ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তফা জব্বর

বাঙালীর জাতিসত্তা ॥ একুশ শতক

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২০ আগস্ট ২০১৭

বাঙালীর জাতিসত্তা  ॥ একুশ শতক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার বছর প্রায় পাঁচ দশক পরও একটি বিতর্ক বাংলার আকাশে বাতাসে ঘোরপাক খায়। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ প্রশ্ন তোলেন বাঙালীর জাতিসত্তা কি? জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতিসত্তাকে এমন বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে যে- আমাদের নতুন প্রজন্মের সন্তানরা, যারা বাঙালীর জাতিসত্তা গড়ে ওঠার লড়াইতে যুক্ত থাকেনি এবং পরবর্তীকালে তথাকথিত এই জাতীয়তাবাদীদের অপপ্রচারে বাংলাদেশে পাকিস্তানী মতবাদের ভোক্তা হয়েছে তাদের জন্য সত্য ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ হচ্ছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দেশ। প্রতি পদে পদে প্রশ্ন তোলা হয় দেশটির জাতিসত্তা, নাগরিকত্ব বা মূলনীতি নিয়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চারনীতি এখনও বিপন্ন। সমাজতন্ত্র এখন উচ্চারিত হয় না। জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র এখনও বিতর্কের বিষয়। বিতর্কগুলো তৈরিও করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। গণতন্ত্রের কথাই বলা যাক, মনে করা হয় ১৯৯১-এ স্বৈরতন্ত্রী এরশাদের পতনের পর এই গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ আবার ’৭৫-এ জিয়া নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন বলেও দাবি করেন। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে বাঙালীদের একটি স্বাধীন সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে। ’৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত এটি একটি পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ ছিল। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর এতে সামরিক শাসন আসে। ’৯১ সালে সেই শাসকদের পতন হয়। আমাদের উচ্চ আদালত সেই ১৬ বছরকে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেই থেকে এখনও আমরা সঙ্কটের মাঝেও গণতন্ত্রেই আছি। এতে বিতর্কের কিছু নেই। তবে আমাদের বাকি মূলনীতিগুলোকে বিতর্কিত করা হয়েছে চরমভাবে। সমাজতন্ত্র সংবিধান থেকে বিদায় করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদ থাকলেও এর ভিত্তি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিতর্ক। অন্যদিকে বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম যুক্ত করে আমাদের মূল সংবিধানকেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সকলকেই উপলব্ধি করতে হবে যে, বাংলাদেশ বাঙালীদের একমাত্র স্বাধীন আবাসভূমি, যার একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ হচ্ছে এই রাষ্ট্রের মূলনীতি। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালীদের একমাত্র স্বপ্নের ঠিকানা এই বাংলাদেশ। এরা সকলেই এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক নয়- কিন্তু তারা এই স্বপ্ন দেখে যে বাংলা ও বাঙালীর জাতিসত্তাকে উজ্জীবিত, প্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বসেরা করার জন্যই এই রাষ্ট্রের জন্ম। এটি আর দশটি সাধারণ দেশের মতো নয়। এর পেছনে স্বপ্ন আছে বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের। বাঙালী সংস্কৃতিপ্রেমীর। এই দেশটির ভিত হচ্ছে বিশ্বের চতুর্থ মাতৃভাষার, যার স্বীকৃতি আজ বিশ্বজুড়ে। ১৯৭২ সালে প্রণীত এই রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান সম্পূর্ণরূপেই সেই স্বপ্নপূরণের জন্য প্রণীত হয়েছিল একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংবিধান হিসেবে। এর নীতি ও আদর্শে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম গণতান্ত্রিক দেশের সকল দিকই সন্নিবেশিত হয়েছিল। তার সঙ্গে বাঙালীর ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টি তথা জীবনধারাকে প্রথমবারের মতো পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা এই রাষ্ট্রের- এই সংবিধানের একটি বিশাল সম্পদ ছিল। ১৯৭২ সালের সেই সংবিধানকে তাই দলমত নির্বিশেষে একটি সেরা সংবিধান বলে এখনও মনে করা হয়। তবে মনুষ্যসৃষ্ট সেরা জিনিসেও ভুল থাকতে পারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে পরিবর্তনের প্রয়োজনও হতে পারে। আমাদের ’৭২-এর সংবিধান এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। সেই অর্থে আমাদের সংবিধানেও পরিবর্তন হয়েছে। প্রয়োজন এই পরিবর্তনের নিয়ামক হয়েছে কখনও কখনও। তবে সকল পরিবর্তন সবসময়েই প্রয়োজনে হয়নি। এই সংবিধান প্রয়োজন ছাড়াও হীন ব্যক্তি- গোষ্ঠীস্বার্থ এবং সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্যও সংশোধিত হয়েছে। আমি বিশেষ করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তনের বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। যে সংবিধানে সকল ধর্মের মানুষের স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার বিধান রাখা হয়েছে তাতে রাষ্ট্রধর্ম নামক নতুন কিছু থাকার প্রয়োজন ছিল না। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের কোন ধর্ম হয় না। ধর্ম হয় রাষ্ট্রের নাগরিকদের। কিন্তু এরশাদ সে কাজটি করেছেন। বন্দুকের নলের ডগায় আনীত এই সংশোধনী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র এবং গণতন্ত্র হত্যার কলঙ্কময় দৃষ্টান্ত। এর ফলে আজ অফিসিয়ালি বাংলাদেশ একটি ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত হচ্ছে, বাস্তবে যা একেবারেই সঠিক নয়। এই দেশটি অবশ্যই একটি মুসলিম প্রধান দেশ। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এদেশের মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবেই আছে। তারা ধর্মপ্রাণও। দেশটির জন্মের সময়ও তারা মুসলমান এবং ধর্মপ্রাণ ছিল। কিন্তু মুসলমানত্ব এই দেশের মানুষের জাতিসত্তা বা রাষ্ট্র সত্তা যে নয়, সেটি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী স্বৈরাচারী এরশাদ বুঝতে পারেনি। তার পক্ষে এটি বোঝাও সম্ভব নয়। স্বৈরাচারী এরশাদের পক্ষে আর যাই হোক বাংলাদেশের জন্ম নেবার ভিত্তি বোঝার কথা নয়। যদি মুসলমান পরিচয়েই আমাদের রাষ্ট্রসত্তা বা জাতিসত্তার পরিচয় দিতে হয় তবে পাকিস্তান তো ইসলামী রিপাবলিক ছিলÑ সেটি ভাঙার প্রয়োজন হলো কেন? এদেশের ডানপন্থী রাজাকাররা যুক্তি দেখায় যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাঙা হয়েছে শোষণ বা নির্যাতনের জন্য। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন ছাত্রই এটি মনে করবে না যে, একটি সুুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তা বা জাতিসত্তার পরিচয় ছাড়াই শুধু শোষণ বঞ্চনার অজুহাতে রাগ করে এদেশের মানুষ পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ করেছে। পাকিস্তানেও আমরা পূর্ব বাংলার মুসলমানরা ছিলাম। এমনকি আমাদেরই পূর্বপুরুষরা পাকিস্তানী সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদে বিভ্রান্ত হয়ে পাকিস্তানের জন্য লড়াইও করেছে। তবে এখন বোঝা যাচ্ছে যে, শুধু সেই সময়েই নয়, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করার প্রচেষ্টা জিন্নাহই শেষ করে যাননি। জিন্নার পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার পর বাংলাদেশের শাসকদের একটি চক্র রাজাকার পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মকে ক্ষমতায় যাবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কাজটি শুরু করে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং জিয়ার মতো এরশাদও ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। বাংলাদেশে যে মৌলবাদের উত্থান চোখে পড়ছে তা এদেশের উগ্র মৌলবাদীদের জন্য যতটা, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি জিয়া-এরশাদের আনুকূল্যের জন্য। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে বাঙালীরা অনেক বেশি দূরদর্শী। আর সেজন্যই বাঙালীদের নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের মাঝে যে ফাঁকিটা আছে এবং ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা যে শেষপর্যন্ত মুখথুবড়ে পড়বে তা জানতেন। ফলে শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাবে ও সোহরাওয়ার্দীর বৃহৎ বাংলার প্রস্তাবে বরং একুশ শতকের রাষ্ট্র চিন্তাই প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু জিন্নার ষড়যন্ত্র এবং এই অঞ্চলের কিছু মানুষের গোঁড়ামির জন্যই পাকিস্তান তৈরি হয়। আর সেজন্যই পাকিস্তান সৃষ্টির কিছুদিনের মাঝেই আমরা টের পাই যে, পাকিস্তানের কোন জাতিসত্তা নেই। একটি ভিত্তিহীন রাষ্ট্রের কাঠামো থেকে যতো দ্রুত বেরিয়ে পড়া যায় তার জন্যই শুরু হয়েছিল স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন। কিন্তু কাজটি সহজ হয়নি। রক্ত দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা কিনতে হয়েছে। আর আমরা তাই গর্বের সঙ্গেই বলি যে, সাম্প্রদায়িকতা পাকিস্তান ভেঙে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করেছি, কারণ বাংলার মানুষ পাকিস্তানীদের মতো সাম্প্রদায়িক নয়। এদেশে মুসলমানরা হাজার বছর ধরে ভিন্নধর্মের মানুষের সঙ্গে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে এবং হিন্দুকুশ অঞ্চলের অববাহিকায় গড়ে ওঠা সংস্কৃতি শেয়ার করছে। এদেশে এমন উন্মাদ হয়তো আছে যারা ধর্মের নিরিখেই সবকিছুকেই দেখে। একাত্তরে এরাই বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু এদেশের মানুষ কোন কালেই সাম্প্রদায়িক ছিল না। সে জন্যই এই অঞ্চলে বৈষ্ণব মতবাদ, সুফিবাদ, আধ্যাতিকতা ইত্যাদি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মচর্চা করে কিন্তু সে তার নিজস্ব কোন কিছুই বিসর্জন দিয়ে শুধু ধর্ম দিয়ে তার জীবনপ্রবাহকে মুড়ে দেয়নি। বরং এদেশের মানুষ তার মাতৃভাষাকে ভালবাসে। তার আকাশ-বাতাস-ফুল-ফল-জীবনযাত্রা সবকিছুকেই ভালবাসে। পাকিস্তানীরা অন্ধের মতো তার ভাষার লিপি পর্যন্ত ধর্মের নামে পাল্টেছে। কিন্তু এদেশের মানুষ মুসলমান হবার পরেও মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থের বর্ণমালা আরবী হরফে বাংলা ভাষা লেখার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এই জাতির সংস্কৃতি এই অঞ্চলের সকলের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে। আজও যদি বাংলার সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য খুঁটিয়ে দেখা হয় তবে বোঝা যাবে যে আমরা আমাদের শিকড় থেকে উপড়ে পড়ে যাইনি। ফলে এখানে যখন কেউ সৌদি কাপড় পড়ে রাস্তা দিয়ে ‘আহলান ওয়া সাহলান’ বলে গর্ব করার চেষ্টা করে তখন শিশুরা মুখ টিপে হাসে এবং আসসালামু আলাইকুম বলে জবাব দেয়। তাকে যে তার নিজের পোশাকে এবং মাতৃভাষাতেই অধিকতর শোভন দেখায় এবং এমনকি ইসলাম ধর্মেও যে জাতিসত্তা বিসর্জন দেবার কোন বিধান নেই, সেটি বাঙালী জাতি জানে। কার্যত আমরা উদার গণতন্ত্রী মুসলিম দেশ নই- পুরো গণতন্ত্রী দেশ। কিন্তু আমাদের পাকিস্তানী লিগ্যাসি শেষ হচ্ছে না। জন্মের পর থেকেই পাকিস্তান যে সামরিক স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে আসছে, সরাসরি সামরিক ও পরোক্ষ স্বৈরাচারী শাসনে যার ধারা অব্যাহত ছিল, আমরা সেখান থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে পেরেছি। অন্তত ৯১ সালের পর এদেশে সামরিক লেবাসে স্বৈরশাসন নেই। তবে আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তি বা পরমতসহিষ্ণুতা তেমন প্রবল নয়। বিশেষ করে পাকিস্তান ভাঙার আন্দোলনে যারা পরাজিত হয়েছিল তারা ধর্ম, উগ্রবাদ ও ডানপন্থাকে অবলম্বন করে যে জোট বেঁধেছে তাতে কেবল যে অগণতান্ত্রিক মনোভাবেরই প্রকাশ পেয়েছে তা নয়, এদের মাঝে অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণ ও ভোগদখলের মানসিকতার ব্যাপক প্রকাশ ঘটেছে। এটি দু:খজনক যে, এরশাদের সেই কৃতকর্মের দায় এখন পুরো জাতিকে বহন করতে হচ্ছে। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে যুক্ত করায় বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাবার সময়ও এখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখতে হয়েছে। জিয়া সংবিধানে বিসমিল্লাহ প্রবর্তন করায় তার ধারবাহিকতাও এখন সংবিধানে বহাল রাখতে হচ্ছে। ফলে আমরা আমাদের জন্মের অঙ্গীকারে ফিরতে পারছি না। ২০০১ সালে বেগম জিয়ার চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার যে চাপ পুরো দেশে পড়েছিলো তার ফলে বাড়ি-ঘর, জমি-জমা, হাট-বাজার, খাল-বিল দখল করাতেই শেষ হয়নি- এদের হাতে জন্ম নেয় জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও পাকিস্তানপ্রীতি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনও আমরা আরও চরম সন্ত্রাসের প্রকাশ দেখি। আওয়ামী লীগ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সূচনা করে তখন থেকেই পুরো দেশজুড়ে সহিংসতা ও জঙ্গীবাদের চরম প্রকাশ ঘটতে থাকে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পুরো বছরটি জুড়ে আমরা বিএনপি-জামায়াত-শিবির জোটের যেসব ঘৃণ্য অপকর্ম দেখেছি তার সঙ্গে কেবল ১৯৭১ সালে তাদেরই করা চরম হত্যাযজ্ঞেরই তুলনা চলে। আমরা এখন লক্ষ্য করছি যে, আমাদের যুদ্ধাপরাধীর বিচারে পাকিস্তানের গায়ে জ্বালা ধরে। আমরা আবারও দেখেছি যে, বাংলাদেশকে আল কায়েদা হুমকি দেয়। আমাদের উপলব্ধি করার সময় হয়েছে যে, এর সবকিছুই একাত্তরের সূত্রে গাথা। আমরা একাত্তরে যাদেরকে পরাজিত করেছি তারা এখনও সেই পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি। ওরা দেশের হোক বা দেশের বাইরের হোক বাঙালী জাতিসত্তাকে মেনে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদেরকেও বুঝতে হবে যে দেশী-বিদেশী এসব শক্তি বাঙালীদের এই রাষ্ট্রটির অস্তিত্বকেই মানতে পারছে না। ধর্মকে তারা এই রাষ্ট্রটিকে ধ্বংস করার জন্যই ব্যবহার করছে। এই রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের ভিতটিকে সমূলে উপড়ে ফেলাটাই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু এদের বোঝা উচিত যে, বাঙালীর ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির ভিত এত দুর্বল নয় যে, এরশাদ-জিয়া-জামায়াত-শিবির, পাকিস্তান ও আল কায়দার মিলিত শক্তির কাছেও এই জাতি হেরে যাবে। আমরা কখনও হারিনি-কখনও হারবো না। ঢাকা ॥ ১৮ আগস্ট, ১৭ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এর জনক [email protected],
×