ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের পুরনো ও অনিয়মিত ঘরোয়া টুর্নামেন্ট...

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

 দেশের পুরনো ও অনিয়মিত ঘরোয়া টুর্নামেন্ট...

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর লীগ ছাড়া বেশ কটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো জাঁকজমকভাবে। দুঃখজনকভাবে এগুলোর বেশিরভাগই নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় পরবর্তীতে। যেমন : শেরে বাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ, ডামফা কাপ, আগা খান গোল্ডকাপ, আজমেরি বেগম গোল্ডকাপ (ফেনী), খান বজলুর রহমান গোল্ডকাপ (ফেনী), জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ... ইত্যাদি। টিকে থাকে হাতে গোনা মাত্র তিনটি টুর্নামেন্ট। এগুলোর মধ্যে আছে স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ, সুপার কাপ। সুপার কাপ সবার পরে শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে এখন বাফুফের নিস্ক্রিয়তায় এটি আপাতত বন্ধ রয়েছে (মোহামেডান জিতেছে ২ বার, ঢাকা আবাহনী জিতেছে ১ বার)। সে তুলনায় ফেডারেশন কাপের আসরটি বলতে গেলে নিয়মিতই হয়ে আসছে সেই ১৯৮০ সাল থেকে। এ পর্যন্ত এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩০ বার (ঢাকা আবাহনী সর্বাধিক এই আসরের শিরোপা জিতেছে ১১ বার, মোহামেডান জিতেছে ১০ বার)। বাকি থাকে স্বাধীনতা কাপ ফুটবল। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এটি (প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে), অথচ এটিই কিনা পরবর্তীকালে হয়ে যায় সবচেয়ে ধীরগতির এবং অনিয়মিত টুর্নামেন্ট। গত ৪৭ বছরে এই আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সর্বসাকুল্যে মাত্র ১০ বার! ১৯৭২ সালে প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দ্বিতীয় আসরটি অনুষ্ঠিত হতে হতে লেগে যায় পাক্কা ১৮ বছর! ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার পরের বছরই অবশ্য তৃতীয়টি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু চতুর্থটির জন্য অপেক্ষা করতে হয় একযুগেরও বেশি, ১৪ বছর (২০০৫ সালে)! পঞ্চমটি হতে এবার সময় নেয় অর্ধযুগ (২০১১)। এরপর থেকে অবশ্য মোটামুটি নিয়মিতই হয়ে আসছে আসরটি। গত সাত বছরে হয়েছে পাঁচটি আসর। মজার ব্যাপার- এ বছর স্বাধীনতা কাপের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে দু’বার। একবার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, আরেকবার ডিসেম্বরে! আগের আটটি আসরের প্রতিটিই স্বাধীনতার মাসে, অর্থাৎ মার্চে অনুষ্ঠিত হলেও এবারের দু’বারই স্বাধীনতা কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে ভিন্ন মাসে। প্রথমটি যখন শেষ হয় তখন মার্চ মাসে শুরুই হয়নি। আর দ্বিতীয়টি অনুষ্ঠিত হয় বিজয়ের মাসে। ৪৭ বছরে এত কম সংখ্যক আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, এই ফারাক কমিয়ে আনতেই কি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এমনটি করেছে কি না তা অবশ্য তারা পরিষ্কার করে বলেনি। এবার আসা যাক স্বাধীনতা কাপের বিভিন্ন দিক নিয়ে। এর দশ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আটটি দল। এই আসরে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলেছে ‘ব্ল্যাযাক এ্যান্ড হোয়াইট’ খ্যাত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। তারা ফাইনাল খেলে মোট চারবার (১৯৭২, ৯০, ৯১ ও ২০১৪)। সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব তাদেরই তিনবার। ১৯৭২ সালে ইস্ট এন্ডকে ৩-১, ১৯৯১ সালে আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৪-২ (১-১) এবং ২০১৪ সালে ফেনী সকারকে টাইব্রেকারে ৫-৪ (০-০) গোলে হারায় তারা। সবচেয়ে বেশি রানার্সআপ হয়েছে ঢাকা আবাহনী এবং শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। দুটি দলই দু’বার করে ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়েছে। ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনী ১৯৯১ সালে এবং ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল। আর ‘বেঙ্গল বøুজ’ খ্যাত রাসেল ফাইনালে হেরেছিল ২০১১ এবং ২০১৮-১৯ সালে। প্রথমবার হারে ‘লালকুঠি’ খ্যাত ফরাশগঞ্জের কাছে টাইব্রেকারে ৫-৪ (১-১) গোলে। দ্বিতীয়বার হারে সদ্য সমাপ্ত আসরে, বসুন্ধরা কিংসের কাছে ২-১ গোলে। অবশ্য দু’বার ফাইনালে হারলেও অন্তত একবার হলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছে আবাহনী-রাসেল। মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে ১৯৯০ সালে আবাহনী এবং শেখ জামাল ধানমন্ডিকে হারিয়ে ৩-২ গোলে হারিয়ে ২০১৩ সালে রাসেল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০১৩ সালের এই ফাইনালেই দু’দল মিলে সবচেয়ে বেশি পাঁচটি গোল করেছিল।২০১৪ আসরের ফাইনালে মোহামেডান-ফেনী সকার কোন দলই নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোল করতে পারেনি। ফলে ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। এছাড়া ১৯৯১ সালে মোহামেডান-আবাহনী এবং ২০১১ সালে ফরাশগঞ্জ-রাসেল ম্যাচটিও গড়ায় টাইব্রেকার নামের ভাগ্য পরীক্ষায়। মোহামেডানই একমাত্র দল যারা টানা তিনবার ফাইনাল খেলেছে (১৯৭২, ৯০, ৯১)। তারা শিরোপাও জিতেছে তিনবার। অথচ অন্য কোন দল একবারের বেশি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এই তালিকায় আছে আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, ফরাশগঞ্জ, শেখ রাসেল, চট্টগ্রাম আবাহনী, আরামবাগ ও বসুন্ধরা কিংস। শেষের দলটি বিশেষ কারণে আলোচিত, কেননা দলটি এবারই প্রথম প্রিমিয়ার লীগে খেলবে। এই আসরে নতুন দল হিসেবে খেলতে নেমেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা।
×