ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ৬ মে ২০২৪

ঢাকার দিনরাত

অসহায় ব্যক্তিদের আশ্রয় ও সাহায্যের মতো মানবিক কাজের ডিজিটাল

দুস্থ, অসহায় ব্যক্তিদের আশ্রয় ও সাহায্যের মতো মানবিক কাজের ডিজিটাল কৌশলী প্রচারের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত ও আলোচিত হন মিল্টন সমাদ্দার। ফেসবুকে তাকে অনুসরণ করেছেন কোটি মানুষ। মানবসেবার আড়ালে তিনি দুস্থ মানুষের ক্ষতিই করতেন, আবার তাদের দুর্দশা প্রদর্শন করে দান-অনুদান গ্রহণের মাধ্যমে নিজের পকেট ভারি করতেন। দেরিতে হলেও এমন মহাপ্রতারকের মহানিষ্ঠুরতা সম্পর্কে দেশবাসী জানতে পারল

দেড়বছর আগে একবার ফুটপাত দখলকারীদের তালিকা চেয়েছিলেন আদালত, তা এখনও জমা পড়েনি। রাজধানীর ফুটপাত অবৈধভাবে দখল ও ভাড়া দেওয়ার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের তালিকা দাখিল করতে ফের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া দখলকারীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। দেখা যাক এবার কিছু অগ্রগতি হয় কিনা।

মুখোমুখি ট্রেন ॥ নাজেহাল যাত্রীসাধারণ

শুক্রবার গাজীপুরে জয়দেবপুর স্টেশনের দক্ষিণে আউটার সিগন্যালে একটি পণ্যবাহী ট্রেন এবং অপর যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। সিগন্যালম্যানের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মালবাহী ট্রেনের পাঁচটি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য শিডিউল বিপর্যয় বিড়াট ক্ষতি। এই গরমের ভেতর যাত্রীদের ভোগান্তি। কমলাপুরে ট্রেনের আশায়, কিংবা ট্রেনে ওঠার পর গন্তব্যে পৌঁছানোর বেলায় কয়েক ঘণ্টা করে নষ্ট হওয়া দুঃখজনক। একজন যাত্রী তার অভিজ্ঞতা এভাবে তুলে ধরেন: ‘অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে সরিষাবাড়ী যাচ্ছি।

যাচ্ছি না বলে অবশ্য বলা উচিত, যেতে চেয়েছিলাম। কমলাপুর থেকে ট্রেন ছাড়ল দুই ঘণ্টা দেরিতে। মানে সকাল সাড়ে ১১টার ট্রেন দুপুর দেড়টায়। এখন প্রায় ৬টা বাজে। এতক্ষণে টঙ্গী পর্যন্ত আসতে পেরেছি। টঙ্গী স্টেশনে তিন ঘণ্টারও বেশি দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন। কখন আবার ছাড়বে, আদৌ ছাড়বে কি না...কোনো ঘোষণার তো প্রশ্নই ওঠে না, তা জানানোর মতো দায়িত্বশীল কাউকেও পেলাম না।’ 
এটি পড়ে রসিক একজন মন্তব্য করলেন: কবি নজরুল যদি আজ বেঁচে থাকতেন, আর জানতেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের নামে একটা ট্রেন এমন যা তা সেবা দিচ্ছে, বিদ্রোহের কী রূপ হতো কে জানে! 

মে দিবসে রাইজ অ্যান্ড শাইন 

দারিও ফো নোবেল পুরস্কার পান ১৯৯৭ সালে, সে সময়ে বিটিভিতে আমার সাহিত্য অনুষ্ঠানে মঞ্চে অভিনীত তার নাটকের দৃশ্য দেখাতে চেয়েছিলাম। দূতাবাসেও চিঠি দিয়েছিলাম, কেননা সে কালে ইউটিউব ছিল না। শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারিনি। এর অনেক বছর পরে ঢাকার মঞ্চে দারিও ফো’র নাটক প্রদর্শিত হতে শুরু করে। রাইজ অ্যান্ড শাইনের নাট্যকার অবশ্য দারিও ফো একা নন, তার স্ত্রী ফ্রাঙ্কা রামেও। একক অভিনয়সমৃদ্ধ নাটকটি মঞ্চে এনেছে বটতলা।

বটতলার প্রতিটি নাটকই বক্তব্য সম্পন্ন। একইসঙ্গে উপভোগ্যও। কমিটমেন্ট ও ধারাবাহিকতার কারণে দলটি ঢাকার মঞ্চে সমীহ আদায় করে নিয়েছে। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ও নাট্যকার আবদুস সেলিম রাইজ অ্যান্ড শাইন নাটকটি রূপান্তর করেছেন। বলে না দিলে বোঝে কার সাধ্যি যে এটি বিদেশি নাটক! বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকের প্রতিদিনের বৃত্তবন্দি জীবননির্ভর নাটকটি অভিনয়গুণেই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মে দিবসে সন্ধ্যায় নাটকটি দেখতে গিয়েছিলাম। জানলাম সেদিন দশজন রিক্সাচালক নাটক দেখে গেছেন।

আমার তো মনে হলো, গার্মেন্ট মালিকদের এটি দেখানো দরকার, আরও দরকার নারীশ্রমিকদের স্বামীদের দেখানো। সে যাক, একক অভিনয় নিঃসন্দেহে জটিল ব্যাপার, কেননা এতে অনুপস্থিত অপর চরিত্র বা চরিত্রসমূহের রূপায়নেরও প্রয়োজন পড়ে। শুধু শরীরী-ভাষা নয়, বাচনেও ভিন্নতা আনা লাগে। একঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে একটানা অভিনয় করে যেতে হয়, যা সার্বিক শক্তিমত্তারই বিষয়।

বলতে প্রলুব্ধ হচ্ছি, সমকালে ঢাকার মঞ্চে যে ক’জন অভিনয়শিল্পী একক অভিনয়ের দৃষ্টান্ত রেখেছেন রুমার বাস্তবানুগ অভিনয় দক্ষতা তাদের ভেতর সন্দেহাতীতভাবেই তাকে শীর্ষে নিয়ে এসেছে। তার কাছে দর্শকের প্রত্যাশা বাড়বে, আগামী দিনে ভিন্নধর্মী চরিত্রে একক অভিনয় তার জন্যেও চ্যালেঞ্জের হবে।   

মধ্যবিত্তের বৃত্তান্ত

বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। একইসঙ্গে চিন্তা উদ্রেককারীও বটে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রধান ব্যক্তি উপার্জনহীন অবস্থায় কতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং নিঃশব্দে নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, সেটি জানলে আমরা ব্যথিত হই। আরও কষ্ট লাগে যখন জানা যায় সেই অসহায় ব্যক্তি প্রিয় সন্তানদেরও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। এটি অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যহীনতার পরিচয়। কিন্তু সুস্থ সবল সুখী একজন মানুষ কিভাবে অমন দশার শিকার হন, সেটিও আমাদের বিবেচনা করে দেখতে হবে। 
মশিউর রহমান নামে একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সুন্দর সংসার চালাচ্ছিলেন।  ২০১৭ সালে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে মশিউর দক্ষিণখানে তিন কাঠা জমি কেনেন। তবে জমি নিবন্ধনের সময় জানতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও ওই জমির নিবন্ধন তিনি পাননি। করোনাকালে মশিউরের চাকরি চলে যায়। এরপর শেয়ার বাজারে পুঁজি খাটিয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। স্ত্রী সংসারের হাল ধরেন। শুরু করেন টিউশানি। আগেও তিনি বেশ ক’বছর কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেছেন। 
স্ত্রী মজিদা খাতুনের ধারণা, আর্থিক অনটনের কারণে তার স্বামী ছেলেকে (১৮) খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও খুন করতে চেয়েছিলেন। স্বামী–সন্তান হারিয়ে বিপর্যস্ত মজিদা খাতুন টাকার অভাবে ঢাকার বাসা ছেড়ে অসুস্থ মেয়ে সিনথিয়াকে (১৩) নিয়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় চলে গেছেন। একদিন কত স্বপ্ন বুকে নিয়ে তিনি স্বামীর হাত ধরে এই ঢাকা শহরে এসেছিলেন।

এভাবে তার করুণ প্রস্থান ঘটল। সমাজের যারা বিবেকের ভূমিকায় আছেন, তাদের এ নিয়ে ভাবতে হবে। নীরবে ধ্বংসের দিকে চলে যাওয়া মশিউরদের কী করে বাঁচানো যায় তার একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে। সবার আগে চাই এই মশিউরদের শনাক্ত করা। 

মহাপ্রতারক মিল্টনের নিষ্ঠুরতা

রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দারের কাছ থেকে কী তথ্য মিলল, সে বিষয়ে জানার আগ্রহ আছে অনেকের। রবিবার এ কলাম লেখার ফাঁকে তারই প্রতীক্ষা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত বিকেলের দিকে নিউজ ব্রেক করেছে। পত্রিকায় লিখে কিছু হয় না যারা বলেন, তাদের ভুল এবার ভাঙবে। মিল্টনের কুকীর্তি ফাঁস করেছিল গণমাধ্যমই। এরপর পুলিশ তাকে ধরেছে। প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আরেকটা কথা না বললেই নয়। আন্তরিকভাবে যারা মানবসেবায় নিয়োজিত আছেন, মিল্টনের প্রতারণা তাদের যেন বিপদগ্রস্ত না করে।

সমাজে নিশ্চয়ই দু’চারটা মিল্টন রয়েছে, তার ‘ছোট ভাই’ও হয়তো আছে শত শত। কিন্তু সারাদেশে হাজারে হাজার, লাখও বলা যায়, মানবসেবক রয়েছেন, যারা প্রচারের প্রলোভনে নয়, সত্যিকারার্থেই অন্তরের তাগিদে মানব সেবায় নিয়োজিত আছেন। এনজিও কর্মীদের মতো তাদের কিন্তু চাকরিও নয় এটা। শুধু মনের শান্তির জন্যই তারা মানুষের সেবা করেন। মানুষের পাশে দাঁড়ান বিবেকের তাড়নায়।
জানা গেল, মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন মিল্টন সমাদ্দার: ডিবি প্রধানের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউজের শিরোনাম এমনটাই। প্রতারণা ও নানা অনিয়মে গ্রেপ্তার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন। তিনি ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালালেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১০০ মরদেহ দাফনের কথা জানিয়েছেন।
রবিবার দুপুরে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ কথা বলেন।
ডিবি প্রধান বলেন, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যাদের শরীরের কোনো অংশ পচে যেত, সে অংশগুলো তিনি ছুরি ও ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতেন। এমন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধের তিনি হাত, পা ও আঙুল কেটে ফেলেন।

সে সময় তাদের কান্না, যন্ত্রণা ও রক্ত দেখে মিল্টন পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। তিনি কখনোই অসুস্থ ব্যক্তিদের কোনো হাসপাতালে নিতেন না। মিল্টনের ‘অস্ত্রোপচার কক্ষে’ শুধু কয়েকটা ছুরি ও ব্লেড পাওয়া গেছে। এখানে তিনি নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন।
মিল্টনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে বলে জানান হারুন অর রশীদ। তিনি মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষদের দাফন, বৃদ্ধ, বাক্প্রতিবন্ধী, অসহায় মানুষদের আশ্রয়ের কথা বলে টাকা সংগ্র্রহ করতেন। কবর দেওয়ার সংখ্যা যত বেশি, টাকা সংগ্রহ তত বেশি হতো। মিল্টন সমাদ্দার একজন মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ মানুষ। টর্চার সেলে তিনি মানুষকে পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন বলে জানান ডিবি প্রধান। ডিবি আরও জানায়, তিনি কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন, তা বোধগম্য নয়। 
উল্লেখ্য, দুস্থ, অসহায় ব্যক্তিদের আশ্রয় ও সাহায্যের মতো মানবিক কাজের ডিজিটাল কৌশলী প্রচারের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত ও আলোচিত হন মিল্টন সমাদ্দার। ফেসবুকে তাকে অনুসরণ করেছেন কোটি মানুষ। মানবসেবার আড়ালে তিনি দুস্থ মানুষের ক্ষতিই করতেন, আবার তাদের দুর্দশা প্রদর্শন করে দান-অনুদান গ্রহণের মাধ্যমে নিজের পকেট ভারি করতেন। দেরিতে হলেও এমন মহাপ্রতারকের মহানিষ্ঠুরতা সম্পর্কে দেশবাসী জানতে পারলো। 

তাপপ্রবাহে মহানগরীর ক্ষতি
ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায় মাঝে একদিন। ঢাকাবাসী আশায় আছে এবার তারা সত্যি সত্যি ঝমঝম বৃষ্টির দেখা পাবে। দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। সার্বিকভাবে ক্ষতি হয় অর্থনীতির। এর ভেতর বেশি সমস্যায় পড়ছেন অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। চিকিৎসকরা বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এমনিতেই একটু বেশি গরম অনুভব করেন। গরমকালে তাঁদের এ কষ্ট আরও বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব, ঠোঁট-মুখ শুকিয়ে যাওয়াসহ নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। বেশি গরম পড়লে শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট বাড়ে। তীব্র তাপপ্রবাহ ও আর্দ্রতার কারণে খেটে খাওয়া মানুষরা সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন; স্বাভাবিক সময়ের মতো কাজ করতে পারেন না। এতে তাঁদের আয় কমে।  তাপপ্রবাহের কারণে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

সার্বিকভাবে প্রভাব পড়ে অর্থনৈতিক উৎপাদনেও। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় ঢাকা শহরের অর্থনৈতিক ক্ষতি বেশি হয়। তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকা শহরের জিডিপির ৮ শতাংশ ক্ষতি হয় বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। বর্তমান বাজার দরে (প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশ বেশ বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।

রিপোর্টার জাহাঙ্গীর শাহ তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন: ২০২২ সালের শেষের দিকে ঢাকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ১২টি বড় শহরে তাপপ্রবাহের কারণে অর্থনীতির কতটা ক্ষতি হয়, তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার। সেখানে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গত ১৫ দিনের বেশি সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। গত সপ্তাহে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে মানুষের, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের। ফলে, দেড় বছর আগের ওই প্রতিবেদন এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত ১২ শহরের তালিকায় আছে ঢাকা, যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলেস ও মিয়ামি; যুক্তরাজ্যের লন্ডন; অস্ট্রেলিয়ার সিডনি; ভারতের দিল্লি; চিলির সান্তিয়াগো; থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক; আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেস; মেক্সিকোর মন্টেরি; গ্রিসের এথেন্স ও সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউন। জিডিপির অনুপাতে ক্ষতির দিক থেকে এ ১২টি শহরের মধ্যে শীর্ষে আছে ঢাকা। তাপপ্রবাহ ও আর্দ্রতায় পোশাক,  পরিবহন খাত এবং খুচরা ব্যবসায় নিয়োজিত কর্মজীবীরা সবচেয়ে বেশি ভোগেন। এ সময় তাঁদের আয় প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়।
ঢাকা শহরে পরিবহন খাতের ক্ষতি হয় ১০ শতাংশ বা ১৮০ কোটি ডলার আর পোশাক খাতের ক্ষতি হয় ১৫০ কোটি ডলার, যা এই খাতের মোট অবদানের ৯ শতাংশ। তাপপ্রবাহ এভাবেই উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। শ্রমিকদের কারখানায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কারখানার ছাদ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উপযোগী নয়, বরং ছাদ তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। পরিবহন শ্রমিক, খুচরা বিক্রেতাদের তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই সুরক্ষা ছাড়া কাজ করতে হয়। এসব কারণে তাদের শ্রম উৎপাদনশীলতা কমে যায়, এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

গত সপ্তাহে এ কলামে গরমে মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর সামান্য খতিয়ান দিয়েছি। সত্যি বলতে কি, প্রতিষ্ঠানের চাইতে ব্যক্তি পর্যায়ের মানবিক প্রচেষ্টাগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ থেকে অন্যেরা উদ্বুদ্ধ হন। তপ্ত দুপুরে বাংলা মোটর মোড়ে খাবার পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করার কথা জানিয়েছেন শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। প্রায় চারশ’ ক্লান্ত মানুষকে তারা এই সেবা দিতে পেরেছেন। আগামীতেও এই কাজ করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন শাওন।

০৫ মে ২০২৪  

[email protected]

×