ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মতিঝিল থেকে ৪শ’ কোটি টাকা ছড়ানোর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

মতিঝিল থেকে ৪শ’ কোটি টাকা ছড়ানোর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মতিঝিলের যে অফিস থেকে নগদ ৮ কোটি টাকা ও ১০ কোটি টাকার চেকসহ বিএনপির তিন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে, সেই অফিস থেকেই জামায়াত-বিএনপি প্রার্থীদের জন্য এবং নাশকতা চালানোর জন্য চার শ’ কোটি টাকা ছড়ানোর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই অফিস থেকে নির্বাচন বানচালের জন্য আরও শত শত কোটি টাকা ছড়ানো হয়েছে। যদিও সঠিক কোন তথ্য মেলেনি এখনও। মাত্র দুই মাস আগেই অফিসটি ভাড়া নেয়া হয়েছে শুধুমাত্র সারাদেশে টাকা ছড়িয়ে নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচালের জন্য। এ খাতে বাজেট ধরা হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। যদিও র‌্যাব মহাপরিচালক বলেছেন, অফিসটি থেকে লক্ষ-কোটি টাকা ছড়ানোর চক্রান্ত ছিল। গত ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে র‌্যাব-৩ এর একটি দল মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় অভিযান চালিয়ে ইউনাইটেড কর্পোরেশন নামে একটি আমদানি-রফতানি প্রতিষ্ঠানের এমডি আলী হায়দার (২৪), তার সঙ্গে থাকা গুলশানের আমেনা এন্টারপ্রাইজের এমডি (প্রশাসন) জয়নাল আবেদিন (৪৫) ও আমেনা এন্টারপ্রাইজের ঝালকাঠি অফিসের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেনকে (৩৮) গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে নগদ ৮ কোটি টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। টাকার সঙ্গে লন্ডনে পলাতক একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন, হাওয়া ভবনের কর্ণধার পলাতক তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ও তার এপিএস শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী নুর উদ্দিন অপুর নির্বাচনী লিফলেট উদ্ধার হয়। টাকার সঙ্গে ঢাকার একটি আসনের সব ভোটারের নাম-ঠিকানা সম্বলিত একটি তালিকাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় দায়ের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলায় আটকদের ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, জব্দ হওয়া টাকার বিষয়টি তারা তদন্ত শুরু করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি তদন্ত করছে। জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তরফ থেকেও ঘটনাটি তদন্ত হচ্ছে। আটকদের বিষয়ে র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, টাকাগুলো বিএনপি প্রার্থী নুরউদ্দিন অপুর পক্ষে ভোট কেনার জন্য ও সারাদেশে নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচালের জন্য দুবাই থেকে অবৈধ হুন্ডি ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রভাবিত করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অফিসটি থেকে টাকা ছড়ানো হয়েছে। মাত্র দুই মাস আগে অফিসটি ভাড়া নেয় ওরা। গত দুই মাসে অফিসটি থেকে ১৫০ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো হয়েছে। যেসব এলাকায় টাকা পাঠানো হয়েছে সেসব এলাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। র‌্যাব সূত্র বলছে, টাকাগুলো দুবাই থেকে স্বর্ণ চোরাকারবারি মাহমুদুল হাসান পাঠিয়েছে। সে একাধিক চোরাচালান মামলার আসামি। অন্যদিকে ইউনাইটেড কর্পোরেশনের মালিক বরিশালের ঝালকাঠি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। জয়নাল আবেদীন হাওয়া ভবনের কর্ণধার বর্তমানে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের দুই সহযোগী বিএনপি কর্মী শহীদুল ইসলাম ও মুহিতকে ভোটারদের মধ্যে টাকা বিলির সময় চার লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ওই টাকাগুলোও বিদেশ থেকে এসেছে। বৃহস্পতিবার র‌্যাব ডিজি কাওরানবাজারে নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সারাদেশে নাশকতা চালাতেই অফিসটি থেকে টাকা ছড়ানো হচ্ছিল। তিনজনকে গ্রেফতারের পরপরই অফিসটি থেকে দেড় শ’ কোটির টাকা ছড়ানোর তথ্য মেলে। এরপর আটকদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অফিসটি থেকে আরও আড়াই শ’ কোটি টাকা ছড়ানোর তথ্য মিলেছে। অফিসটি অবশ্য টাকা ছড়ানোর কোন তথ্য রাখে না। ধারণা করা হচ্ছে, চার শ’ কোটি টাকা বিলির বিষয়ে তথ্য মিলেছে। আরও হয়তো শত শত কোটি টাকা ছড়ানো হয়েছে, যার কোন তথ্য নেই। সার্বিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, অফিসটি থেকে লক্ষ-কোটি টাকা সারাদেশে ছড়ানোর ষড়যন্ত্র ছিল। ওসব টাকা দিয়ে সারাদেশে নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা ছিল।
×