ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে চার জাতি ফুটবলে শিরোপায় চোখ মারিয়াদের

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হংকংয়ে চার জাতি ফুটবলে শিরোপায় চোখ মারিয়াদের

রুমেল খান ॥ আগামী ৩০ মার্চে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হবে অ-১৫ চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ফুটবল টুর্নামেন্ট। যেখানে অংশ নেবে বাংলাদেশ, চাইনিজ তাইপে, হংকং এবং ইরান। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের ভাষ্য, ‘ইরান, চাইনিজ তাইপের সঙ্গে পূর্বে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। হংকংয়ের সঙ্গে খেলা হয়নি। তারপরও আশা করা যায় দল ভাল খেলবে। সম্প্রতি আমাদের অ-১৫ দলে সাফের আসরে যেভাবে খেলেছে, সেভাবেই খেললেই চলবে। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ মহিলা দলের উদ্ভাসিত সাফল্যের আলোক এটা আশা করাই যায়Ñ এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলবে লাল-সবুজরা। এই লক্ষ্যে রোজ দু’বেলা করে বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছে মারিয়া, তহুরা, মনিকা, আঁখি, নীলা, শামসুন্নাহার, মাহমুদা, ঋতুপর্ণারা। হংকংয়ে কি টার্ফে খেলা হবে, নাকি ঘাসের মাঠেতে খেলা হবে? ‘এটা আমরা এখনও জানি না। তবে বাফুফে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। শীঘ্রই জানব। তবে যদি খেলা ঘাসের মাঠে হয়, তাহলে দ্রুতই আমরা ঘাসের মাঠেই প্র্যাকটিস শুরু করে দেব।’ ছোটনের জবাব। তিনি আরও জানান, দল হবে ২০ জনের। যদিও শুরুতে ২৩ ফুটবলার থাকবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছিল। পরে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। ‘মারজিয়া এ আসরে খেলতে পারবে না। কেননা তার বয়স ১৫-এর বেশি হয়ে গেছে। তাকে বাদ দিলে অ-১৫ দলে এখন প্লেয়ার আছে ২২ জন। হংকং যাওয়ার আগে ২০ জনের দলগঠন করে ফেলব।’ সমস্যা আরও আছে। দলের ৮/৯ ফুটবলারই এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। ফলে তারা এখন ক্যাম্পে নেই। তাদের ছাড়া দলগঠন কিভাবে হবে? ‘এটা কোন সমস্যাই না। কারণ খেলা শুরু হবে ৩০ মার্চ। আরও ওদের পরীক্ষা শেষ এ মাসেরই ২৪ তারিখে। তাছাড়া ওরা নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়ে পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ওদের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। তারা প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট সময় অনুশীলন করছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, ফিটনেস ধরে রাখার জন্য। কাজেই পরীক্ষা শেষে ওরা ক্যাম্পে ফিরে এলে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোন সমস্যাই হবে না।’ বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে বিপ্লব ঘটিয়ে যিনি প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গেছেন, তিনি গোলাম রব্বানী ছোটন। এ পর্যন্ত যত সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল, তার সবই এসেছে ছোটনের হাত ধরে। এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন একবার এবং সর্বশেষ সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) একবার শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল কোচ ছোটনের অধীনে। এছাড়া তার অধীনে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে একবার রৌপ্যপদক অর্জন (২০১৬), দু’বার সেমিফাইনালিস্ট (২০১০ ও ২০১৪); এসএ গেমস ফুটবলে দু’বার তা¤্রপদক (২০১০ ও ২০১৬) অর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না ছোটন। নতুন বছরে সাত শিরোপা হাতছানি দিচ্ছে তাকে। লেখার শুরুতেই একটির কথা বলা হয়েছে। বাকিগুলো হচ্ছেÑ মেতে এএফসির ফুটবল টুর্নামেন্ট (থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য), আগস্টে সাফ অ-১৫ এবং অ-১৮ টুর্নামেন্ট, সেপ্টেম্বরে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব, অক্টোবরে এএফসি অ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব এবং ডিসেম্বরে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। এ প্রসঙ্গে ছোটন জানান, ‘মেয়েদের ফুটবলে স্পন্সর, বাফুফে ও মিডিয়ার অবদান থাকলে এবং নিরবিচ্ছিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু থাকলে অবশ্যই মেয়েরা এই আসরগুলোতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’ মেয়েদের পরের লক্ষ্য আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা অ-২০ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। ইতোমধ্যেই তারা ফিফা অ-১৬ মহিলা বিশ^কাপের বাছাইপর্ব খেলেছে। অংশ নিয়েছে এশিয়ার সেরা আট দল নিয়ে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে। প্রতিবছর তারা ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে। এই লক্ষ্যে ক্যাম্প চলছে ৫০ ফুটবলার (জুনিয়র-সিনিয়র মিলিয়ে) নিয়ে। এছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলা ক্লাব ফুটবল লীগ আগামী বছর থেকেই আবারও চালু করার ঘোষণা দিয়েছে বাফুফে। এতে করে মারিয়ারা বিভিন্ন ক্লাবে খেলে আরও অর্থ উর্পাজন করে নিজেদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারবে। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের সূচনালগ্ন ২০০২ সালে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মহিলা ফুটবল দল বাংলাদেশ সফরে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে আসে বিরাট বড় দল (৪০ ফ৫ টবলার) সম্ভবত ২০০১-০২ সালে। বাংলাদেশ দলে খেলোয়াড় সঙ্কট ছিল। তাই অতিথি দলের তিন ফুটবলার স্বাগতিক দলের হয়ে খেলেছিল! সেই অবস্থা থেকে আজ দেশের নারী ফুটবল কতটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, ভাবলে আশ্চর্যই হতে হয়। অদম্য ও অপরাজেয় নারী ফুটবলারদের গত কয়েক বছরের কৃতিত্বগুলো খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। এই দলটিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করানোর ব্যবস্থা করা হলে দেশে ও বিদেশের মাটিতে এরাই একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিজয় গৌরব ও সুনাম ছিনিয়ে আনতে সমর্থ হবে। সোনার মেয়েদের কীর্তিগাথায় মোড়ানো এ রকম আরও অনেক স্বর্ণালি সাফল্য নিশ্চয়ই অবলোকন করা যাবে।
×