ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ফেরার আশায় আশরাফুল

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১১ আগস্ট ২০১৮

 ফেরার আশায় আশরাফুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিষেধাজ্ঞা ছিল ৫ বছরের জন্য। সবধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েছে টানা তিন বছর। ২০১৬ সালে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছিল। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট আসর এবং সবধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা ওঠেনি। সেখান থেকেও দীর্ঘ ৫ বছর অপেক্ষার পর ছাড় পাচ্ছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, সাবেক অধিনায়ক ও ওপেনারের সবধরনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামী সোমবার। এরপর থেকে তিনি যে কোন পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বাধাহীন থাকবেন। ইতোমধ্যেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে নিজেকে অনেকখানিই ফিরে পেয়েছেন এবং আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। এবার সবধরনের ক্রিকেট খেলা উন্মুক্ত হওয়ার আগে ৩৪ বছর বয়সী আশরাফুল প্রত্যয় জানালেন জাতীয় দলে ফেরার। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসর অনুষ্ঠিত হয়। আর এমন টুর্নামেন্টে থাকে টাকার ছড়াছড়ি এবং সে কারণেই জুয়াড়ি, ম্যাচ ফিক্সার আর দুর্নীতিবাজদেরও সমাগম ঘটে। তেমনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের চক্রান্তে ফেঁসে ম্যাচ গড়াপেটায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন আশরাফুল। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৩ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তদন্ত শুরু করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল দোষ স্বীকার করে নেন এবং বিস্তারিত জানান। ৪ জুন বিসিবি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে সবধরনের ক্রিকেট থেকে। ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বিপিএল শুরু করে এন্টি করাপশন ট্রাইব্যুনালের শুনানি। এর মাঝেই (২ জুন, ২০১৪) আশরাফুল নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের একটি আনঅফিসিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে আরেকবার বিতর্কের জন্ম দেন। সে বছর ১৮ জুন বিসিবি আশরাফুলকে ৮ বছরের জন্য সবধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করলে এর বিপক্ষে আপীল করেন ২২ জুলাই। ২৯ সেপ্টেম্বর বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটি সার্বিক দিক বিবেচনা করে আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৫ বছর করে। তবে এর বিপক্ষে আপীল করে বিসিবি ও আইসিসি ২১ অক্টোবর। তবে সেই আপীল আর আমলে আনা হয়নি। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে আশরাফুলের ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) চারদিনের কয়েকটি ম্যাচ খেলেন। তবে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি। আশরাফুল মেধাবী ক্রিকেটার। দীর্ঘ সময় ব্যাট-বল হাতে না নিলেও তিনি নিজেকে ফিরে পান গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল)। সবাইকে বিস্মিত করে হাঁকান ৫টি সেঞ্চুরি। একটি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট মৌসুমে বিশ্বের ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কৃতিত্ব দেখান তিনি। ২০১৫-১৬ মৌসুমে মোমেন্টাম ওয়ানডে কাপে দক্ষিণ আফ্রিকার আলভিরো পিটারসন ৫ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর আশরাফুল ২৩টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪৭.৬৩ গড়ে রান করেছেন। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজেকে নিয়ে বেশ সংগ্রাম করেছেন আশরাফুল। ১৩ ম্যাচে মাত্র একটি সেঞ্চুরিসহ রান করেছেন মাত্র ২১.৮৫ গড়ে। এ বিষয়ে আশরাফুল বলেন, ‘ফেরার পর আমার প্রথম মৌসুমটা তেমন ভাল হয়নি। কিন্তু ২০১৭-১৮ মৌসুমে আমি বেশ ভাল করেছিলাম। আমি আসন্ন মৌসুমে আরও ভাল করার আশা করছি। আমার পারফর্মেন্স দিয়ে এখন আমি দলে ঢোকার যোগ্য। আমি এরই মধ্যে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে ছিলাম এবং পরের মৌসুমের জাতীয় ক্রিকেট লীগের জন্য ১৫ আগস্টের পর আমি প্রাক-মৌসুম অনুশীলনে যোগ দেব।’ সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে বিশ্বরেকর্ডধারী এ মেধাবী তারকা স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় দলে আবার ফেরার। নির্বাচকদের নজরে আসার জন্যই কঠোর পরিশ্রম এবং দারুণ পারফর্মেন্স করতে চান তিনি। ‘কলঙ্কমুক্ত’ হয়ে মাঠে ফিরতে তর সইছে না তার। তিনি বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ২০১৮ সালের ১৩ আগস্টের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করার পর থেকে পাঁচটি বছর কেটে গেছে। যদিও আমি গত দুই মৌসুম ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি, এখন জাতীয় দলে নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমাকে কোন কিছু আটকাতে পারবে না। আবারও বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারা হবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন।’
×