ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঝুঁকিতে প্রাণিসম্পদ

-

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৬ মে ২০২৪

ঝুঁকিতে প্রাণিসম্পদ

সম্পাদকীয়

চলতি মৌসুমের তাপমাত্রা ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রার উত্তাপ ছড়িয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। সড়ক-মহাসড়কের কোথাও কোথাও পিচ গলে গেছে। জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। একই সঙ্গে প্রাণিকূলেরও। এ সময় দেশের প্রাণিসম্পদ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্য ও ওষুধের দাম বাড়ার কারণে দেশে প্রতিবছর বন্ধ হচ্ছে ১৫ শতাংশ খামার।

আর্থিক মূল্যে পরিমাপ করলে এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫০ কোটির টাকার বেশি। তাপপ্রবাহে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মুরগি মারা যাচ্ছে হিটস্ট্রোকে। অধিকাংশ খামার বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় প্রচ- দাবদাহ সহ্য করতে পারছে না। ঈদের পর থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহের ফলে হিটস্ট্রোকের কারণে সারাদেশে ইতোমধ্যে মারা গেছে কয়েক লাখ মুরগি। ডিম ও মাংস উৎপাদনও কমেছে।

ফলে, বিপাকে পড়ছেন পোল্ট্রি খামারিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অধিকাংশ খামার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হুমকির মুখে পড়তে পারে ডিম ও মুরগির উৎপাদন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বাজারে ডিম, মুরগি ও মাংসের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে।
দাবদাহের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামারে হিটস্ট্রোকে গবাদিপশুরও মৃত্যু হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির গরু পালন করা হয়, সেগুলোর অধিকাংশ খরা সহিষ্ণু নয়। ফলে, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে খামার মালিকদের গবাদিপশু পালনে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মুরগি ও গবাদিপশুর পাশাপাশি অনেক মৎস্য খামারিরও একই অবস্থা।

টানা তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় বিপর্যয়ের মুখোমুখি দেশের কৃষি খাত। এই অবস্থায় গৃহপালিত পশুপাখির বাড়তি যতœ নেওয়া জরুরি। তাপপ্রবাহজনিত পীড়ন (স্ট্রেস) সহনশীল করতে গবাদিপশু, পোলট্রির ঘর শীতল রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কম গভীরতার পুকুরগুলোতে নতুন পানি যোগ করে গভীরতা বাড়ানো চাই। যেন নিচের স্তরের পানি কিছুটা ঠান্ডা থাকে এবং মাছ অবস্থান করতে পারে।

পুকুর পাড়ে গাছ লাগিয়ে বা বিকল্প উপায়ে ছায়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। 
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন একটি অন্যতম বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট ঝুঁকি ও বিপর্যয় মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তা কমানো যাচ্ছে না। হয়তো খুব দ্রুত কমানো সম্ভবও নয়। কিন্তু সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতির তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সকলের আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ, কর্মকা- ও সচেতনতা কাম্য। তা না হলে সমূহ বিপদ কমে আসার পরিবর্তে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাই বাড়বে।

×