ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এনসিটিবির দায়

-

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৬ মে ২০২৪

এনসিটিবির দায়

সম্পাদকীয়

বছরের শুরুতে সারাদেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে তুলে দেওয়া বর্তমান সরকারের একটি অসাধারণ সাফল্য বলে বিবেচিত। বিশ্বে এর নজির কোথাও নেই বললেই চলে। এই কর্মসূচি প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সুবিস্তৃত। ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাও এর অন্তর্ভুক্ত।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক, ইবতেদায়ী ও মাধ্যমিক স্তরে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই ছাপানো হয়েছে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য। এত বিপুল সংখ্যক বই মুদ্রণসহ শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম প্রণয়ন, সম্পাদনা, পরিমার্জন, মুদ্রণ সর্বোপরি বিতরণের দায়িত্ব জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবির। 
দুঃখজনক হলো, মাথাভারি সংস্থাটির পদে পদে ব্যর্থতার ছাপ এবং দুর্নীতির অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে প্রতিবছরই। পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ, বাঁধাই, ভুলভ্রান্তি, নিম্নমানের ছবি ও ছাপা সর্বোপরি মর্জিমাফিক কারিকুলাম প্রণয়নের অভিযোগ উঠে থাকে এনসিটিবির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা ও লেখালেখি হয় গণমাধ্যমে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, সংস্থাটির আদৌ কোনো বোধোদয় ঘটে না।

আপাদমস্তক দুর্নীতি-অনিয়মে জর্জরিত এনসিটিবির বিপুুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোথাও কোনো জবাবদিহির বালাই নেই। একই সঙ্গে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী, মুদ্রাকর ও কাগজ সরবরাহকারীদের যোগসাজশ ও জালজালিয়াতি। এই দুষ্টচক্র যতদিন থাকবে এনসিটিবিতে, ততদিন পর্যন্ত এহেন দুর্নাম বয়ে বেড়াতে হবে সংস্থাটিকে। 
নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অদ্যাবধি এনসিটিবিতে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। সরকারের এ খাতে প্রতিবছর প্রায় ব্যয় হয় ১১শ’ কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের সুবিশাল কর্মকাণ্ড। প্রায় চার শতাধিক বই মুদ্রণ ও সরবরাহের কাজে জড়িত। এত বিপুল সংখ্যক বইয়ের কাগজ কিনে দেয় এনসিটিবি।

তবে এক শ্রেণির অসাধু প্রিন্টার্স তথা মুদ্রক সরকারের ভালোমানের কাগজ খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করে নিম্নমানের কাগজ কিনে বই ছাপে। ফলে, স্বভাবতই ছবিসহ মুদ্রণ সৌকর্যের বিনাশ ঘটে। এর পাশাপাশি নিম্নমানের ছাপা, বানান বিভ্রাট, অস্পষ্ট ছবি, দুর্বল বাঁধাই এমনকি ফর্মার হেরফের তো আছেই। দেশে যে প্রতিবছর পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, মুদ্রণ ও সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকে তার ভয়াবহ ও আশঙ্কাজনক বিবরণ মেলে টিআইবির প্রতিবেদনে। 

ইতোপূর্বে মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কট্টর মতাদর্শ ও পরামর্শে পাঠ্যপুস্তকের মর্জিমাফিক পরিবর্তনসহ ভুল মুদ্রণের অভিযোগ উঠেছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। এনসিটিবির এই বিষয়টি এক রকম ওপেনসিক্রেট, যা নিয়ে প্রতিবছরই বিস্তর লেখালেখি হলেও প্রায় কোনো প্রতিকারই মেলে না। শিক্ষামন্ত্রী এ নিয়ে নানা কথা বললেও প্রতিষ্ঠানটির সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এনসিটিবির ভাবমূর্তি রক্ষার্থে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট, সতর্ক ও উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

×