.
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা-ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানায়, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যোজাত ও অল্পবয়সী শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার মতো উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায়ও শিশুদের যথেষ্ট পরিমাণে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। সংস্থাটির ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। তাই ইউনিসেফের পক্ষ থেকে শিশুর মা-বাবা, পরিবার, পরিচর্যাকারী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে চলমান এই তাপপ্রবাহ থেকে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। যেমনÑ শিশুদের বসার ও খেলার জন্য ঠান্ডা জায়গার ব্যবস্থা করা, দুপুর ও বিকেলের কয়েক ঘণ্টা বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখা, হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরানো এবং প্রচুর পানি পান করানো। প্রতিবেশীদের দিকেও খেয়াল রাখতে বলেছে ইউনিসেফ। বিশেষ করে যারা একা থাকেন তাদের ওপর। উল্লেখ্য, শিশুদের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারাদেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।
কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বিপজ্জনকভাবে তাপপ্রবাহ বইছে। কোনো কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। ইতোমধ্যে গরমজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের প্রায় সব হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় জমেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিটস্ট্রোকে অনেকেই মারা গেছেন। অবশ্য আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। কেননা, আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছি, অপরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে কংক্রিটের শহর বানাচ্ছি। বর্তমানে টানা ভারী বর্ষণ ছাড়া এই তাপপ্রবাহ পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা খুব কম। তাই প্রাণঘাতী এই অসহ্য গরমে সবাই যেন চাতকের মতো বৃষ্টির জন্য অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় তাপপ্রবাহ বাড়লে তাদের হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দেহের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫ এর ওপর উঠলে ঘাম হয় না, মাথাব্যথা, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যান অনেকে। এটি বিপজ্জনক। কাজেই শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের বসা ও খেলার জন্য ঠান্ডা জায়গার ব্যবস্থা করা জরুরি। তপ্ত দুপুর ও বিকেলের কয়েক ঘণ্টা তাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়। সেইসঙ্গে তারা যেন প্রচুর পানি পান করে এবং হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরে তাও নিশ্চিত করা আবশ্যক।