ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসএমএসে ভোট চাইছেন বিএনপি প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

এসএমএসে ভোট চাইছেন বিএনপি প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোটের মাঠে একের পর এক কৌশল বদলাচ্ছে বিএনপি। এবার রাস্তায় না নেমে কিংবা বাড়ি বাড়ি না গিয়ে মোবাইল খুদে বার্তায় (এসএমএস) ভোট চাইছেন ভোটারদের কাছে। অবশ্য গ্রাহকের নাম্বার রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের কাছে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে কোন কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে। ভোটের প্রচারের শেষ সময়ে এসে বিএনপি প্রার্থীরা নতুন এই কৌশল অবলম্বন করেছে। সাধারণত পেশাজীবীদের নানা সংগঠনে ভোট চাইতে এসএসএস ব্যবহার করা হয়। জাতীয় নির্বাচন বৃহৎ পরিসরে হয়ে থাকে। একটি আসনে লাখ লাখ ভোটার থাকায় এসএমএস দিয়ে কোন প্রার্থী ভোট চান না। বুধবার ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস মোবাইল ফোনে এসএমএস করে ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন। আফরোজার এসএমএস এ বলা হয়, নিজের ভোট নিজে দেয়ার অধিকারের লড়াইয়ে শামিল হোন, ধানের শীষে ভোট দিন। এ বিষয়ে আফরোজা আব্বাসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। একই দিন ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান এসএমএস করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রসেনজিৎ পাল নামের একজন এয়ারটেল গ্রাহকের কাছে পাঠানো এসএমএস এ বলা হয় ঢাকা-১০ আসনে আপনার দোয়া ও সমর্থন চাই। প্রসেনজিৎ পাল অভিযোগ করেন, আমি এই অপারেটরের গ্রাহক। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী তারা আমার নাম্বারটি অন্য কাউকে দিতে পারে না। কিন্তু তারা কেন প্রার্থীর কাছে আমার নাম্বারটি হস্তান্তর করেছে সে সম্পর্কে কাস্টমার কেয়ারে জানতে চাইলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে এ ধরনের এসএমএস না গ্রহণ করতে চাইলে তিনি বন্ধ করার জন্য আবেদন করতে পারেন। বিকেলে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে এয়ারটেল কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করা হলে আল ইসলাম নামে একজন নির্বাহী বলেন, তাদের বাল্ক এসএমএস রয়েছে। গ্রাহক চাইলে এখান থেকে এসএমএস ক্রয় করে নিজেরা দিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে এয়ারটেলের নাম্বার থেকেই এসএমএসটি যাবে। এছাড়া আন্দালিব রহমান পার্থও ভোট চেয়ে এসএমএস করেছেন। আব্দুর রহিম নামে গ্রামীণফোনের একজন গ্রাহকেরও প্রশ্ন কিভাবে প্রার্থী তার নাম্বারটি পেয়েছে। আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি নিত্যদিনই কৌশল বদলাচ্ছে। গত দু’দিন ধরে বিএনপি কর্মীদের কাছ থেকে পুলিশ বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটের মাঠে নিজেদের পক্ষে রায় নেয়ার জন্য কয়েক শ’ কোটি টাকা বিতরণ করার টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা স্বীকারও করেছেন। এই টাকা বিএনপির পক্ষ থেকে বিলি করার জন্য তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এদিকে শেষ সময় এসে ঢাকার প্রায় সব আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সমর্থকরা মিছিল সমাবেশ করেছেন। বুধবার পল্টনে প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী রাশেদ খান মেননের পক্ষে বিশাল মিছিল হয়েছে। একই ভাবে ঢাকার সব আসনের প্রার্থীরা মিছিল সমাবেশ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত চলবে প্রচার। যদিও শুক্রবার সকাল আটটায় নির্বাচনী প্রচার শেষ হচ্ছে। আবার আচরণবিধি অনুযায়ী রাত আটটার পর আর প্রচার চালানোর সুযোগ না থাকায় বৃহস্পতিবার রাত আটটায় প্রচার শেষ হবে। কাজী ফিরোজ রশিদ ঢাকা-৬ এর নির্বাচনী প্রচারের পথ সভায় বলেছেন, বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে এবার নির্বাচন করছেন এমন কিছু প্রার্থী যারা জীবনেও বিএনপি করেননি। ওরা বিএনপির জার্সি নকল করে মাঠে নেমেছেন। এদের নিজস্ব কোন মার্কা নেই, তাই ধানের শীষের উপর ভর করে চলছেন। এখানে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিএনপির মাঠপর্যায়ের কেউ চেনে না। এখানে যদি বিএনপির কোন পরিক্ষিত বন্ধু আমার প্রতিপক্ষ হতেন তা হলে আমি যেমন খুশি হতাম, পাশাপাশি বিএনপির ত্যাগীনেতাও উৎসাহ পেতেন। নকল করা শিক্ষার্থীদের কাছে জাতি যেমন ভাল কিছু আশা করতে পারে না তেমনি জার্সি নকল করে নিজেকে জাহির করা নেতাদের কাছে জনগণ ভাল কিছু আশা করতে পারে না। বুধবার তিনি তার নির্বাচনী এলাকা ৪১নং ওয়ার্ডের জয়কালী মন্দির, হাটখোলা, টিপু সুলতান রোড, দক্ষিণ মুহসুন্দি এলাকায় গণসংযোগ, প্রচার মিছিল ও বেশ কয়েকটি পথসভায় এলাকাবাসীদের উদ্দেশ্য এসব কথা বলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের মহানগর নেতা হেদায়াতুল ইসলাম স্বপন, আশিকুর রহমান লাভলু, আইয়ুব আলী খান, স্থানীয় কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলো, হাজী ফারুকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও জাতীয় পার্টির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী কাজী ফিরোজের সঙ্গে গণসংযোগে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা-৪ আসনের মহাজোটের প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেছেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, অগ্রগতি হয়। আরেকটি জোট ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের চাকা থমকে যায়। তাই ৩০ ডিসেম্বর উন্নয়নের স্বার্থে জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মহাজোট সরকার বিগত দশ বছরে যে উন্নয়ন করেছে তা এশিয়ার জন্য মাইফলক। পাকিস্তানের রাজনৈতিকদলগুলোও বাংলাদেশের মতো উন্নত দেশ হতে চায়। আমাদের অগ্রগতিতে কিছু দেশীয় কুচক্রীর পাশাপাশি কিছু বিদেশী চক্রও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে। বুধবার বিকেল ৩টায় ৪৭নং ওয়ার্ডের আইজি ট্রাক স্ট্যান্ডে এক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় কাউন্সিলর নাসির ভূইয়ার সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন থানা সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবু প্রমুখ। ঢাকা-১৫ আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোট মনোনীত সিপিবির কাস্তে মার্কার প্রার্থী ডাঃ আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল সকাল থেকে গণসংযোগ করেছেন সেনপাড়া, ১০ নম্বর এবং বিকেল ৪টায় কাফরুলের হাইটেক হাসপাতাল থেকে উত্তর ও দক্ষিণ কাফরুল এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগ করেন। এসব পথসভায় বক্তব্য রাখেন- ঢাকা কমিটির সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাবেক ছাত্র নেতা সুলতানা ফেরদৌসি পলি প্রমুখ। ঢাকা-১৩ আসনে কাস্তে মার্কার প্রার্থী খান আহসান হাবীব লাবলুর দিয়াবাড়ী, চাঁদ উদ্যান এলাকায় গণসংযোগে ও পথসভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা কমিটির সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন, সিপিবি নেতা প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গুলী, জামাল হায়দার, মোতালেব হোসেন, আলমগীর কবীর, আহাম্মদ তালাত তাজীব, ছাত্রনেতা জহর লাল রায়, ঋদ্ধ্য অনিন্দ্য প্রমুখ। ঢাকা-৬ আসনে সিপিবি ও বাম জোটের কাস্তে মার্কার প্রার্থী আবু তাহের হোসেন বকুলের পক্ষে ৪০নং ওয়ার্ড, বেগম বাজার, দয়াগঞ্জ, শরৎ দাশ গুপ্ত রোড এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন সিপিবি নেতা বিকাশ সাহা, ঢাকা কমিটির ত্রিদিব সাহা, সাইফুল ইসলাম সমীর, যুবনেতা গোলাম রাব্বী খান, এ্যাডভোকেট নেসার আহমেদ, যুবনেতা আনোয়ার হোসেন, ছাত্রনেতা দীপক শীল, ফয়জুর মেহেদী, প্রিতম ফকির প্রমুখ। ঢাকা-১৪ আসনে কাস্তে মার্কার প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে গুদারাঘাট এ ব্লক, বি ব্লক এলাকায় গণসংযোগ করা হয়। এ সময় বিভিন্ন স্থানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন- প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা সিদ্দিক আহাম্মেদ, আইনজীবী মনোয়ার হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা সাজ্জাদ নিশি, সিপিবি নেতা জামাল হোসেন, যুবনেতা পাভেল আহাম্মেদ, আলী আকবর, উদীচী নেতা মৃদুলা মেঘ প্রমুখ। ঢাকা-১ আসনে কাস্তে মার্কার প্রার্থী আবিদ হোসেন নবাবগঞ্জ সুজাপুর, বাড়ুয়াখালি, শিকারি পাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় পথসভায় বক্তব্য রাখেন- আবিদ হোসেন, মোবারক হোসেন ঝন্টু, শেখ হান্নান, ছাত্রনেতা ফাহিম হোসেন পবন প্রমুখ। ঢাকা-২ আসনে কাস্তে মার্কার বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী সুকান্ত শফী চৌধুরী কামরাঙ্গীরচর ঝাউলা হাঁটি এলাকায় গণসংযোগ করেন সিপিবি নেতা মোঃ জামাল, টেনারি শ্রমিক নেতা মোঃ কুদ্দুস মিয়া, ছাত্রনেতা তাহসান, সজল আহাম্মেদ প্রমুখ সঙ্গে ছিলেন।
×