ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচন ॥ আবার উৎসবমুখর নগরী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ মে ২০১৮

২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচন ॥ আবার উৎসবমুখর নগরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের বাধা দূর হওয়ার পর রবিবার কমিশন বৈঠক শেষে নতুন তারিখ ঘোষণা করল। এতে গাজীপুর আবারও উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ভোট গ্রহণের এই ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রার্থী আর ভোটাররা। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ কমিশন বৈঠকের পর এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে জানান, নির্বাচনের জন্য নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হবে না। আইন অনুযায়ী তার প্রয়োজনও নেই। প্রার্থীরা ১৮ জুন থেকে আবারও প্রচারের সুযোগ পাবেন। এর আগে আগামীকাল ১৫ মে গাজীপুরে ভোটের দিন ঘোষণা করেছিল ইসি। গত ৩১ মার্চ নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী অপর সিটি কর্পোরেশন খুলনায় ভোট হচ্ছে ১৫ মে। ঢাকার সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ রিট আবেদন করলে গত ৬ মে নির্বাচন তিন মাস স্থগিতের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এতে থেমে যায় গাজীপুরের ভোটের হাওয়া। ভোট উৎসবের নগরী গাজীপুরে ছড়িয়ে পড়ে বিষাদের ছায়া। ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর আবেদন এবং নির্বাচন কমিশনের লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ গত বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ বাতিল করে ২৮ জুনের মধ্যে ভোট করার নির্দেশ দেয়। এতে গাজীপুরের ভোট গ্রহণ নিয়ে অচলাবস্থার অবসান হয়। অপেক্ষা ছিল কমিশন বৈঠকের। রবিবার কমিশন সভায় ভোটের নতুন তারিখ ঠিক হওয়ার পর ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, আদালতের আদেশ প্রতিপালন করতে হবে। কোন ধরনের পর্যবেক্ষণ থাকলেও তা ভোটর আগে সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, ১৭ জুন পর্যন্ত কোন ধরনের প্রচার চালাতে পারবেন না প্রার্থীরা। কেউ প্রচারের চেষ্টা করলে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনর কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভায় নির্বাচন কমিশনার, কমিশন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। গাজীপুরে ভোট স্থগিতের পরেও প্রচার স্থগিত করেনি বিএনপি। দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রচার থেকে সরে দাঁড়ালেও কেন্দ্রের নির্দেশে আনুষ্ঠানিক প্রচারের বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করেছে দলটি। বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সমর্থকরা এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচারের বদলে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোটের জন্য ছুটছেন। দেশের সবচেয়ে বড় সিটি কর্পোরেশন গাজীপুর। সিটির উত্তর প্রান্তে গাজীপুর ও দক্ষিণ প্রান্তে টঙ্গী দুই পৌরসভার সঙ্গে ছয়টি ইউনিয়ন যোগ করে গঠন করা হয়েছিল এ সিটি করপোরেশন। গাজীপুর সিটিতে যানজটের পাশাপাশি জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের যানজট স্থবির করে দেয় গাজীপুরবাসীকে। একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় টঙ্গীসহ নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। বাসন, কাশিমপুরসহ অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায় তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এসব এলাকার রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এখনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি প্রত্যন্ত এলাকায়। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এই ক্ষোভ ভোটের মাঠে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরাও রবিবার ইসির ঘোষণাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তারা দাবি করছে জনগণ দেশের উন্নয়ন দেখে এবার নৌকার পক্ষেই রায় দেবে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী পরিবারের সব সদস্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য গাজীপুর সিটির মানুষ অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হতে পারলে গাজীপুরকে দেশের সর্বাধুনিক শহরে রূপান্তর করবেন বলে জানান। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিজয় তাদের সুনিশ্চিত। তবে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন এখনও নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এই ষড়যন্ত্রের জবাব দেবেন। তবে নির্বাচনে ভোটের লড়াই সীমাবদ্ধ থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে। উভয় প্রার্থী নগরীর সমস্যা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। রিটার্নিং কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার গাজীপুর সিটিতে নতুন ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পোশাক কারখানার শ্রমিক। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। ফলে এবারের সিটি নির্বাচনে নতুন ভোটারটা জয় পরাজয়ের ফ্যাক্টর হতে পারে।
×