাত্র তিনটি। তবে বিপিএলের এক আসরে সর্বাধিক ৪ সেঞ্চুরি হয়েছে প্রথম আসরে। এবার ইতোমধ্যেই তিনটি হয়ে যাওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে আরও শতরানের ইনিংস দেখা যেতে পারে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। তবে সর্বশেষ বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০১৬ সালে শতক পেয়েছেন সাব্বির রহমান। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের উইলো থেকে সেঞ্চুরির অপেক্ষা এবার। বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল। ২০১২ সালের প্রথম আসরে তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল বার্নার্সের হয়ে ৪৪ বলে ১০১ রানের অপরাজিত শতক হাঁকান সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে। সেই আসরে তিনি আরেকটি সেঞ্চুরি হাঁকান। আরেক ক্যারিবীয় ওপেনার ডোয়াইন স্মিথ এবং পাকিস্তানের ওপেনার আহমেদ শেহজাদও শতক পান। প্রথম আসরে চারটি সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় আসরে ২০১৩ সালে হয় আরও তিনটি। গেইল এ আসরেও শতক পান। বাকি দুটি আসে শাহরিয়ার নাফীস ও মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাট থেকে। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন শাহরিয়ার। তিনি ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে খেলেছিলেন ৬৯ বলে ১০২ রানের হার না মানা ইনিংস। ওই আসরেই আশরাফুল দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ৫৮ বলে অপরাজিত ১০৩ করেছিলেন তিনি খুলনার বিপক্ষে। অবশ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে (আইসিএল) টি২০ ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতক হাঁকিয়েছিলেন অলক কাপালী। কিন্তু আইসিএল নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে সেটি এখন বিবেচনায় আনা হয় না। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ টি২০ বিশ্বকাপে আন্তর্জাতিক টি২০তে প্রথম শতক পান বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। সেদিন ধর্মশালায় তিনি ওমানের বিপক্ষে ৬৩ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। নানাবিধ সমস্যায় আটকে এক বছর এরপর বন্ধ থাকে বিপিএল। ২০১৫ সালে নতুন করে শুরু হয় আসরটি। তৃতীয় এই আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ ওপেনার এভিন লুইস একমাত্র সেঞ্চুরি হাঁকান। বরিশাল বুলসের হয়ে ৬৫ বলে অপরাজিত ১০১ রান করেন তিনি ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে। ২০১৬ সালেও মাত্র একটিই শতক দেখা যায় পঞ্চম বিপিএলে। সেটিও আসে একজন বাংলাদেশীর ব্যাট থেকে। রাজশাহী কিংসের হয়ে ১৩ নবেম্বর মিরপুরে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ৬১ বলে ১২২ রান। তখন সেটিই ছিল বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। তবে সেই রেকর্ডটি ভেঙ্গে যায় ২০১৭ সালের পঞ্চম আসরে। আবারও গেইল শতক হাঁকান। তিনি এবার রংপুর রাইডার্সের হয়ে মাত্র ৫১ বলে অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস খেলেন মিরপুরে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ৮ ডিসেম্বর। এই আসরে মোট ৩ শতক দেখা গেছে। বাকি দুটি করেন ক্যারিবীয় ওপেনার জনসন চার্লস (৬৩ বলে ১০৫*) ও গেইল (৬৯ বলে ১৪৬*)। তাই এখন পর্যন্ত বিপিএলের সেরা ব্যক্তিগত ইনিংসের গেইলের অপরাজিত ১৪৬ রানটিই। ইনিংসটি তিনি রংপুরের হয়ে ঢাকার বিপক্ষে মিরপুরে ১২ ডিসেম্বর খেলেছিলেন। এবার ষষ্ঠ আসরের শুরুর দিকে ব্যাটসম্যানরা রানই পাচ্ছিলেন না। টি২০ ক্রিকেটের জন্য আদর্শ উইকেট নয়, এমন তকমার কারণেই দলগুলো রান পেতে হিমশিম খাচ্ছিল। কয়েক ম্যাচ পরই ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করেন। বের হয়ে আসতে থাকে বড় বড় ইনিংস। কিন্তু প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া গেছে ২৩তম ম্যাচে। রাজশাহীর হয়ে অখ্যাত ইংলিশ ওপেনার লরি ইভান্স ৬২ বলে অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস উপহার দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে। এরপর শতক আসতে অপেক্ষা মাত্র চারদিন আর ৭ ম্যাচের। ৩০তম ম্যাচে এসে দেখা পাওয়া গেছে এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি। এবার রংপুরের হয়ে হেলস ৪৮ বলে ১০০ এবং রুশো ৫১ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেন। বিপিএলে এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরির ঘটনা এই প্রথম। আর বিশ্বের টি২০ ইতিহাসে তৃতীয়। টি২০তে প্রথমবার এক ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি হয়েছে ২০১১ সালে, ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্সের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন গ্লচেস্টারশায়ারের দুই ওপেনার কেভিন ও’ব্রায়ান (৫২ বলে ১১৯) ও হামিশ মার্শাল (৫৪ বলে ১০২)। এরপর ২০১৬ সালে আইপিএলে গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে একই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকান রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিরাট কোহলি (৫৫ বলে ১০৯) ও এবি ডি ভিলিয়ার্স (৫২ বলে ১২৯)। বিপিএলে এখন পর্যন্ত মোট সেঞ্চুরির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫তে। ১১ জন ব্যাটসম্যান এই সেঞ্চুরিগুলো করেছেন। শুধু গেইলের ব্যাট থেকেই এসেছে একাধিক শতক। তিনি ৫টি শতক হাঁকিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের সংখ্যা ৩ এবং সেঞ্চুরিও ৩। এবার অনেকেই বড় বড় ইনিংস খেলছেন কিন্তু বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে শতক দেখা যাচ্ছে না। চতুর্থ আসরে সাব্বিরের পর এবারের আসরে বাকি থাকা ১৪ ম্যাচে কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে সেঞ্চুরি পাওয়ার অপেক্ষা এখন।
×