ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের দুঃখগাথা না অস্ট্রেলিয়ার রূপকথা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

ইংল্যান্ডের দুঃখগাথা না অস্ট্রেলিয়ার রূপকথা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পার্থে আজ থেকে শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচ এ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট। টানা দুই জয়ে ইতোমধ্যে ২-০তে এগিয়ে থাকা স্টিভেন স্মিথের দল ট্রফি পুনরুদ্ধারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী। তার ওপর গত ৩৯ বছরে এখানে কখনই টেস্ট হারেনি স্বাগতিকরা। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাবেক হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ‘ওয়াকা’ গ্রাউন্ড। ওদিকে কোণঠাসা ইংলিশদের অনুপ্রেরণা হতে পারে এ্যালিস্টার কুকের মাইলফলক। ইতিহাসের মাত্র অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে ১৫০তম টেস্ট খেলতে নামছেন আধুনিক ইংল্যান্ডের সফলতম এ ব্যাটসম্যান। তবে কুক নয়, অধিনায়ক জো রুটকে টার্গেট করেই মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন প্রতিপক্ষ পেসার জস হ্যাজেলউড। সেনাপতি স্মিথের লক্ষ্য দুই ম্যাচ হাতে রেখেই এ্যাশেজ পুনরুদ্ধার। হ্যাঁ, এই ম্যাচ দিয়েই অবসরে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ‘ওয়াকা’ (ওয়েস্টার্ন অক্রেলিয়ান ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম)। কারণ সোয়ান নদীর ওপারে তৈরি হয়েছে ৬০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার নতুন পার্থ স্টেডিয়াম। আগামী বছর থেকে পার্থের টেস্ট ম্যাচগুলো সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে। ভেন্যুর ৪৪তম টেস্টটিই হতে যাচ্ছে ওয়াকার শেষ অধ্যায়। শেষ অঙ্কে ৩৯ বছরের খরা কাটাতে না পারলে দুঃস্বপ্নের রঙ্গমঞ্চে আরেকবার এ্যাশেজ খোয়াতে হবে ইংল্যান্ডকে। ‘ওয়াকা’ নামটা ক্রিকেট রোমান্টিকদের যতটা শিহরিত করে, ততটাই আতঙ্ক ছড়ায় ইংলিশদের মনে। এ্যাশেজ ইতিহাসে ইংল্যান্ডের অনেক দুঃখগাঁথার সাক্ষী অস্ট্রেলিয়ার এই ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম। ওয়াকায় ইংল্যান্ডের সর্বশেষ টেস্ট জয়ের স্মৃতিতে জমেছে ৩৯ বছরের ধুলো। ১৯৭৮ সালের পর এই মাঠে খেলা সাত টেস্টের সাতটিতেই শোচনীয় হার অতিথিদের। মনের দুঃখে এক ইংরেজ সাংবাদিক একবার ওয়াকাকে চিত্রিত করেছিলেন, ‘দুঃস্বপ্নের রঙ্গশালা’ হিসেবে। অবশ্য সফরকারী যে কোন দলের জন্যই দুঃস্বপ্নের মঞ্চ এটি। ওয়াকার গতিময় উইকেটে অসি-পেসারদের সামলানো ভীষণ কঠিন। বধ্যভূমিতে সেই অগ্নিপরীক্ষা সবচেয়ে বেশি দিতে হয়েছে ইংলিশদের। ওয়াকার শেষ এপিটাফেও কি লেখা থাকবে প্রিয় শিকার ইংল্যান্ডের নাম? ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে পার্থেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যাবে। এ্যাশেজের ভস্মাধার চলে যাবে অস্ট্রেলিয়ার দখলে। সিরিজ জেতার হাতছানির পাশাপাশি ওয়াকার শেষটা রাঙিয়ে রাখতে অনুপ্রেরণার কোন অভাব হবে না স্মিথদের। এ্যাডিলেডের দ্বিতীয় টেস্টে রুট যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ইংল্যান্ডের জয়ের প্রদীপটাও জ্বলছিল। অধিনায়ক ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় এ্যাশেজে সমতা ফেরানোর আশা। রুটকে আউট করা জস হ্যাজেলউড বলছেন, রুটের উইকেটটা সব অস্ট্রেলিয়ান বোলারই পেতে চান। ‘উইকেট তো সবাই পেতে চায়। তবে রুটের উইকেট বিশেষ কিছু, সে ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপের প্রাণ। সে একাই ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। শুরু থেকেই তার বিপক্ষে নিজের সেরা বোলিং করতে হবে। তাকে যত কম রানে ফেরানো যায় ততই ভাল আমাদের জন্য।’ বিদায় বেলাতেও ওয়াকার পিচে অসি-বোলারদের গতির কাছেই হার মানবে ইংলিশরা, ‘লক্ষ্য একটাই, গতির ঝড় তোলা ও বাউন্সার দেয়া। সেদিন মিচেল জনসন আমাকে বলেছে, এবারও নাকি ইংল্যান্ড ২০১৩ এ্যাশেজের মতো ব্যাটিং করছে। তাই সেবারের মতো পেসাররাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবে।’ আরও যোগ করেন তিনি। আর অধিনায়ক স্মিথ বলছেন, ‘এ্যাশেজ ফিরে পেতে আমাদের কয়েকটি ভাল মুহূর্ত দরকার। প্রতিপক্ষের কিছু খারাপ সেশনই তাদের সিরিজ পরাজয়ের কারণ হতে পারে। আশাকরি সেটা ম্যাচের শুরুর দুই-একদিনেই এসে যাবে।’ ওদিকে শচীন টেন্ডুলকর, রিকি পন্টিং, স্টিভ ওয়াহ, জ্যাক ক্যালিস, শিবনারায়ণ চন্দরপল, রাহুল দ্রাবিড় ও এ্যালান বোর্ডারের পর ইতিহাসের অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারে ১৫০তম টেস্ট খেলতে নামছেন কুক। ২০০৬ সালে নাগপুরে ভারতের সঙ্গে টেস্টে অভিষেক হয়েছিল কুকের। ‘নাগপুরে যখন উপস্থিত হয়েছিলাম, আমি হয়তো এমন ভাবিই নাই। ব্যক্তিগত মাইলফলকের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই এটা আমার কাছে বিশেষ একটা মুহূর্ত। খুব বেশি মানুষ তো ১৫০ টেস্ট খেলে নাই, টপ অর্ডারে বিশেষ করে। আমি এটা নিয়ে গর্বিত। আশাকরি এই টেস্টের পরও আরও কিছু টেস্ট আমি খেলব।’ বলেন কুক।
×