ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আঁখি ডিফেন্ডার না স্ট্রাইকার!

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

আঁখি ডিফেন্ডার না স্ট্রাইকার!

রুমেল খান ॥ শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হওয়ার। অন্তরে সেই প্রত্যয় নিয়ে সেই পথে চলছে আঁখি খাতুন। প্রতিবেশী আর স্বজনদের বাঁকা কথা উপেক্ষা করে ফুটবল খেলে কুড়িয়ে যাচ্ছে সুনাম। নিজের অদম্য চেষ্টায় কিশোরী এই ফুটবলার নজর কেড়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। ঠিক মঙ্গলবার যেমন নজর কাড়লো। এদিন সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম দুটি গোলই আঁখির। অথচ তার পজিশন ডিফেন্ডার। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হয় বিকেএসপির নবম শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী। আঁখি এখন দেশের বয়সভিত্তিক ফুটবলে অটোমেটিক চয়েস। তীক্ষ্ন মেধায় সামলায় রক্ষণদেয়াল, যেভাবে সামলেছে নিন্দুকদের। গড়নে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় আঁখি পায় বাড়তি সুবিধা। যা অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখে তাকে। লম্বা ফ্রি-কিকেও পারদর্শী। বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগের এক অতন্দ্র প্রহরী। মঙ্গলবার খেলা শেষে বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘আঁখি আজকে নিজেকে প্রমাণ করেছে। সে ডিফেন্স থেকে ওপরে উঠে যেভাবে গোল করেছে তা দেখে আমার ইতালির পাওলো মালদিনির কথা মনে পড়ে যায়। দেশে এভাবে গোল করতে দেখেছি কায়সার হামিদকে।’ আঁখি কখনও মালদিনি-কায়সারের খেলা দেখেনি। তার প্রিয় খেলোয়াড় একজন মিডফিল্ডার, স্পেনের জাভি হার্নান্দেজ। ভুটানের বিরুদ্ধে দুটি ফ্রি কিক চান্স মিস করায় হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হতে হয় আঁখিকে। এ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া, ‘হ্যাটট্রিক করতে পারিনি বলে আফসোস নেই। দল জিতেছে, এটাই আসল। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এটাই আমার প্রথম জোড়া গোল। সেজন্য আমি খুবই খুশি।’ তাজিকিস্তানে গত বছর এএফসি অ-১৫ আসরে নেপালের বিপক্ষে গোলটি ছিল আঁখির প্রথম গোল। ওই ম্যাচে ছোটন তাকে খেলিয়েছিলেন মিডফিল্ডার হিসেবে। এরপর আবারও গোলের দেখা পেল সে মঙ্গলবার। ফুটবলার হবার গল্পটা কেমন আঁখির? সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাটগোলা। শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি। বাবা আক্তার হোসেন। ছোট্ট টিনের ঘরে বসতি আঁখির পরিবারের। অসুস্থ বাবার সংসারের চাকা ঘোরে তাঁত বুনে। যা থেকে প্রতিদিনের খাবার যোগানোই দুঃসাধ্য। সেখানে মেয়েকে ফুটবল খেলতে পাঠানো ছিল বিলাসিতা। শুরুতে তাই তারা রাজি হননি। তাদের রাজি করান স্কুল শিক্ষক মনসুর রহমান। কারণ সবার আগে তিনিই বুঝতে পেরেছিলেন এই মেয়ে একদিন ফুটবল খেলে অনেকদূর যাবে। ‘বাড়ির পাশে মনসুর আহমেদ স্যারের অধীনে অনুশীলন করেছি। আমার আপন বড় ভাই নাজমুল ইসলাম আমাকে ইউটিউবে খেলা দেখায় এবং শেখায়।’ আঁখির স্মৃতিচারণ। আঁখির উত্থান ২০১৪ সালে, বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ থেকে। শাহজাদপুর ইব্রাহিম পাইলটস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাস করে সে। তখন ওই ফুটবল আসরে অংশ নেয় আঁখির স্কুল। রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত উঠেছিল স্কুলটি। এরপর ২০১৫ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক আসে। এর আগে তাজিকিস্তানে এএফসি অনুর্ধ-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম খেলে। এরপর ঢাকায় চলমান আসর হচ্ছে তার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। এক অজপাড়াগাঁয়ের মেয়েটি চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পেয়েছে সফলতা। টেলিভিশন, পত্রিকায় আঁখির ছবি দেখে পুলকিত হয় মা-বাবা। আর সেই নিন্দুকদের কাছ থেকেও আসে প্রশংসা। আঁখি আজ আদর্শ নিজ গ্রামের মেয়েদের কাছে। বাকপটু নয় আঁখি। কথার চেয়ে কাজেই মনোযোগ তার। তারপরও অনেক চেষ্টায় তার মুখ থেকে বের করা গেল আরেকটি কথা, ‘জিতেছি, তাই খুশি। পরের ম্যাচেও যেন জিততে পারি, সেজন্য দেশবাসীর দোয়া চাই।’ দেশবাসী কি শুনছেন?
×