ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়া কাপে প্রথম দুই ম্যাচ নিয়েই ভাবছেন তামিম

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৭ আগস্ট ২০১৮

এশিয়া কাপে প্রথম দুই ম্যাচ নিয়েই ভাবছেন তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাফল্য পেতে হলে যে পরিশ্রম কতটা জরুরী তা বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল ভালভাবেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে দেশে ফিরে ক্রিকেটাররা ছুটি পেয়েছেন। অন্য ক্রিকেটাররা যেখানে ছুটি কাটাচ্ছেন। সেখানে তামিম ঠিকই ব্যাট নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। এক ঘণ্টা করে ব্যাটিং করে চলেছেন। মঙ্গলবার ব্যাটিং প্র্যাকটিসের পর বৃহস্পতিবারও একই কাজ করলেন। অনুশীলন শেষে আসন্ন এশিয়া কাপ, শেষ হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরসহ অনেক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের জানালেন। তামিমের কাছে এশিয়া কাপে সবার আগে গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই ম্যাচ না জিতলে যে পরের রাউন্ডেই ওঠা হবে না। ‘সুপার ফোর’, ফাইনাল কিংবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হলে যে আগে গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচ জেতা জরুরী। তামিম তাই বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপ নিয়ে জানিয়েছেন, ‘প্রথম দুই ম্যাচ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাই করতে হবে। আমাদের প্রস্তুতিটা হচ্ছে সেই জন্যই। আমরা যদি এখন ফাইনাল কিংবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চিন্তা করি যেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রথম দুই ম্যাচ জিততে হবে। প্রথম দুই প্রতিপক্ষ নিয়েই আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত।’ এবার এশিয়া কাপ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। টুর্নামেন্টের প্রথমদিনেই ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এই দুই ম্যাচ জিতলে ‘সুপার ফোরে’ উঠবে মাশরাফিবাহিনী। ‘সুপারফোরে’ তিনটি ম্যাচ খেলার পর পয়েন্ট তালিকায় সেরা দুইয়ে থাকতে পারলে ফাইনালে খেলা হবে। এর আগে বাংলাদেশ দল দুইবার এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছিল। একবার ২০১৪ সালে ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে, আরেকবার ২০১৬ সালে টি২০ ফরমেটের এশিয়া কাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। এবার টুর্নামেন্টটি হবে ওয়ানডে ফরমেটে। সামনে যে দলই আসুক। সেটি শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান কিংবা অন্য দল; এশিয়া কাপকে অনেক বড় টুর্নামেন্ট হিসেবেই দেখছেন তামিম। বলেছেন, ‘আপনি এশিয়া কাপ খেলবেন। এটা একটি বড় টুর্নামেন্ট। বেশিরভাগ ভাল দলই খেলবে। অন্য গ্রুপে থাকলে সেটাও ট্রিকি হতে পারত। ওই গ্রুপে ভারত-পাকিস্তান আছে। আমাদের কাজ ভাল খেলা। সেরা ক্রিকেট খেলা। আমরা এমন কোন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলব না, যাদের সঙ্গে আমরা এর আগে খেলিনি। আমরা সব প্রতিপক্ষের সঙ্গেই খেলেছি। ভাল খেলে আমাদের দিনে ওদের হারিয়েছি। আশাকরি এই দুইটি ম্যাচে আমরা ভাল প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আমাদের সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করব।’ তামিম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ফিরে এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান এশিয়া কাপেও নিজেকে মেলে ধরতে চান। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ হারের পর যে দল ঘুরে দাঁড়াল, সেই স্মৃতি এখনও তামিমের কাছে তরতাজা। টেস্ট সিরিজ শেষ হতেই ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা দলের সঙ্গে যোগ দেন। ইতিবাচক কথাবার্তা বলেন। যা ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করে। সেই উজ্জীবনী শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোকে বিশেষ অর্জন হিসেবেই দেখছেন তামিম। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের টেস্ট সিরিজ যতটা ভাল খেলা উচিত ছিল, তার আশেপাশেও খেলতে পারিনি। অনেকে উইকেট ও বলের (ডিউক) কথা বলছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমরা এরচেয়ে আরও ভাল খেলতে পারতাম। উইকেট কঠিন ছিল, কিন্তু যেমন খেলেছি এর থেকে ভাল দল আমরা। আর টেস্ট সিরিজের মানসিকভাবে আমরা ডাউন ছিলাম। আমাদের জন্য ওয়ানডে সিরিজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আমরা জানতাম ওয়ানডে ফরমেটে আমরা সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে মাশরাফি ভাইয়ের দলে যোগ দেয়া বড় অবদান ছিল। তিনি হয়তো অন্যের হয়ে ব্যাটিং ও বোলিং করে দেয়নি। কিন্তু তিনি দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিবর্তন করতে অনেক সাহায্য করেছেন। একটা বাজে টেস্ট সিরিজের পর প্লেয়ারদের মধ্যে অনেক নেতিবাচক মনোভাব থাকে, পরিষ্কার মনোভাব থাকে না। তিনি যে ইতিবাচক মনোভাবটা নিয়ে এসেছেন, সেটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটা বড় কারণ ছিল। এরপর যেভাবে করে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটা খেললাম, কঠিন উইকেটে আমরা কোন সময় হাল ছেড়ে দেয়নি। কষ্ট করে উইকেটে ছিলাম আমরা। সেটার ফলাফল পেয়েছি আমরা। এরপর স্বভাবতই দলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমার কাছে মনে হয় এমন টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে ও টি২০তে ফিরে আসা বিশেষ পারফর্মেন্স ছিল।’ প্রথম ওয়ানডে জিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দ্বিতীয় ওয়ানডে হেরে ওয়ানডে সিরিজ হারের মুখেও পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকেও কামব্যাক করেছে দল। কিভাবে সম্ভব হয়েছে? তামিম জানান, ‘আমরা চাচ্ছিলাম প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজটা জয় করে নিতে। কারণ, গায়ানার উইকেট আমাদের হয়ে কথা বলছিল। বল স্পিন করছিল, মাঠ বড় ছিল। সেন্ট কিটস অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফেভারে ছিল। সেকেন্ড ম্যাচ হারার পর মাশরাফির ভাইসহ বসেছিলাম, তার অনেক বড় ইনপুট ছিল। আমরা যদি আগে থেকেই চিন্তা করে নেই যে ওরা আমাদের থেকে এগিয়ে আছে তাহলে আমরা খেলার আগেই হেরে গেছি, তাহলে শেষ ওয়ানডে খেলার কোন মানে হয় না। আমরা আগে চিন্তা না করে মাঠে পারফর্ম করে দেখাতে চেয়েছি।’ দলে ব্যাটিং কোচ পদে নেইল ম্যাকেঞ্জি যোগ দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজের সময় তিনি যোগ দেন। ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খুব বেশিদিন কাজ করার সুযোগ হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এ ব্যাটসম্যানের। তবে কথা হয়েছে। তামিমের কাছে মনে হয়েছে ম্যাকেঞ্জির বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক কিছু দেয়ার আছে। ব্যাটসম্যানদেরও অনেক কিছু শেখার আছে, ‘আমার কাছে মনে হয় তার বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক কিছু দেয়ার আছে। যতদিন ওর সঙ্গে কাজ করেছি আমার মনে হয় হয়েছে সে দারুণ একজন কোচ। সে যেভাবে ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা করে, আমার কাছে মনে হয় আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে তার কাছ থেকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মুখিয়ে আছি তার সঙ্গে কাজ করার জন্য। সে আমাকে যেসব কথা বলেছে তা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে খুবই ভাল লেগেছে। আমি ওর কথাগুলো শুনে নিজেকে আরও শাণিত করতে পারি তাহলে, আমার মনে হয় আমি আরও ৫-১০% আরও উন্নতি করতে পারব। ওই উন্নতি করার জায়গাটা আছে। আশাকরি ওর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু নিতে পারব এবং অন্যরাও একই রকমভাবে চিন্তা করবে।’
×