ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বন্দরে বিদেশী বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্দরে বিদেশী বিনিয়োগ

.

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের চারটি টার্মিনালেই বিদেশী বিনিয়োগ হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। বিদেশীরা বিনিয়োগ করলেও বন্দরের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে। ফলে, বাংলাদেশীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দিবসে এটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর। ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল কর্ণফুলী নদীর মোহনায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর। ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা জানব, ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার অসম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধিত হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। শুরু থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার (৮৮ হাজার কোটি টাকা) বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। প্রকল্পের আওতায় জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য চারটি টার্মিনাল নৌপথ তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চতুর্থ টার্মিনাল হিসেবে গ্যাস অয়েল টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগও।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) চার হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে; যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় শতাংশ বেশি। এটিও বড় অর্জন। সত্যিকার বন্দর নগরের রূপ দেখা যাবে পাঁচ বছর পর। তখন চট্টগ্রাম বন্দর হবে হাব পোর্ট। কভিড অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতি মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেনার হ্যান্ডলিংয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। সর্বোচ্চ দুই দিনে জাহাজ লোড-আনলোড শেষ করে পরবর্তী গন্তব্যে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে কনটেনার পরিবহনের বৈশ্বিক তালিকায় আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না কেন চট্টগ্রাম বন্দর, এটি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া চাই। ২০১৩ সালে কনটেনার পরিবহনে বিশ্বে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল ৮৬তম। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল ২০১৯ সালে। ২০২০ সালে প্রকাশিত তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৫৮তম। চার বছর আগের সেই অবস্থানে আর ফিরে যেতে পারেনি এই বন্দর। আমরা আশা করব, বিদেশী বিনিয়োগ সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হবে।

×