ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন ক্রিকেটার চামেলী

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১ নভেম্বর ২০১৮

বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন ক্রিকেটার চামেলী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ জাতীয় মহিলা দলের সাবেক ক্রিকেটার অসুস্থ চামেলী খাতুনের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশরেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বুধবার চামেলীকে তার বাসায় দেখতে যান মেয়র লিটন। এ সময় তাৎক্ষণিক তিনি চামেলীর উন্নত চিকিৎসার জন্য নগদ এক লাখ টাকা প্রদান করেন। আট বছর থেকে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়াসহ মেরুদ-ে হাড়ের ব্যথা নিয়ে বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন চামেলী। মেরুদ-ে দুই হাড়ের ফাঁকে থাকা নরম ডিস্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অবশ হয়ে যাচ্ছে তার পুরো ডান পাশ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে চামেলীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে। লিটন সাংবাদিকদের বলেন, অসুস্থ ক্রিকেটারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাকে দেখতে এসেছি। চামেলী ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম, তারা নিদারুণ সঙ্কটে আছে। চামেলী খাতুনের চিকিৎসার পুরোপুরি ব্যয়ভার মেটাতে যা করা দরকার করব। সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করব। জরাজীর্ণ যে বাড়িতে তারা বসবাস করছেন সেটি নিয়ে কি করা যায় পরবর্তীতে সেটাও করব। এছাড়া চামেলীর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করবেন বলে জানান মেয়র লিটন। এদিকে নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার চামেলী খাতুনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। সর্বশেষ তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। গত ২০ দিন ধরে একেবারে বিছানায় এই অলরাউন্ডার। খেলাধুলা তো দূরের কথা স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারছে না। বিনা চিকিৎসায় নিভে যেতে বসেছে মাঠ কাঁপানো এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। সংসারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। এই কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন তিনি। তার এ আকুতিতে সাড়াও মিলেছে শেষ পর্যন্ত। এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন চামেলী। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান চামেলীকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এগিয়ে এসেছেন সমাজের বিত্তবানরাও। সর্বশেষ বিসিবিও পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আবারও আশায় বুক বাঁধছেন চামেলী খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার এই কঠিন সময়ে এগিয়ে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফোন করেছেন সাকিব আল হাসানও। তারা দু’জনই আমাকে সর্বাত্মক আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। চামেলী খাতুন চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। ক্রিকেটার হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন, কাঁপন ধরিয়েছেন বিরোধী শিবিরে। এখন তিনিই পরাস্ত ইনজুরিতে। চামেলী রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকার রুস্তম আলী ও মনোয়ারা বেগমের মেয়ে। ছয় বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট চামেলী। বৃদ্ধ বাবা মা ছাড়াও স্বামী পরিত্যক্তা বোনকে নিয়ে সংসার তার। খেলা আর সংসার চালাতে গিয়ে নিজের ঘর বাঁধার সময় মেলেনি তার। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক রকম ঘরবন্দী হয়ে রয়েছেন চামেলী। তিনি জানান, ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে অপরিহার্য সদস্য ছিলেন তিনি। তুখোড় এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে নামতেন তিনে। মিডিয়াম পেসার হিসেবে জ্বলে উঠতেন দলের প্রয়োজনে। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন। দুই মৌসুম শেখ জামালের ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। নৈপুণ্য দেখিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের এ্যাথলেটিক্স ও ফুটবলেও। কিন্তু বছর আটেক আগের ইনজুরি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার ফেলেছে হুমকিতে। থেমে গেছে ক্রিকেটের আয়ে চলা সংসারের চাকা। চামেলী জানান, ওয়ানডে স্ট্যাটাস সামনে রেখে দলের প্রস্তুতি চলছিল। ফিল্ডিং প্রশিক্ষণ চলাকালীন পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে আবাহনী ক্রীড়াচক্র মাঠে প্রশিক্ষণে গিয়েও আরেক দফা আঘাত পান। কিন্তু কখনই যথাযথ চিকিৎসা নেননি। পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে নিজের চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। চামেলী আনসার বাহিনীর সদস্য। কর্মস্থলেই অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। মাঝে রাজশাহীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরীক্ষায় সেখানেই ধরা পড়ে এই অসুস্থতা। দ্রুত উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।
×