ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে চামড়া সন্ত্রাস রোধে হার্ড লাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৮ আগস্ট ২০১৭

 ঈদে চামড়া সন্ত্রাস রোধে হার্ড লাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা সামনে রেখে চামড়া সন্ত্রাস রোধে হার্ড লাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পশুর চামড়া নিয়ে যাতে সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য চামড়া সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। পশুর হাটকে ঘিরে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। পশুর হাটগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, জাল টাকা চিহ্নিতকরণ মেশিন সরবরাহসহ পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পশুবাহী ট্রাক ও টলারে টানাহ্যাঁচড়া করার খবর পেলেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পশুর আমদানি বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতাও। হাইওয়েতে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি হওয়ার অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। নদীপথে পশুবাহী ট্রলার ও নৌকায় পশুর বেপারিদের টানাহ্যাঁচড়া করার অভিযোগ এসেছে। দেশের বিভিন্নস্থানে গরু চুরি, ডাকাতি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যে কোন মূল্যে কোরবানি ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের প্রতি কঠোর বার্তা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)সূত্র জানায়, এবার রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরশেনের অধীনে বসানো হচ্ছে ২৩টি পশুর হাট। কোরবানি ঈদের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। নানা রঙে সাজানো হয়েছে ব্যানার, গেট। ক্রেতা-ব্যবসায়ীকে আকৃষ্ট করতে ইতোমধ্যে মাইকিং, পোস্টারে প্রচার শুরু করেছেন হাটের ইজারাদাররা। ঈদ-উল-আযহা সামনে রেখে রাজধানীর ২৩ স্থানে বসছে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে রয়েছে ২২টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী হাট। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৩টি হাট বসবে। একমাত্র স্থায়ী হাট গাবতলীতেও কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পশুর হাট ঘিরে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে চামড়া পাচার রোধেও। পশুর হাটগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, জাল টাকা চিহ্নিতকরণ মেশিন সরবরাহসহ সমগ্র হাটে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পশুর হাটে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত লাইটিং এবং একাধিক জেনারেটর স্থাপন করার জন্য ইজারাদারদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর থেকে রাজধানীর সকল ডিসি ও থানার ওসিদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রাজধানীর পশুর হাটে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি হাটের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ডিএমপি। কোরবানি পশুর হাটের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক সমন্বয় সভায় এই কথা বলেছেন ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপি সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীদের কোরবানির ঈদে প্রধান টার্গেটে থাকে পশুর হাট ও ব্যবসায়ীরা। পশুর হাট ও চামড়া ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজিসহ হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটায় তারা। এছাড়াও অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা রোধে এসব চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পশুর হাটগুলোতে গরু-ছাগল-মহিষের পাইকারি বিক্রি শুরু হয়েছে। এবারের পশুর হাটগুলো রাজধানীর জনবহুল এলাকা থেকে একটু দূরে দেয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে পশুর হাটের জন্য যানজটের সৃষ্টি না হয়। পশুর হাটগুলোতে সুস্থ ব্যবস্থাপনা রাখতে ইজারাদারদের ও যানজটের যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ডিএমপির সদর দফতর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি। ডিএমপি সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদে রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে নিয়মিত এবং প্রয়োজনে ব্লক রেড চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা তৈরি করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হবে। পশু ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও তাদের নগদ অর্থ পরিবহনে নিরাপত্তা দেয়া হবে। একই সঙ্গে জাল টাকা তৈরি চক্রের হোতাদের ধরতেও সাদা পোশাকে মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি পশুর হাটে ইজারাদাররা জাল টাকার মেশিন সরবরাহ করবে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, কোরবানির পশুর হাটকে ঘিরে ছিনতাই, মারামারি ও হত্যাকা-সহ গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা। একই সঙ্গে অজ্ঞান ও মলম পার্টি অপরাধী চক্র তৎপরতা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ভুয়া সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি। কোরবানির পশুর হাটে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান ও মলমপার্টির অপতৎপরতাসহ অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পশুর হাট ও ব্যবাসীয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পশুর হাটগুলোতে জনসচেতনতায় অডিও এবং ভিডিওচিত্রে প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×