ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে সরিয়ে দেয়া হয়েছে মুশফিককে, কোচ নিয়োগে সিদ্ধান্ত আরও পরে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে সরিয়ে দেয়া হয়েছে মুশফিককে, কোচ নিয়োগে সিদ্ধান্ত আরও পরে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আবারও বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হয়েছেন বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। রবিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি জানিয়েছেন আগামী ৪/৫ বছরের পরিকল্পনা মাথায় রেখেই সাকিবকে অধিনায়ক করা হয়েছে। আর অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমকে চাপমুক্ত করতে এবং তিনি ব্যাটিংয়ে যাতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারেন সেজন্যই তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। টেস্টে সাকিবের সহঅধিনায়ক করা হয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। এর ফলে টি২০ ও টেস্ট এ দুই ফরমেটেই এখন বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব। শুধু ওয়ানডের নেতৃত্ব থাকছে মাশরাফি বিন মর্তুজার কাঁধে। তবে এই মুহূর্তে প্রধান কোচের পদ শূন্য হলেও সে বিষয়ে রবিবার চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে বিসিবির কাছে সাক্ষাতকার দেয়া রিচার্ড পাইবাস ও ফিল সিমন্সের পাশাপাশি আরও কয়েকজনকে নিয়ে একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাপন। ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তিন ফরমেটে অধিনায়ক হন মুশফিকুর রহীম। তবে ২০১৪ সালে দলের টানা বাজে নৈপুণ্য এবং ব্যাট হাতে ও উইকেটরক্ষক হিসেবে চরম ব্যর্থ হওয়ার কারণে সমালোচনায় পড়েন তিনি। এরপর চাপ কমাতে ওয়ানডে ও টি২০ অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে শুধু টেস্ট অধিনায়ক রাখা হয়েছিল। তবে এরপরও নিজেকে ফিরে পেতে বেশ সংগ্রাম করে যাচ্ছেন মুশফিক। তবে দলীয় নৈপুণ্যে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল দল। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়েও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ওই সময় অবশ্য মাঠে সহকারী অধিনায়ক তামিমকেই নেতৃত্বের ভূমিকায় বেশ তৎপর দেখা গিয়েছিল। সার্বিক দিক দিয়ে বেশ কোণঠাসাই হয়ে পড়েছিলেন মুশফিক। আর সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তার সঙ্গে কোচ চান্দ্রিকা হাতুরাসিংহেরও মতানৈক্য দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত তাকে সরিয়েই দেয়া হলো। নেতৃত্বে আনা হলো সাকিবকে। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘আমরা ৪/৫ বছরের জন্য পরিকল্পনা করছি। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সাকিবকে নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। আর মুশফিক আমাদের খুব ভাল ব্যাটসম্যান। আমরা চাইছি সে যেন ব্যাটিংয়ে অনেক বেশি মনোযোগী হতে পারে। সে কারণে চাপমুক্ত করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ মুশফিক আপাতত অবস্থান করছেন থাইল্যান্ডে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন পাপন। মুশফিকের সঙ্গে টেস্টে সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তামিমকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার জায়গায় এখন সাকিবের সহকারী হিসেবে থাকবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক গত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশ দলকে ৩৪ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ সময়ে বাংলাদেশ দল ৭ জয় তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে ঐতিহাসিক তিনটি জয় আছে ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ১৮ টেস্টে হার দেখেছেন তিনি এবং ৯ টেস্টে ড্র করে বাংলাদেশ দল তার অধীনে। সেদিক বিবেচনায় মুশফিকের অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য একেবারে খারাপও নয়। এরপরও তাকে সরিয়ে দেয়া হলো কেন? এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘আরও কিছু বিষয় আছে, সবকিছু তো আর বলা যাবে না।’ সেই কারণটা হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলের একেবারেই বাজে নৈপুণ্য এবং কোচের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ও দীর্ঘদিন ব্যাটিং ও উইকেটকিপিংয়ে টানা ব্যর্থতা। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের অধিনায়ক হতে যাচ্ছেন সাকিব। সেটা প্রায় সত্য হওয়ার পথে। টি২০ ক্রিকেট থেকে মাশরাফি অবসর নেয়ার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই টি২০ নেতৃত্বে ফিরে আসেন সাকিব। এবার ফিরলেন টেস্টেরও নেতৃত্বে। বাকি থাকল শুধু ওয়ানডে নেতৃত্ব। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘হতেও পারেন (তিন ফরমেটের অধিনায়ক)। তবে এখন মাশরাফি আছে ওয়ানডের অধিনায়ক। সেখানে হাত দেয়ার কোন সুযোগ নেই।’ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে শুরু করে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে তিন ফরমেটেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। সে সময় তিনি ৯ টেস্টে দলকে ১ জয় এনে দিলেও ৮টি পরাজয় দেখেছিলেন। সে সময় ৪ টি২০ ম্যাচেও নেতৃত্ব দিয়ে একটিতেও জয় আনতে পারেননি। তবে ওয়ানডে নেতৃত্বে সাফল্যটা ভালই ছিল সাকিবের। ৫০ ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করে তিনি ২৩ জয় আনার পাশাপাশি হার দেখেছিলেন ২৬ ম্যাচে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলের অপরিহার্য এ ক্রিকেটার বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এমনকি ৬ মাসের জন্যই ছুটি চেয়েছিলেন তিনি। তাকেই টেস্ট দলের নেতৃত্ব দেয়াটাকে তাই অনেকে ভিন্ন চোখেও দেখছেন। আর হাতুরাসিংহের অধীনে টেস্টে উপেক্ষিত হতে শুরু করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কায় সাইডবেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিল তাকে। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরের সিরিজে দুই ম্যাচেই ছিলেন না তিনি দলে। সেই মাহমুদুল্লাহ এবার সহঅধিনায়ক হয়েছেন। আর এ দায়িত্ব পাওয়া নিশ্চিত করেছে তিনি এখন টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবেই থাকবেন। যদিও এখন হাতুরাসিংহে অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তার পদত্যাগের পর এখন নতুন কোচের সন্ধানে আছে বিসিবি। নতুন অধ্যায় শুরু হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তার শুরুটা হয়ে গেল নেতৃত্ব বদলের মাধ্যমে। গত বুধবার রিচার্ড পাইবাস এবং রবিবার ফিল সিমন্স কোচ হওয়ার জন্য সাক্ষাতকার দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আরও দু’জন কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। সবার সঙ্গে সাক্ষাতকার পর্ব শেষে সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনার পরই নতুন কোচ নিয়োগ দেবে বিসিবি। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘আরও দু’জন জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছেন। তাদের কোচিং লেভেল ও ক্যারিয়ার বেশ ভাল। সিমন্স আমাদের কাছে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। আরও অনেকের সঙ্গেই আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। তারা যোগদান করতে পারবেন, শর্তগুলো কি কি এবং চুক্তির বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার পর আমরা একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছি। সেই তালিকা অনুসারে বাকিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’ তবে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজের সময় কোচ নিয়োগ করা না গেলে সহকারী কোচ যারা আছেন তাদের দিয়েই চালিয়ে নেয়া হবে। তবে এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে একজনকে বসানো হবে বলেই জানালেন পাপন।
×