শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ আসরের শুরুতে রশিদ খান বলেছিলেন, তার দল শিরোপা জিতলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। না আফগানরা শিরোপা জেতেনি। তবে গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কাকে বিদায়ের পর সুপারফোরে আনুষ্ঠানিকতার শেষ ম্যাচে শক্তিধর ভারতের সঙ্গে ‘টাই’ পর্যন্ত আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবীরা লাখো ভক্তের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানই একমাত্র দল যাদের কেউ একতরফাভাবে হারাতে পারেনি। প্রতিটি ম্যাচে দারুণ খেলার পর একটুর জন্য হার মানে তারা। গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ৯১ রানে, বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেয়ার দিনে জয়টা ছিল আরও বড় ১৩৬ রানে। সুপারফোরে পাকিস্তানের কাছে ৩ উইকেটে হার মাত্র ৩ বল আগে, বাংলাদেশের কাছে শেষ বলে হারটা ৩ রানে। আশ্চর্যের সেখানেই শেষ নয়, টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর মোহাম্মদ শাহজাদের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারতের সঙ্গে ‘টাই’ করে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচটারই জন্ম দেয় আফগানরা।
ঐতিহাসিকই বটে! জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও জয় না পাওয়াটা এক অর্থে ভারতের জন্য হারই! অন্যদিকে এ টাইকে জয় হিসেবেই দেখছেন আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগর আফগান, ‘আজকের উইকেট আমাদের জন্য ভাল ছিল। কারণ স্পিনিং উইকেট ছিল। বিশেষ করে শাহজাদের জন্য। হ্যাঁ, যখন আপনি ভারতের মতো দলের সঙ্গে টাই করবেন তখন তা জয়ের মতোই। বলতে পারেন জয়তুল্য। তারা এটি সহজেই জিততে পারত। যা হয়েছে তা আমাদের সমর্থকদের মন জুড়াবে।’ সুপারফোরের শেষ ম্যাচে ভারতের সঙ্গে টাইয়ের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটি করে দলকে জয়ের পথে রেখেছিলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। শেষ ম্যাচে ছুঁয়েছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগার (১১৬ বলে ১২৪)। রীতিমতো ভারতীয় বোলারদের চোখের পানি, নাকের পানি এক করে ছেড়েছেন এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ‘শাহজাদ খুবই পজিটিভ ক্রিকেট খেলেছে। আজ আমরা আসল শাহজাদকে দেখেছি। দুর্ভাগ্যবশত তা দেখা গেল শেষ ম্যাচে।’ ড্যাশিং ওপেনার সম্পর্কে বলেন অধিনায়ক আসগর।
আফগানিস্তান প্রশংসা পেয়েছে হঠাৎই এদিন ভারতকে নেতৃত্ব দিতে নামা মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে। ভারতের দু’দুটি বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক, ‘তাদের ক্রিকেটাররা অনেক উন্নতি করেছে। যেভাবে তারা এশিয়া কাপ শুরু করেছিল সেটি অব্যাহত রেখেছে। এটা প্রশংসনীয়। আমরা তাদের ক্রিকেট উপভোগ করছি। এটি এমন একটি দেশ যাদের উত্থানটা দারুণ। তারা সত্যিই অনেক ভাল ক্রিকেট খেলেছে। তারা ব্যাটিংও অনেক ভাল করেছে। উইকেট পরের দিকে স্লো হচ্ছিল, কিন্তু তারা চমৎকার বল করেছে ম্যাচজুড়ে। তাদের ফিল্ডিংও ছিল আটোসাঁটো।’ আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এদিন বিশ্রামে ছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, সহ-অধিনায়ক শিখর ধাওয়ানসহ নিয়মিত দলের প্রায় পাঁচজন। ফলে ক্রিকেট ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে ২০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পান ধোনি। ভারত তো বটেই, ইতিহাসেরই অন্যতম সফল অধিনায়ক অত্যন্ত কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে আফগানদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। সবমিলিলে ধারাবাহিক পারফর্মেন্সে এবারের এশিয়া কাপে সত্যিকার অর্থেই ক্রিকেট দর্শকদের হৃদয় কেড়েছে আফগানিস্তান। ছয় দলের এশিয়া কাপে আফগানিস্তানকে কেউ হেলায় উড়িয়ে দেয়ার সাহস পায়নি। রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান, মোহাম্মদ নবীরা যে কোন কিছু করে দেখাতে পারে এ কথা তো আর কারও অজানা নয়। আফগানরা আসলে এশিয়া কাপ জুড়ে পারফর্ম করে গেছে ঠিক বড় দলের মতো। গ্রুপ-পর্বে প্রথম দুই ম্যাচেই দাপুটে জয়। এরপর সুপারফোরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কাছে জিততে জিততে হেরে যাওয়া, আর শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় এই ‘টাই’। ধারাবাহিক পারফর্মের কথা বললে ভারতের পর আফগানদের কথাই বলতে হবে। গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কাকে ৯১ রানে উড়িয়ে আসর শুরু করেছিল আফগানিস্তান। এরপর গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে তারা হারায় ১৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে।
সুপারফোরে আসগর আফগানদের সামনে প্রথম প্রতিপক্ষ হয়ে আসে পাকিস্তান। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সমাপ্তি হয় শেষ ওভারে। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতে নেয় ৩ উইকেটে। বাংলাদেশের বিপক্ষেও নিজেদের দ্বিতীয় সুপারফোর ম্যাচটিও গড়ায় শেষ ওভারে। বলা ভাল শেষ বলে। মুস্তাফিজুর রহমানের ‘ম্যাজিক্যাল’ ওভারে যেখানে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের জয় ৩ রানে। আফগানিস্তান শেষ বলের রোমাঞ্চ উপহার দিল ভারতের বিপক্ষেও। যেখানে শেষ পর্যন্ত ‘টাই’-এ সফল তারা। আফগানদের ধারাবাহিক না বলে উপায় কী? বড় মঞ্চে হৃদয় জয় করে নিয়েছেন রশিদ, নবীরা।