ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন আরামবাগ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন আরামবাগ

রুমেল খান ॥ রেফারি মিজানুর রহমান খেলা শেষ হবার বাঁশি বাজালেন। মারুফুল হক এগিয়ে গেলেন প্রতিপক্ষ দলের কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুর দিকে। শিষ্য মিন্টু করমর্দন করে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন গুরু মারুফুলকে। ক্লাবের সভাপতি একেএম মমিনুল হক সাঈদ এগিয়ে গিয়ে আবেগে মারুফুলকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেললেন। মারুফুলের চোখও ভিজে উঠলো নিমিষেই। এরপরেই মারুফুলকে চ্যাংদোলা করে শূন্যে ছুড়ে উল্লাসে মেতে উঠলো তার সুযোগ্য শিষ্যরা। এরপর নিজেরাই গেয়ে উঠলো গায়ক আসিফ আকবরের সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় গান ‘ফুঁ’। এ গানটি গেয়ে যেন তারা বোঝাতে চাইল ফাইনালে তারা এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ দলকে! পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন কোন দলের সাফল্যের কথা বলছি। হ্যাঁ, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের কথাই বলছি। স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের নবম আসরের সুদৃশ্য শিরোপাটা জিতেছে তারা। তাও আবার দাপটের সঙ্গে খেলেই। প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডকে ২-০ গোলে হারিয়ে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ খেলার প্রথমার্ধেই সবগুলো গোল করে ‘রাইজিং স্ট্রেন্থ’ খ্যাত আরামবাগ। ‘বন্দরনগরীর দল’ খ্যাত চট্টগ্রাম আবাহনী আক্ষেপ করতেই পারে। কেননা এ আসরে তারাই ছিল সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন। এই মৌসুমে তারা শুরু করেছিল ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ হয়ে। লীগে সপ্তদশ রাউন্ড পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা (তৃতীয় স্থান)। মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপেও উঠেছিল ফাইনালে। কিন্তু এখানে ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের। একেই হয়তো বলে ‘কপালের নাম গোপাল’। তবে আরামবাগের এই সাফল্য ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। ইতিহাস গড়েই চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। ৬০ বছরের পথ পরিক্রমায় ঘরোয়া ফুটবলে এটাই ছিল তাদের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় শিরোপা অর্জন। ১৯৫৮ সালে জন্ম ক্লাবটির। ফেডারেশন কাপ ফুটবলে তিনবার রানার্সআপ হয়েছে তারা (১৯৯৭, ২০০১ ও ২০১৬)। অথচ দেশের ফুটবলে কোন সাফল্য না থাকলেও বিদেশের মাটিতে তিনটি সাফল্য আছে তাদের, এটাও কম বিস্ময়কর নয়। ১৯৯৫ ও ২০০১ সালে সিকিম গবর্নর্স কাপ এবং ২০০১ সালে ভুটানে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এছাড়া রানার্সআপ হয় ১৯৮১ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত ‘আনফা কাপ’, ১৯৯৭ সালে সিকিমে অনুষ্ঠিত চীফ মিনিস্টার গোল্ডকাপ এবং ভারতে অনুষ্ঠিত নাগজি গোল্ডকাপেও। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠার পরেই তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে নাম এন্ট্রি করে আরামবাগ। ১৯৬৯ সালে তারা দ্বিতীয় বিভাগে ওঠে। ১৯৭৯ সালে প্রথম বিভাগ লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। প্রিমিয়ার বিভাগ লীগ শুরু হওয়ার পর থেকে আরামবাগ ক্লাব প্রায় প্রতি বছরই খেলেছে। পয়েন্ট টেবিলে বরাবরই চতুর্থ কিংবা পঞ্চম স্থানের বাইরে তারা কখনও যায়নি। যদিও সর্বশেষ প্রিমিয়ার লীগে ১২ দলের মধ্যে অষ্টম হয়েছিল। সেই ১২ দল নিয়েই অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপে সবার সেরা হলো মাঝারি সারির দল আরামবাগ। মঙ্গলবারের ম্যাচে কর্নার পায় আরামবাগ ২টি এবং আবাহনী ৯টি করে। আক্রমণ সংখ্যায়ও এগিয়ে ছিল আবাহনীই (১৪৩-১৩৬)। বিপজ্জনক আক্রমণেও তাই (১৬৩-৮২)। অন টার্গেটে শট নেয়ার বেলাতেও তাই (১৫-৫)। পরিসংখ্যানেই পরিষ্কারÑ প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছে আবাহনীই। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে শেষ হাসি হেসেছে মতিঝিল পাড়ার ক্লাবটিই। ১৯ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে শাহরিয়ার বাপ্পির ক্রসে বক্সে বল পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আরামবাগের ডিফেন্ডার মোহাম্মদ আরিফ (১-০)। ৪৫ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে অধিনায়ক আবু সুফিয়ান সুফিলের বাড়িয়ে দেয়া বল বুঝে ফরোয়ার্ড জুয়েলের ক্রস ডান পায়ের তীব্র শটে জালে পাঠান ডিফেন্ডার মোহাম্মদ রকি (২-০)। উল্লেখ্য, এই আসরে গ্রুপ (ডি) পর্বেও একবার মুখোমুখি হয় এই দুই দল। ম্যাচটা ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী এবং রানার্সআপ হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে আরামবাগ। গ্রুপপর্বে শক্তিশালী ঢাকা আবাহনীকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সেমিতে পা রাখে আরামবাগ। চট্টগ্রাম আবাহনী শেষ আটে শেখ রাসেলকে ৪-২ গোলে হারায়। সেমিতে শেখ জামালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে পা রাখে আরামবাগ। অপর সেমিতে রহমতগঞ্জকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় চট্টলার দল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফিটি ভাষা শহীদদের উৎসর্গ করেছে আরামবাগ। এদিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দলের সব সদস্যকে ১০ লাখ টাকা বোনাস পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করেন আরামবাগের সভাপতি সাঈদ। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে জেতায় দুই লাখ এবং সেমিফাইনালে জেতায় পাঁচ লাখ টাকা দলকে বোনাস দিয়েছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ১৭ লাখ টাকা বোনাস দিলেন সাঈদ।
×