ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

শ্রীলঙ্কার ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ দুই দলের দুই লক্ষ্য। একদল জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায়। সেই দলটি বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে আগেই খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে। এমনকি তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। আরেক দল যে করেই হোক জিততে চায়। সেই দলটি শ্রীলঙ্কা। জিতলেই যে সিরিজের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হবে। হারলে বিদায় ঘণ্টাও বেজে যেতে পারে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাই আজ ‘বাঁচা-মরার’ লড়াইয়ে নামবে শ্রীলঙ্কা। ফাইনালের আগে সিরিজের শেষ এই ম্যাচটি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ১২টায় শুরু হবে। বাংলাদেশ টানা তিনটি ম্যাচ জিতে গেছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৮ উইকেটে জেতার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৩ রানে জিতে বোনাস পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে। এরপর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও ৯১ রানে জয় তুলে নিয়েছে। ফাইনালের আগে প্রতিটি দল পরস্পরের বিপক্ষে দুটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। চারটি করে ম্যাচ খেলছে। সিরিজ শুরুর আগেই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল টানা চার ম্যাচ জেতা। জয় দিয়ে শুরু করে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। আজ যদি শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে টানা চার জয় তুলে নেবে। ফাইনালের আগে নিজেদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে নিতে পারবে। সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কাও টানা দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে হারবে। বাংলাদেশ সেটিই চায়। টানা চার জয় নিয়ে ফাইনালে জেতার জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরি করে নিতে চায়। শ্রীলঙ্কা এখনও বিপাকে পড়ে আছে। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের কাছে ১২ রানে হারের পর বাংলাদেশের কাছে ১৬৩ রানে হারে। এরপর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জিতে সিরিজে টিকে থাকে। এখন শ্রীলঙ্কার ফাইনালে খেলার সম্ভাবনাও আছে। এ জন্য শ্রীলঙ্কাকে আজ জিততে হবে। অবশ্য হারলেও ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। কারণ জিম্বাবুইয়ে ও শ্রীলঙ্কার সমান পয়েন্টই থাকবে। জিম্বাবুইয়ে এক ম্যাচ জিতেছে। শ্রীলঙ্কা যদি আজ হারে তাহলে লঙ্কানদেরও এক জয় থাকবে। জিম্বাবুইয়ে ও শ্রীলঙ্কার তখন সমান ৪ পয়েন্ট থাকবে। যে দল রানরেটে এগিয়ে থাকবে তারাই তখন শনিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ফাইনালে খেলবে। শ্রীলঙ্কা হারলেও তাই ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা থাকছে। তবে এ জন্য রানরেটটাও শ্রীলঙ্কাকে হিসেবে রাখতে হবে। আর যদি শ্রীলঙ্কা জিতে যায় তাহলে জিম্বাবুইয়ের চেয়ে বেশি জয় ও পয়েন্ট বেশি নিয়েই ফাইনালে খেলবে। এ মুহূর্তে জিম্বাবুইয়ের পয়েন্ট আছে ৪। রানরেট -১.০৮৭। শ্রীলঙ্কারও পয়েন্ট আছে ৪। রানরেট -০.৯৮৯। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা জিতলে ৮ পয়েন্ট হবে। এমনিতেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু যদি শ্রীলঙ্কা হারে তখন হিসেবে আসবে রানরেট। শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার রানরেট যে অবস্থায় আছে তাতে শ্রীলঙ্কা যদি খুব খারাপভাবে না হারে তাহলে তাদেরই ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা থাকছে। যে দলটি একটা সময় প্রতাপের সঙ্গে খেলত। এমনকি ২০০৯ সালে যে বাংলাদেশের মাটিতে এই তিন দলই ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে, সেই সিরিজে শ্রীলঙ্কাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার সেই দলটিই কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত দেখা যাচ্ছে। গত বছর যে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা সেই অবস্থাতেই পড়ে আছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যদি শেষ ম্যাচটিতে না জিতত তাহলে তো এখন বিদায়ী দলই হতো শ্রীলঙ্কা। তা থেকে মুক্ত পেয়েছে লঙ্কানরা। কিন্তু এখনও শঙ্কা দূর হয়ে যায়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ মুহূর্তে খেলা মানেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে আলাদা ‘জেদ’ কাজ করাটা স্বাভাবিক। কারণ শ্রীলঙ্কা দলের কোচ এখন চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে। যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান কোচ ছিলেন। এই সিরিজের আগেই বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়েছেন। শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়েছেন। হাতুরাসিংহে থাকাকালে বাংলাদেশ দল অনেক সাফল্য পেয়েছে। ঈর্ষণীয় সাফল্য তুলে নিয়েছে। সেই হাতুরাসিংহে এখন শ্রীলঙ্কার কোচ। শ্রীলঙ্কা নতুন শুরুর আশায় আছে। কিন্তু হাতুরাসিংহে থাকার জন্যই বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি অন্যরকম মাত্রা পাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত হাতুরাসিংহের জন্য বিগত দিনগুলোতে সাফল্য মিলেনি বাংলাদেশের। মিলেছে ক্রিকেটারদের জন্য। তাদের পারফর্মেন্সেই দল জিতেছে। মাঠে তো আর কোচ খেলেন না। হাতুরাসিংহেকে সেটি বুঝিয়ে দিতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা চায় জয়। অন্য কোন ম্যাচে যে রকম হিসেবই থাক, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা যে করে হোক জেতার শেষ চেষ্টা করবে। বাংলাদেশের মাটিতে ২০১৪ সালের পর আর ওয়ানডে খেলেনি শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের সাফল্যের সময়গুলোতে প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নামেনি। এবার যখন নেমেছে তখন বাংলাদেশের আসল রূপ দেখছে। দেশের মাটিতে যে বাংলাদেশ অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে তা ভালভাবেই বুঝছে। আজও বুঝতে পারে। শ্রীলঙ্কা বিপাকেই পড়ে আছে। ‘বাঁচা-মরার’ লড়াইয়ে কিনা তাদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের বিপক্ষেই এই সিরিজের দুই দলের প্রথম ম্যাচে ১৬৩ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। তাই আজও যে শ্রীলঙ্কা হারবে না তা বলা মুশকিল। স্বাগতিক বাংলাদেশ যে খেলা খেলছে তাতে লঙ্কানদের হারার সম্ভাবনাই বেশি থাকছে। হারলেই বিপদ ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। শ্রীলঙ্কার বিদায় ঘটতে পারে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ‘বাঁচা-মরার’ লড়াইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াই করবে শ্রীলঙ্কা।
×